মদের দোকানে লাইন নিয়ে ফেসবুক-বিপ্লব, এই আচরণের ব্যাখ্যা কী?

স্বরলিপি ভট্টাচার্য |

May 22, 2021 | 11:57 AM

মদ এসেনশিয়াল কমোডিটি নয়। তবুও লকডাউন ঘোষণা হওয়ার পর সবথেকে বেশি লাইন পড়েছে মদের দোকানে। যা নিয়ে ফেসবুকে বিপ্লব হয়ে গেল। এই ফেসবুকীয় আচরণের ব্যখ্যা কী?

মদের দোকানে লাইন নিয়ে ফেসবুক-বিপ্লব, এই আচরণের ব্যাখ্যা কী?

Follow Us

মদ এসেনশিয়াল কমোডিটি নয়। তবুও লকডাউন ঘোষণা হওয়ার পর সবথেকে বেশি লাইন পড়েছে মদের দোকানে। যা নিয়ে ফেসবুকে বিপ্লব হয়ে গেল। এই ফেসবুকীয় আচরণের ব্যখ্যা কী? যাঁরা বিপ্লব করলেন, তাঁদের কেউ-কেউ অথবা একাংশ কি কখনও মদের দোকানে লাইন দেননি? নাকি যাঁরা দাঁড়ালেন বলে সোশ্য়াল মিডিয়ায় ‘ভিক্টিম’ হলেন, তাঁদের সেই আর্থিক সামর্থ্য নেই বলে এই আচরণ? সোশ্যাল মিডিয়ার এহেন আচরণের ক্ষেত্রে কতটা দায়িত্বশীল হওয়া উচিত? ব্যাখ্যা করলেন মনঃসমাজকর্মী মোহিত রণদীপ

মদ্যপান শুধু পাশ্চাত্যের নয়, প্রাচ্যের দেশগুলোতেও বহু হাজার বছরের প্রাচীন অভ্যাস। একসময় আমাদের দেশেও অতিথি আপ্যায়নে সোমরস বা মদিরার ব্যবহার বহুল প্রচলিত ছিল। ধনী-গরীব, উচ্চ শিক্ষিত-নিরক্ষর, শিল্পী-সাহিত্যিক, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে বহু মানুষই মদ্যপানে আসক্ত হয়েছেন। যাঁরা মদ্যপান করেন, তাঁদের মধ্যে যেমন পরিমিত মদ্যপায়ীর সংখ্যা বিপুল, তেমনি অ্যালকোহল-নির্ভরতার শিকার মানুষের সংখ্যাও খুব কম নয়!

মদ্যপানে নির্ভরতার নানা ক্ষতিকর পরিণতির কথা আমরা জানি। শারীরিক স্বাস্থ্য, মানসিক স্বাস্থ্য, পারিবারিক জীবন, জীবিকা, সম্পর্ক, সামাজিক যাপন…সব কিছুর ওপরেই মাদকাসক্তির ক্ষতিকর বা নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এই সব জানা সত্ত্বেও বহু মানুষ আসক্ত হয়ে পড়েন মদ্যপানে। যাঁরা আসক্ত হন, তাঁরা মদ না পেলে অনেক সময় তীব্র শারীরিক অসুবিধার মধ্যে পড়েন। কেউ কেউ withdrawal symptoms-এর কারণে delirium-এর শিকারও হতে পারেন। সেই পরিস্থিতিতে মদই তাঁর জীবনরক্ষায় বড় ভূমিকা নিতে পারে!

সুতরাং মদের দোকানে এই লকডাউন-এর সময়ে এত ভিড় খুব অস্বাভাবিক আমার মনে হয় না। আপাতভাবে আমাদের সমাজের রক্ষণশীল মন মদ্যপানকে ট্যাবু হিসাবে দেখতে অভ্যস্ত, তাঁদের কাছে মদ্যপায়ী মানুষ হাসির খোরাক, মদ তাঁদের চোখে অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্য নয়। কিন্তু এই সমাজেরই বহু পরিমিত মদ্যপায়ী কিংবা অ্যালকোহল-নির্ভরতার শিকার মানুষের কাছে অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্যই।

আমরা যারা মদ্যপানে অভ্যস্ত নই, তাঁরা আর একটু অন্যদের অনুভূতির প্রতি সংবেদনশীল হতে পারলে সোশ্যাল-মিডিয়াতে এভাবে মদের দোকানে ভিড় নিয়ে হয়তো খিল্লি করতে পারতাম না! ফলে লকডাউনে মদের দোকানের সামনে দীর্ঘ লাইন দেখে সোশ্যাল মিডিয়ায় যেভাবে রিঅ্যাক্ট করছেন মানুষ, সেটা ওভার রিঅ্যাকশন। অন্তত সচেতন রিঅ্যাকশন নয়, এটা আমার মনে হয়েছে।

অলঙ্করণ: অভীক দেবনাথ

আরও পড়ুন, ইউজ় থেকে অ্যাবিউজ়ের দিকে যেতে শুরু করলে লাইন টানতে হবে: মনোবিদ শতভিষা চট্টোপাধ্যায়

Next Article