কলকাতা। প্রাণের শহর কলকাতা। প্রেম-মিছিল-স্লোগানের ভিড়ে ব্যস্ততার আরেক নাম কলকাতা। যদিও সিটি অফ জয় নামটা জুটেছে অনেকটাই পরে। তাও কলকাতার ডায়রিতে আনন্দ আর উচ্ছাস হাত ধরাধরি করে চলেছে পত্তনের পর থেকেই। শহরটার বয়স তিনশো বছরেরও বেশি। ময়দানের ঘাস জানে কলকাতার ইতিহাস, গঙ্গার ঘাটগুলোয় রাখা তার স্মৃতি, উত্তর কলকাতার গলিগুলোতে থমকে গেছে তার সময়। আর এই শহরের প্রাণ বয়ে নিয়ে চলেছে ধমনীর মতো ছড়িয়ে থাকা ট্রামের লাইন। আসলে কলকাতার জন্মের অনেকটা পরে এলেও। দেড়শো বছরের ট্রাম কলকাতার আইডেন্টিফিকেশন মার্ক। ট্রামকে ঘিরে পাল্টেছে শহরের রাজনীতি, এমনকি ট্রামের জন্মের সঙ্গেও জুড়ে আছে কলকাতার চেনা শব্দ -আন্দোলন। ট্রাম বাঙালি সাহিত্য থেকে গান সবাই শহরের গন্ধ মিশিয়ে দিয়েছে। গঙ্গার বহমান স্রোতের মতো কলকাতার দিনপঞ্জিতে ট্রাম প্রথম প্রেমের স্মৃতিচারণার মতোই। সেই ট্রাম এখন প্রায় মৃত্যুশয্যায়, কেন এল এমন দিন? কেমন ছিল গর্বের দিনগুলি? কবিতায়- উপন্যাসে কীভাবে ট্রাম হয়ে উঠেছে কলকাতার সমার্থক? কীভাবে ট্রাম বদলে দিয়েছে কলকাতার একাল-সেকাল।
কলকাতা যদি প্রেমের শহর হয়, তবে বৃষ্টির জলে বা শিশিরে ভেজা রাস্তা সেই শহরের বিরহের সাক্ষী। রাস্তার ফুটপাথে অগুনতি মানুষ, তাঁদের মুখে লেগে থাকা হাসি-কান্না-সুখ-দুঃখের প্রমান বহন করে চলেছে কল্লোলিনী। আর ট্রাম? ট্রাম নিজেই যেন বয়সের ভারে ক্লান্ত হয়ে ছুটে চলেছে যৌবনের ক্লান্তি বুকে নিয়ে। ছিল রুমাল, হয়ে গেল বেড়াল। ট্রামের জন্মটাও যেন ঠিক তেমনই। অবশ্য এই জন্মের সাথেও আদ্যোপান্ত জড়িয়ে ধর্মঘট আর ময়দান চত্বর। তখন কলকাতার বাবুরা পালকি চড়তেন। পালকির বেহারারা এতটাই পটু ছিলেন যে হাত বদল হল কখন তা টেরই পেতেন না। আর পালকি ভাড়া তাও ছিল বেহারাদেরই হাতে। এমন সময় নতুন আইন লাঘু করল ব্রিটিশ সরকার। বেহারাদের নিতে হবে লাইসেন্স। তার ফলে সেদিন হয়েছিল ভারতের প্রথম পরিবহন ধর্মঘট। সেই ধর্মঘটেই জন্ম নিল ট্রামের ধারণা। তারপর দেড়শো বছরেরও বেশি সময় ধরে হাজার স্মৃতির সাক্ষী হয়েছে ট্রাম। একটা ঘড়ঘড়ে চেনা শব্দ, দড়ির টানে কন্ডাক্টরের হাতে বাজে টুং টাং। বিধান সরণির বুক কেঁপে ওঠে তার দুলকি চালে। সরকার যেন অনেকটা যা গেছে তা যাক এরকমই মনোভাব নিয়ে এগিয়ে এসেছে। শুধু গাড়ি ছুটবে। সবুজ সিগনালে দৌড়াবে শহর। মাটির নিচ ফুঁড়ে ছুটবে মেট্রো। আকাশ ঢেকে ছুটবে মেট্রো কিন্তু মুছে যাবে এ শহরের ট্রাম। ঠিক যেমনটা মুছে গেছে বিকেল, খেলার মাঠ আর ছেলেবেলা গুলো।
সাতের দশক। উদ্দাম তারুণ্যের দশক। পরপর তিনটি ছবি। ক্যালকাটা ট্রিলজিতে মৃনাল সেন তুলে ধরলেন সত্তরের কলকাতার দিনপঞ্জি। ইন্টারভিউ সেই ত্রয়ীর প্রথম ফিল্ম। আর ইন্টারভিউর কলকাতাতেও মৃনাল সেনের লেন্সে ধরা পড়েছিল চেনা ছন্দের ট্রাম। রঞ্জিত মল্লিকের সাধারণ জীবন থেকে অদৃশ্য তৃতীয় প্রাচীর ভেঙে অডিয়েন্সের সাথে তার কথোপকথন। সবটাই হয়েছিল ট্রামে। কালের ভার নিয়ে গুটি গুটি পায়ে সাপের মতো আঁকাবাঁকা পথে চলেছে ট্রাম। বাঙালির মননের সাথেই পাল্লা দিয়ে বেড়েছে তার বয়স। আজকের যে ট্রাম আমরা দেখি তার জন্ম অবশ্য অনেকটাই পরে। ২৭ মার্চ ১৯০২। বলা যায় আধুনিক ট্রামের শুরু সেদিনই। এসপ্ল্যানেড থেকে খিদিরপুর। কবছর আগে অবধিও যে রুট চলে যেত সবুজের বুক চিরে ডানা মেলে। খিদিরপুর আর কালীঘাট ট্রাম ডিপো দিয়েই যাত্রা শুরু ইলেকট্রিক ট্রামের। দেশ ছাড়লো ব্রিটিশ প্রভুর দল। তারপরেও কেটে গেলো অনেকগুলো বছর। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হাতে ক্যালকাটা ট্রামওয়েস কোম্পানি আসতে লেগে গেলো দুই দশকেরও বেশি সময়। ৮ নভেম্বর ১৯৭৬। পাকাপাকি ভাবে সরকারি হয় কলকাতার ট্রাম। তখন জ্যোতি বসুর সরকার। তারপর ধীরে ধীরে চলেছে ট্রামের সম্প্রসারণ। আসলে রাষ্ট্রনীতি আর ট্রাম যেন সবসময়ই মিশে গিয়েছে কলকাতার ইতিহাসে।
রবীন্দ্রনাথের ক্যামেলিয়া কবিতায় ফুটবল খেলোয়াড় প্রেমিকটি, কমলাকে যে ট্রামে দেখেছিলেন ‘তার ভাইকে নিয়ে কলেজের রাস্তায়’ সেই ট্রামই প্রায় চার দশক পর আগুনে পুড়তে দেখে দৌড়ে গেছিল সমরেশ মজুমদারের কালবেলার নায়ক অনিমেষ। ইংরেজ আমলে যে কামরায় গরীব ভারতীয়দের ঠাঁই হত, সেটাই সেকন্ড ক্লাস কামরা। আর ১৯৫৩ সালে ট্রাম কোম্পানি এই সেকন্ড ক্লাসের ভাড়াই তিন পয়সা থেকে চার পয়সা করার সিদ্ধান্ত নেয়। ৪ জুলাই ১৯৫৩। কলকাতা জুড়ে চলল হরতাল। রেল অবরোধ। শহর জুড়ে ঘোষণা করা হল কারফিউ। বিধানচন্দ্র রায়ের সরকার এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ব্যাকফুটে সরছিল প্রতিদিন। ট্রামকে শুধু কি পরিবহনের মাধ্যম বলা যায়? আন্দোলন, সংস্কৃতি আর বাঙালি মননের অংশ এই ট্রাম। আজ যখন মৃত্যুশয্যায় ট্রাম, তখন যেন হারানো কলকাতার সত্ত্বাও তারই সাথে সহমরণে যাচ্ছে। বিদেশের রাস্তায় ট্রাম দেখলে তাই হয়তো প্রবাসী ক্যালকেশিয়ানদের মনে ভেসে আসে বন্ধ হয়ে যাওয়া ময়দান রুটের স্মৃতি কিংবা পার্ক সার্কাসের রাস্তায় সাপের মতো বিছিয়ে থাকা নিস্তব্ধ লাইনের কথা।
এ শহর একমাস দেখেনি তাকে। ২২ অক্টোবর, ২০২৪। ফিরে এল ট্রাম। কোর্টের অর্ডারে দুটো রুটে আবার যাত্রা শুরু। আর এমন একটি দিনে ট্রামের ফিরে আসা এক আশ্চর্য সমাপতন। ১৯৫৪ সালের এই দিনেই মৃত্যু হয়েছিল ট্রামের ধাক্কায় কবির। যে কবি ট্রামকে বলেছিলেন ‘ফিলোজফার্স কার’, যার লেখায় বারবার উঠে এসেছে ট্রামের মন্থরতা এবং বোরডমের সাধনা। মৃত্যুর ৮ দিন আগে ২৪ নম্বর রুটের ট্রাম দুর্ঘটনায় আহত হন জীবনানন্দ দাশ। হাজারো অভিযোগ ট্রামের বিরুদ্ধে। আড়ালে লুকিয়ে কোন দুর্নীতির ভুত? ট্রাম ডিপো দখলের ষড়যন্ত্রের শিকার হতে হচ্ছে ট্রামকেও? শিক্ষা-স্বাস্থ্য-চাকরি দুর্নীতির অভিযোগ অনেক। কিন্তু দুর্নীতি আর দুঃশাসনের দখলে হারিয়ে যাবে কলকাতার চেতনাও? ট্রামকে কি মুছে ফেলবে এই প্রাণের শহর? ভাইয়ের কপালের ফোঁটা কি যমের দুয়ার থেকে ছিনিয়ে আনতে পারবে ট্রামকে?
কলকাতা। প্রাণের শহর কলকাতা। প্রেম-মিছিল-স্লোগানের ভিড়ে ব্যস্ততার আরেক নাম কলকাতা। যদিও সিটি অফ জয় নামটা জুটেছে অনেকটাই পরে। তাও কলকাতার ডায়রিতে আনন্দ আর উচ্ছাস হাত ধরাধরি করে চলেছে পত্তনের পর থেকেই। শহরটার বয়স তিনশো বছরেরও বেশি। ময়দানের ঘাস জানে কলকাতার ইতিহাস, গঙ্গার ঘাটগুলোয় রাখা তার স্মৃতি, উত্তর কলকাতার গলিগুলোতে থমকে গেছে তার সময়। আর এই শহরের প্রাণ বয়ে নিয়ে চলেছে ধমনীর মতো ছড়িয়ে থাকা ট্রামের লাইন। আসলে কলকাতার জন্মের অনেকটা পরে এলেও। দেড়শো বছরের ট্রাম কলকাতার আইডেন্টিফিকেশন মার্ক। ট্রামকে ঘিরে পাল্টেছে শহরের রাজনীতি, এমনকি ট্রামের জন্মের সঙ্গেও জুড়ে আছে কলকাতার চেনা শব্দ -আন্দোলন। ট্রাম বাঙালি সাহিত্য থেকে গান সবাই শহরের গন্ধ মিশিয়ে দিয়েছে। গঙ্গার বহমান স্রোতের মতো কলকাতার দিনপঞ্জিতে ট্রাম প্রথম প্রেমের স্মৃতিচারণার মতোই। সেই ট্রাম এখন প্রায় মৃত্যুশয্যায়, কেন এল এমন দিন? কেমন ছিল গর্বের দিনগুলি? কবিতায়- উপন্যাসে কীভাবে ট্রাম হয়ে উঠেছে কলকাতার সমার্থক? কীভাবে ট্রাম বদলে দিয়েছে কলকাতার একাল-সেকাল।
কলকাতা যদি প্রেমের শহর হয়, তবে বৃষ্টির জলে বা শিশিরে ভেজা রাস্তা সেই শহরের বিরহের সাক্ষী। রাস্তার ফুটপাথে অগুনতি মানুষ, তাঁদের মুখে লেগে থাকা হাসি-কান্না-সুখ-দুঃখের প্রমান বহন করে চলেছে কল্লোলিনী। আর ট্রাম? ট্রাম নিজেই যেন বয়সের ভারে ক্লান্ত হয়ে ছুটে চলেছে যৌবনের ক্লান্তি বুকে নিয়ে। ছিল রুমাল, হয়ে গেল বেড়াল। ট্রামের জন্মটাও যেন ঠিক তেমনই। অবশ্য এই জন্মের সাথেও আদ্যোপান্ত জড়িয়ে ধর্মঘট আর ময়দান চত্বর। তখন কলকাতার বাবুরা পালকি চড়তেন। পালকির বেহারারা এতটাই পটু ছিলেন যে হাত বদল হল কখন তা টেরই পেতেন না। আর পালকি ভাড়া তাও ছিল বেহারাদেরই হাতে। এমন সময় নতুন আইন লাঘু করল ব্রিটিশ সরকার। বেহারাদের নিতে হবে লাইসেন্স। তার ফলে সেদিন হয়েছিল ভারতের প্রথম পরিবহন ধর্মঘট। সেই ধর্মঘটেই জন্ম নিল ট্রামের ধারণা। তারপর দেড়শো বছরেরও বেশি সময় ধরে হাজার স্মৃতির সাক্ষী হয়েছে ট্রাম। একটা ঘড়ঘড়ে চেনা শব্দ, দড়ির টানে কন্ডাক্টরের হাতে বাজে টুং টাং। বিধান সরণির বুক কেঁপে ওঠে তার দুলকি চালে। সরকার যেন অনেকটা যা গেছে তা যাক এরকমই মনোভাব নিয়ে এগিয়ে এসেছে। শুধু গাড়ি ছুটবে। সবুজ সিগনালে দৌড়াবে শহর। মাটির নিচ ফুঁড়ে ছুটবে মেট্রো। আকাশ ঢেকে ছুটবে মেট্রো কিন্তু মুছে যাবে এ শহরের ট্রাম। ঠিক যেমনটা মুছে গেছে বিকেল, খেলার মাঠ আর ছেলেবেলা গুলো।
সাতের দশক। উদ্দাম তারুণ্যের দশক। পরপর তিনটি ছবি। ক্যালকাটা ট্রিলজিতে মৃনাল সেন তুলে ধরলেন সত্তরের কলকাতার দিনপঞ্জি। ইন্টারভিউ সেই ত্রয়ীর প্রথম ফিল্ম। আর ইন্টারভিউর কলকাতাতেও মৃনাল সেনের লেন্সে ধরা পড়েছিল চেনা ছন্দের ট্রাম। রঞ্জিত মল্লিকের সাধারণ জীবন থেকে অদৃশ্য তৃতীয় প্রাচীর ভেঙে অডিয়েন্সের সাথে তার কথোপকথন। সবটাই হয়েছিল ট্রামে। কালের ভার নিয়ে গুটি গুটি পায়ে সাপের মতো আঁকাবাঁকা পথে চলেছে ট্রাম। বাঙালির মননের সাথেই পাল্লা দিয়ে বেড়েছে তার বয়স। আজকের যে ট্রাম আমরা দেখি তার জন্ম অবশ্য অনেকটাই পরে। ২৭ মার্চ ১৯০২। বলা যায় আধুনিক ট্রামের শুরু সেদিনই। এসপ্ল্যানেড থেকে খিদিরপুর। কবছর আগে অবধিও যে রুট চলে যেত সবুজের বুক চিরে ডানা মেলে। খিদিরপুর আর কালীঘাট ট্রাম ডিপো দিয়েই যাত্রা শুরু ইলেকট্রিক ট্রামের। দেশ ছাড়লো ব্রিটিশ প্রভুর দল। তারপরেও কেটে গেলো অনেকগুলো বছর। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হাতে ক্যালকাটা ট্রামওয়েস কোম্পানি আসতে লেগে গেলো দুই দশকেরও বেশি সময়। ৮ নভেম্বর ১৯৭৬। পাকাপাকি ভাবে সরকারি হয় কলকাতার ট্রাম। তখন জ্যোতি বসুর সরকার। তারপর ধীরে ধীরে চলেছে ট্রামের সম্প্রসারণ। আসলে রাষ্ট্রনীতি আর ট্রাম যেন সবসময়ই মিশে গিয়েছে কলকাতার ইতিহাসে।
রবীন্দ্রনাথের ক্যামেলিয়া কবিতায় ফুটবল খেলোয়াড় প্রেমিকটি, কমলাকে যে ট্রামে দেখেছিলেন ‘তার ভাইকে নিয়ে কলেজের রাস্তায়’ সেই ট্রামই প্রায় চার দশক পর আগুনে পুড়তে দেখে দৌড়ে গেছিল সমরেশ মজুমদারের কালবেলার নায়ক অনিমেষ। ইংরেজ আমলে যে কামরায় গরীব ভারতীয়দের ঠাঁই হত, সেটাই সেকন্ড ক্লাস কামরা। আর ১৯৫৩ সালে ট্রাম কোম্পানি এই সেকন্ড ক্লাসের ভাড়াই তিন পয়সা থেকে চার পয়সা করার সিদ্ধান্ত নেয়। ৪ জুলাই ১৯৫৩। কলকাতা জুড়ে চলল হরতাল। রেল অবরোধ। শহর জুড়ে ঘোষণা করা হল কারফিউ। বিধানচন্দ্র রায়ের সরকার এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ব্যাকফুটে সরছিল প্রতিদিন। ট্রামকে শুধু কি পরিবহনের মাধ্যম বলা যায়? আন্দোলন, সংস্কৃতি আর বাঙালি মননের অংশ এই ট্রাম। আজ যখন মৃত্যুশয্যায় ট্রাম, তখন যেন হারানো কলকাতার সত্ত্বাও তারই সাথে সহমরণে যাচ্ছে। বিদেশের রাস্তায় ট্রাম দেখলে তাই হয়তো প্রবাসী ক্যালকেশিয়ানদের মনে ভেসে আসে বন্ধ হয়ে যাওয়া ময়দান রুটের স্মৃতি কিংবা পার্ক সার্কাসের রাস্তায় সাপের মতো বিছিয়ে থাকা নিস্তব্ধ লাইনের কথা।
এ শহর একমাস দেখেনি তাকে। ২২ অক্টোবর, ২০২৪। ফিরে এল ট্রাম। কোর্টের অর্ডারে দুটো রুটে আবার যাত্রা শুরু। আর এমন একটি দিনে ট্রামের ফিরে আসা এক আশ্চর্য সমাপতন। ১৯৫৪ সালের এই দিনেই মৃত্যু হয়েছিল ট্রামের ধাক্কায় কবির। যে কবি ট্রামকে বলেছিলেন ‘ফিলোজফার্স কার’, যার লেখায় বারবার উঠে এসেছে ট্রামের মন্থরতা এবং বোরডমের সাধনা। মৃত্যুর ৮ দিন আগে ২৪ নম্বর রুটের ট্রাম দুর্ঘটনায় আহত হন জীবনানন্দ দাশ। হাজারো অভিযোগ ট্রামের বিরুদ্ধে। আড়ালে লুকিয়ে কোন দুর্নীতির ভুত? ট্রাম ডিপো দখলের ষড়যন্ত্রের শিকার হতে হচ্ছে ট্রামকেও? শিক্ষা-স্বাস্থ্য-চাকরি দুর্নীতির অভিযোগ অনেক। কিন্তু দুর্নীতি আর দুঃশাসনের দখলে হারিয়ে যাবে কলকাতার চেতনাও? ট্রামকে কি মুছে ফেলবে এই প্রাণের শহর? ভাইয়ের কপালের ফোঁটা কি যমের দুয়ার থেকে ছিনিয়ে আনতে পারবে ট্রামকে?