নয়াদিল্লি: পাঁচ বছর ধরে দিব্যি চলছিল। টার্গেট করা হত বিদেশে কাজের খোঁজে যাওয়া ব্যক্তিদের। তারপর লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে দেওয়া হত ভুয়ো ভিসা। আর এভাবেই পাঁচ বছরে ৩০০ কোটি টাকা পকেটে পুরেছে নকল ভিসা তৈরির একটি গ্যাং। তবে শেষরক্ষা হল না। দিল্লি বিমানবন্দরে অভিবাসন দফতর এক যাত্রীর ভিসা পরীক্ষা করতে যেতেই সামনে এল গ্যাংয়ের কথা। একে একে ধরা পড়েছে ওই গ্যাংয়ের ৬ সদস্য। তাদের কাজের পদ্ধতি দেখে চোখ কপালে উঠেছে পুলিশের।
গত ২ সেপ্টেম্বর সন্দীপ নামে হরিয়ানার এক ব্যক্তি ইট্যালি যাওয়ার জন্য দিল্লি বিমানবন্দরে আসেন। তাঁর কাছে সুইডিস ভিসা ছিল। সেই ভিসা পরীক্ষা করতে গিয়েই চোখ কপালে ওঠে অভিবাসন দফতরের। জিজ্ঞাসাবাদ করায় সন্দীপ জানান, তাঁর গ্রামের অনেকেই এই ভিসা করে বিদেশে গিয়েছেন। তারপরই সামনে আসে এই গ্যাংয়ের কথা। সন্দীপ জানান, এই ভিসার জন্য আসিফ আলি নামে এক এজেন্টকে ১০ লক্ষ টাকা দিয়েছেন তিনি।
তদন্তে নেমে আসিফ আলি ও তাঁর দুই সাগরেদ শিব গৌতম এবং নবীন রানাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের সময় আরও দুই এজেন্টের নাম বলেন শিব গৌতম। তাঁদের নাম বলবীর সিং এবং যশবিন্দর সিং। তাঁদেরও গ্রেফতার করে পুলিশ। পাঁচজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পারে, দিল্লির তিলক নগর এলাকায় একটি কারখানায় এই ভুয়ো ভিসা তৈরি হয়। আর কারখানাটি চালান মনোজ মঙ্গা বলে একজন।
তিলক নগর এলাকায় ওই কারখানায় তল্লাশি চালায় পুলিশ। এবং মনোজ মঙ্গাকে গ্রেফতার করে। গ্রাফিক্স ডিজাইনে ডিপ্লোমা করেছেন মনোজ। বছর পাঁচেক আগে জয়দীপ সিং নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয় হয় মনোজের। গ্রাফিক্স ডিজাইনারের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে ভুয়ো ভিসা তৈরির পরামর্শ দেন জয়দীপ। এমনকি, মনোজকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও দেন।
পুলিশ জানিয়েছে, এই গ্যাং মাসে ৩০ থেকে ৬০ টি ভিসা তৈরি করত। এবং মাত্র ২০ মিনিটে ভিসার স্টিকার বানাতে পারে। প্রত্যেক ভুয়ো ভিসার জন্য ৮-১০ লক্ষ টাকা নিত। যোগাযোগের জন্য টেলিগ্রাম, হোয়াইটঅ্যাপ ব্যবহার করত। পুলিশ জানিয়েছে, বিদেশে কাজে যেতে চায়, এমন ব্যক্তিদের টার্গেট করা হত। বিভিন্ন এলাকায় এই গ্য়াংয়ের স্থানীয় এজেন্ট রয়েছে। তারাই ওই ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করত। এখনও পর্যন্ত ৪ থেকে ৫ হাজার ভিসা তৈরি করেছে এই গ্যাং।
দিল্লি বিমানবন্দরের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার ঊষা রঙ্গরানি বলেন, এখনও পর্যন্ত এই গ্যাংয়ের ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ১৬টি নেপালি পাসপোর্ট ও ২টি ভারতীয় পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়েছে। ৩০টি ভিসা স্টিকার ও ২৩টি ভিসা স্ট্যাম্প বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ডাই মেশিন, প্রিন্টার, ল্যাপটপ-সহ ভুয়ো ভিসা তৈরির জন্য একাধিক সরঞ্জাম বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।