আজ মহালয়া। পিতৃপক্ষের শেষ দিন। আগামীলকাল প্রথমা, শুরু হবে আদ্যাশক্তি মহামায়া আরাধনার। এই নবরাত্রি কেবল বাঙালির নয়। সারা ভারত জুড়ে ৯ দিন নয় রূপে পুজিত হন দেবী। কী সেই সব রূপের মাহাত্ম্য?
নবরাত্রির সূচনা
পর্বতরাজ হিমালয়ের কন্যা শৈলপুত্রী। তাঁকে দুর্গার প্রথম রূপ ধরা হয়। মহাদেবের পত্নী হিসেবেও তিনি পূজিতা। শৈলপুত্রী ভক্তদের জীবনে স্থিতিশীলতা, ধৈর্য ও শক্তি প্রদান করেন। জীবনের সমস্ত দুঃখ-কষ্ট দূর করার জন্য তাঁর আরাধনা করা হয়।
প্রথমা – দেবী শৈলপুত্রী
দেবী ব্রহ্মচারিণী তপস্যার প্রতীক। ভক্তদের মধ্যে জ্ঞান, বৈরাগ্য ও সাহস প্রদান করেন। এই রূপে দেবীর হাতে থাকে জপমালা ও কমণ্ডলু। বিশ্বাস, সাধনা, অধ্যবসায় ও আত্মসংযম শক্তিশালী হয়।
দ্বিতীয়া – দেবী ব্রহ্মচারিণী
তৃতীয় দিনে পূজিত হন চন্দ্রঘন্টা। তাঁর কপালে অর্ধচন্দ্র থাকে, তাই তিনি চন্দ্রঘন্টা নামে পরিচিত। তিনি যুদ্ধপ্রিয় ও রণংদেহী রূপে ভক্তদের ভয় দূর করেন। চন্দ্রঘন্টার পূজায় সাহস, আত্মবিশ্বাস ও জীবনের প্রতিটি লড়াই জেতার শক্তি লাভ হয়।
তৃতীয়া – মা চন্দ্রঘন্টা
চতুর্থ দিনে পূজিত হন দেবী কুষমুণ্ডা। এই দেবী অষ্টভুজা এবং অষ্ট সিদ্ধিদাত্রী, সিংহের উপর উপবিষ্টা। তিনি মহাবিশ্বের স্রষ্ট্রী এবং সূর্যলোককে আলো দিয়েছেন। তাঁর হাসিতে সৃষ্টির সূচনা হয়েছিল। কুষমুণ্ডার পুজোয় ভক্তরা আরোগ্য, প্রাণশক্তি ও সমৃদ্ধি অর্জন করেন।
চতুর্থী – দেবী কুষমুণ্ডা
পঞ্চম দিনে পূজিত হন স্কন্দমাতা, দেবসেনাপতি কার্তিকেয়র মা তিনি। তিনি কোলে পুত্র স্কন্দকে ধারণ করেন এবং ভক্তদের মাতৃস্নেহ প্রদান করেন। পরিবারে সুখ-শান্তি, ঐক্য ও সন্তানের মঙ্গল কামনায় তাঁর আরাধনা করা হয়।
পঞ্চমী – দেবী স্কন্দমাতা
ষষ্ঠ দিনে পূজিত হন কাত্যায়নী। ঋষি কাত্যায়নের কন্যা হিসেবে জন্ম নেওয়া এই রূপকে মহাশক্তির প্রতীক বলা হয়। অজেয় শক্তি ও সাহস তাঁর মধ্যে বিরাজমান। বিবাহ কামনায় ও দাম্পত্য সুখের জন্য বিশেষভাবে তাঁর পুজো করা হয়।
ষষ্ঠী – দেবী কাত্যায়নী
সপ্তম দিনে পূজিত হন কালরাত্রি। তিনি দেবীর সবচেয়ে ভয়ংকর রূপ, কিন্তু ভক্তদের জন্য অতি কল্যাণময়ী। তাঁর পুজোয় অশুভ শক্তি, ভয়, কালো জাদু ও সমস্ত নেতিবাচক প্রভাব দূর হয়। কালরাত্রি সাহস ও নির্ভীকতা দান করেন।
সপ্তমী – দেবী কালরাত্রি
অষ্টম দিনে পূজিত হন মহাগৌরী। তিনি শ্বেতবর্ণা, নির্মলতা, সৌন্দর্য ও শান্তির প্রতীক। মহাগৌরীর পূজায় জীবনের পাপক্ষয় হয় এবং ভক্তরা মুক্তি, শান্তি ও পবিত্রতা অর্জন করেন। তিনি জীবনে সুখ-সমৃদ্ধি ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেন।
অষ্টমী – মা মহাগৌরী
নবম দিনে পূজিত হন দেবী সিদ্ধিদাত্রী। তিনি সমস্ত সিদ্ধির দাত্রী। ভক্তরা তাঁর আরাধনায় আধ্যাত্মিক জ্ঞান, শক্তি ও সিদ্ধি লাভ করেন। দেবীকে শিবকেও অর্ধনারীশ্বর রূপ প্রদানকারিণী বলে বর্ণনা করা হয়।