অভিনয়ের সবকটি মাধ্যমে এক সঙ্গে কাজ করেছেন তাঁরা। একসঙ্গে দুটো মেগা ধারাবহিকে কাজ করছিলেন। একই ঘর ভাগ করতেন। প্রিয় ভাইকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করলেন দাদা দুলাল লাহিড়ী।
‘মোহর’ আর ‘খড়কুড়ো’-এই দুটো মেগা ধারাবাহিকে কাজ করছিলাম। সকলের অভিষেক আমার মিঠু। প্রায় ৪০-৪৫ বছর ধরে চিনি। সিনেমা, থিয়েটার, যাত্রা, তারপর মেগা ধারাবহিক-অর্থাৎ অভিনয়ের সব কটি মাধ্যমে একসঙ্গে কাজ করেছি। ওর বাবা প্রশান্ত চট্টোপাধ্যায়ও খুব ভাল অভিনয় করতেন। বাবার কাছেই মিঠুর হাতেখড়ি অভিনয়ের।
আমার থেকে কত ছোট। এত তাড়াতাড়ি তো চলে যাওয়ার কথা ছিল না। সিনেমা ছাড়ার পর অনেক দিন কাজ করেনি। তারপর ফিরে এল মেগা ধারাবাহিক দিয়ে। সেখানেও অনেক কাজ একসঙ্গে করি। আজ ছোট ভাইয়ের মৃত্যু নিয়ে বলতে হচ্ছে। এটা আমার জন্য কতটা কষ্টকর বলে বোঝানো যাবে না। সৌমিত্রদা (চট্টোপাধ্যায়), মৃণালদা (মুখোপাধ্যায়), নিমুদা (ভৌমিক) মানে বড়রা প্রায় সবাই চলে গেছেন, ছোট ভাইও চলে গেল। এই বিষয়ে একটা কথা অবশ্যই বলতেই হবে, নিজের উপর অত্যাচার করে চলে গেল মিঠু।
কত কথা মনে পড়ছে। স্বপন সাহা, অঞ্জন চৌধুরী-সেই সময় প্রায় সব পরিচালকের ছবিতে আমরা কাজ করেছি। কত ছবিতে আমি খলচরিত্র করেছি, আর ও নায়ক হত, ফলে মারও খেয়েছি। কত স্মৃতি। একসঙ্গে যাত্রা করতে গিয়ে দেখেছি, কত মহিলা ভক্ত ওর।
‘মোহর’ মেগা ধারাবাহিকের তরফ থেকে পিকনিক গিয়েছিলাম গত বছর। ও খুব ভাল গান গাইত। কত গান গাইল। আমাকেও গাইতে বলল। খুব মজার ছেলে ছিল মিঠু। ভাল মানুষ বলতে যা বোঝায় একদম তাই। কোনও দিন কারও সমালোচনা করত না। উল্টে বলত, ‘কী হবে এই অন্যের সমালোচনা করে’।
খেতে ভালবাসত। আমরা এক ঘরে থাকতাম। আমি বাইরের খাবার খুব একটা খাই না। ফ্লোরেরও নয়। বাড়ি থেকে খাবার আসে। সীমিত খাই। আমার খাবার দেখে প্রায়ই মজা করে বলত, ‘কী করে এত কম খেয়ে এমন ফিগার মেইনটেন করো!’ আবার একদিন এসে বলল, ‘দাদা একটা বড় ইলিশ পেলাম, কিনে নিলাম’। বললাম ‘খাবি কতদিন ধরে’। ‘কেন, ফ্রিজে রেখে খাব’।
ইন্ডাস্ট্রি থেকে যতটা পাওয়ার ছিল পায়নি। আক্ষেপ ছিল। নেশার মধ্যে সেই দুঃখ ভুলে থাকতে চেত। কতবার বারণ করেছি, কিন্তু শুনত না। নিজের উপর অত্যাচার করে, অভিমান নিয়ে চলে গেল সবার মিঠু। বড়দের সম্মান, ছোটদের ভালবাসত-এটা সবসময় বজায় রোখেছে।
একটা আক্ষেপ রয়ে যাবে সারাজীবন। লাস্ট যেদিন ফ্লোরে আসে, ওকে আমি ডাকতে গিয়ে দেখি শুয়ে আছে। কাঁপছে। আমি বললাম, এভাবে সারাদিন শুয়ে থাকিস না। বলল, ‘উঠতে পারব না দাদা’। বললাম, আমি ধরছি। উঠে বস। কিন্তু পারল না। আমি ওর বউকে ফোন করে ডেকে আনি। চেনা হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার কথাও বলি। কিন্তু ও চাইল না যেতে, আর ওর বউও ওকে বাড়িতে নিয়ে গেল। যদি যেত হাসপাতালে, হয়তো…এই হয়তোটাই থেকে যাবে। যাইহোক, রাতে বউয়ের সঙ্গে কথা হল. ঘুমোচ্ছে জানাল। বললাম, পরের দিন সেটে না আসতে। কিন্তু পরের দিন একটা রিয়্যালিটি শো-এর শুটিংয়ে চলে গেল। ফোন করলে, নিজেই ধরে বলল, ‘কথা দেওয়া ছিল, করতে তো হবে’। কাজের প্রতি এমন ডেডিকেশন ছিল, যদি জীবনের প্রতিও সেটা দেখাত….