Durga Puja: জানেন ঠিক কোন কারণের জন্য চালু হয়েছিল বারোয়ারি দুর্গাপুজো?

TV9 Bangla Digital | Edited By: Tapasi Dutta

Sep 30, 2024 | 11:43 PM

বারোয়ারি দুর্গাপুজো আসলে প্রতিবাদেরই পুজো। প্রতিবাদের হাত ধরেই যার জন্ম। ব্রিটিশ শাসনের বিরোধিতা, স্বাধীনতার ডাক, বিপ্লবীদের পাশে থাকার বার্তা - পুজোর সঙ্গে মিশে রয়েছে আরও অনেককিছু। পুজোর মুখে সেই ইতিহাসেই একবার নজর রাখি। উত্‍সব আর প্রতিবাদ বরাবরই হাত ধরাধরি করে হেঁটেছে দুর্গাপুজোয়।

Follow Us

পুজোর দিনে মা এসে গহনা পরেন জোড়াসাঁকোর শিবকৃষ্ণ দাঁয়ের বাড়িতে। ভোজন করেন কুমোরটুলির অভয়চরণ মিত্রের বাড়িতে। আর রাতে নাচ দেখতে যান শোভাবাজার রাজবাড়িতে। পুরনো কলকাতার দুর্গাপুজো নিয়ে একটা চালু প্রবাদ। এই প্রবাদকে চ্যালেঞ্জ করেই বারোয়ারি দুর্গাপুজোর আয়োজন। সেই পুজোর আয়োজকদের বক্তব্য ছিল, মা জমিদারদের বাড়ি ছাড়া ঘোরাফেরা করেন না নাকি? মা সবার বাড়ি যাবেন। সবাই মাকে ভোগ খাওয়াতে পারবেন। মায়ের পুজোয় সবাই অংশ নিতে পারবেন। শুরু হলো বারোয়ারি পুজো। রাজবাড়ি, জমিদার বাড়ির পুজোয় দিনের একটা নির্দিষ্ট সময় ছাড়া সাধারণ মানুষকে ঢুকতে দেওয়া হতো না। অঞ্জলি দেওয়া নিয়ে হাজারো বিধিনিষেধ ছিল। সবাই সেই পুজোয় সামিল হতে পারতেন না। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে শহর কলকাতায় বারোয়ারি পুজো শুরু।

সামনেই মহালয়া। একদিকে পথে উপচে পড়া ভিড়। শহরে-জেলায় শপিং ডেস্টিনেশনে একদম পুজো-পুজো মুড। অন্যদিকে কলকাতায়, জেলায় চলছে প্রতিবাদও। আরজিকরের ঘটনায় বিচারের দাবিতে মশাল মিছিল। নিরাপত্তা চেয়ে ডাক্তারদের সঙ্গে পথে সাধারণ মানুষ। পাশাপাশি এই দুটো ছবি এর আগে বাঙালি দেখেছে কি? বারোয়ারি দুর্গাপুজো আসলে প্রতিবাদেরই পুজো। প্রতিবাদের হাত ধরেই যার জন্ম। ব্রিটিশ শাসনের বিরোধিতা, স্বাধীনতার ডাক, বিপ্লবীদের পাশে থাকার বার্তা – পুজোর সঙ্গে মিশে রয়েছে আরও অনেককিছু। পুজোর মুখে সেই ইতিহাসেই একবার নজর রাখতে চাইছি। ১৭৯০ সাল নাগাদ হুগলির গুপ্তিপাড়ায় ১২ জন ব্যক্তি একজোট হয়ে দুর্গাপুজোর আয়োজন করেন। অনেকের কাছে সেটাই বাঙালির প্রথম বারোয়ারি দুর্গাপুজো। বারোজনের পুজো থেকে বারোয়ারি। তবে এনিয়ে আবার অন্যমতও আছে। সেই মত বলে, গুপ্তিপাড়ায় জমিদারের আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়ে যাওয়ায় ১২টি পরিবার চাঁদা তুলে পুজোর আয়োজন করেছিল। তাই প্রথম বারোয়ারি পুজো বলতে গেলে কলকাতায় ক্লাবের পুজো। ১৯১০ সালে ভবানীপুরে সনাতন ধর্মোত্‍সাহী সভার দুর্গাপুজোয় প্রথমবার সামিল হওয়ার সুযোগ পান সাধারণ মানুষ। পরের বছর ১৯১১ সালে হাতিবাগানের রামধন মিত্র লেনে বিল ছাপিয়ে চাঁদা তুলে প্রথম দুর্গাপুজো হয়। আবার ১৯১৮ সালে জমিদার বাড়িতে মায়ের ভোগ দিতে গিয়ে অপমানিত হতে হয় কয়েকজন প্রবীণকে। প্রতিবাদে তখনকার নেবুবাগানের বাসিন্দারা ঘুরে, ঘুরে চাঁদা তুলে শুরু করলেন দুর্গাপুজো – নেবুবাগান সার্বজনীন। সেই পুজোর একটা থিমও ছিল। সকলের জন্য – সকলের পুজো। সেই পুজোও প্রতিবাদের পুজো। সমাজের অভিজাত শ্রেণীর বিরুদ্ধে আম-আদমির প্রতিবাদ। ১৯২৬ সালে স্বামী বিবেকানন্দর বাড়ির ঠিক পাশে সিমলে পাড়ার মাঠে পুজো শুরু করে সিমলা ব্যায়াম সমিতি। বিপ্লবী অতীন্দ্রনাথ বসুর উদ্যোগে এই পুজোয় প্রথম থেকেই ছিল ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। অনেকে মনে করেন, এটাই কলকাতার প্রথম বারোয়ারি পুজো। যদিও এনিয়ে নির্দিষ্ট কোনও তথ্য নেই। ১৯২৭ সালে খিদিরপুরে দুর্গাপুজো শুরু করে খিদিরপুর সার্বজনীন দুর্গোত্‍সব সমিতি। সুভাষচন্দ্র বসুর নির্দেশে এই পুজো করেছিলেন বিপ্লবী বারিন ঘোষ।

ব্রিটিশের আইনের বিরুদ্ধে চোখা চোখা সব প্রশ্ন দিয়ে পুজোর সময় দেওয়াল সাজানো হতো। এজন্য প্রতিবারই পুজোর পর বারিনবাবুকে তলব করত পুলিশ। কাশী বোস লেনের দুর্গাপুজোর কথাই ধরুন না। ১৯৩৭ সালে এই পুজোর শুরু। প্রথম বছরেই উদ্যোক্তারা ঘোষণা করেন, চারদিন নয়। প্রতিপদ থেকে দশমী, পুজো হবে দশ দিন ধরে। আর পুজো করবেন প্রধান পুরোহিত-সহ ১১ জন। আসলে পুরোহিত ছিলেন একজনই। বাকি ১০ জন বিপ্লবী। তাঁরা পুজোর আসনে বসে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের কৌশল তৈরি করতেন। পুলিশ সব বুঝত। কিন্তু ঠাকুরের বেদিতে উঠে পুরোহিতদের পাকড়াও করার ঝুঁকি নিতে চায়নি। ১৯৪২ সাল।

একদিকে গান্ধীজির ভারত ছাড়ো আন্দোলন, অন্যদিকে স্বাধীনতার জন্য ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মির মরণপন লড়াই। সেইসব আন্দোলনে যোগ দেওয়ার বার্তাও দিয়েছে দুর্গাপুজো। কিউবার উপর মার্কিন আগ্রাসনের প্রতিবাদ কিংবা নন্দীগ্রাম আন্দোলন- দুর্গাপুজো কোনটা থেকে দূরে ছিল বলুন তো? উত্‍সব আর প্রতিবাদ বরাবরই হাত ধরাধরি করে হেঁটেছে দুর্গাপুজোয়।

পুজোর দিনে মা এসে গহনা পরেন জোড়াসাঁকোর শিবকৃষ্ণ দাঁয়ের বাড়িতে। ভোজন করেন কুমোরটুলির অভয়চরণ মিত্রের বাড়িতে। আর রাতে নাচ দেখতে যান শোভাবাজার রাজবাড়িতে। পুরনো কলকাতার দুর্গাপুজো নিয়ে একটা চালু প্রবাদ। এই প্রবাদকে চ্যালেঞ্জ করেই বারোয়ারি দুর্গাপুজোর আয়োজন। সেই পুজোর আয়োজকদের বক্তব্য ছিল, মা জমিদারদের বাড়ি ছাড়া ঘোরাফেরা করেন না নাকি? মা সবার বাড়ি যাবেন। সবাই মাকে ভোগ খাওয়াতে পারবেন। মায়ের পুজোয় সবাই অংশ নিতে পারবেন। শুরু হলো বারোয়ারি পুজো। রাজবাড়ি, জমিদার বাড়ির পুজোয় দিনের একটা নির্দিষ্ট সময় ছাড়া সাধারণ মানুষকে ঢুকতে দেওয়া হতো না। অঞ্জলি দেওয়া নিয়ে হাজারো বিধিনিষেধ ছিল। সবাই সেই পুজোয় সামিল হতে পারতেন না। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে শহর কলকাতায় বারোয়ারি পুজো শুরু।

সামনেই মহালয়া। একদিকে পথে উপচে পড়া ভিড়। শহরে-জেলায় শপিং ডেস্টিনেশনে একদম পুজো-পুজো মুড। অন্যদিকে কলকাতায়, জেলায় চলছে প্রতিবাদও। আরজিকরের ঘটনায় বিচারের দাবিতে মশাল মিছিল। নিরাপত্তা চেয়ে ডাক্তারদের সঙ্গে পথে সাধারণ মানুষ। পাশাপাশি এই দুটো ছবি এর আগে বাঙালি দেখেছে কি? বারোয়ারি দুর্গাপুজো আসলে প্রতিবাদেরই পুজো। প্রতিবাদের হাত ধরেই যার জন্ম। ব্রিটিশ শাসনের বিরোধিতা, স্বাধীনতার ডাক, বিপ্লবীদের পাশে থাকার বার্তা – পুজোর সঙ্গে মিশে রয়েছে আরও অনেককিছু। পুজোর মুখে সেই ইতিহাসেই একবার নজর রাখতে চাইছি। ১৭৯০ সাল নাগাদ হুগলির গুপ্তিপাড়ায় ১২ জন ব্যক্তি একজোট হয়ে দুর্গাপুজোর আয়োজন করেন। অনেকের কাছে সেটাই বাঙালির প্রথম বারোয়ারি দুর্গাপুজো। বারোজনের পুজো থেকে বারোয়ারি। তবে এনিয়ে আবার অন্যমতও আছে। সেই মত বলে, গুপ্তিপাড়ায় জমিদারের আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়ে যাওয়ায় ১২টি পরিবার চাঁদা তুলে পুজোর আয়োজন করেছিল। তাই প্রথম বারোয়ারি পুজো বলতে গেলে কলকাতায় ক্লাবের পুজো। ১৯১০ সালে ভবানীপুরে সনাতন ধর্মোত্‍সাহী সভার দুর্গাপুজোয় প্রথমবার সামিল হওয়ার সুযোগ পান সাধারণ মানুষ। পরের বছর ১৯১১ সালে হাতিবাগানের রামধন মিত্র লেনে বিল ছাপিয়ে চাঁদা তুলে প্রথম দুর্গাপুজো হয়। আবার ১৯১৮ সালে জমিদার বাড়িতে মায়ের ভোগ দিতে গিয়ে অপমানিত হতে হয় কয়েকজন প্রবীণকে। প্রতিবাদে তখনকার নেবুবাগানের বাসিন্দারা ঘুরে, ঘুরে চাঁদা তুলে শুরু করলেন দুর্গাপুজো – নেবুবাগান সার্বজনীন। সেই পুজোর একটা থিমও ছিল। সকলের জন্য – সকলের পুজো। সেই পুজোও প্রতিবাদের পুজো। সমাজের অভিজাত শ্রেণীর বিরুদ্ধে আম-আদমির প্রতিবাদ। ১৯২৬ সালে স্বামী বিবেকানন্দর বাড়ির ঠিক পাশে সিমলে পাড়ার মাঠে পুজো শুরু করে সিমলা ব্যায়াম সমিতি। বিপ্লবী অতীন্দ্রনাথ বসুর উদ্যোগে এই পুজোয় প্রথম থেকেই ছিল ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। অনেকে মনে করেন, এটাই কলকাতার প্রথম বারোয়ারি পুজো। যদিও এনিয়ে নির্দিষ্ট কোনও তথ্য নেই। ১৯২৭ সালে খিদিরপুরে দুর্গাপুজো শুরু করে খিদিরপুর সার্বজনীন দুর্গোত্‍সব সমিতি। সুভাষচন্দ্র বসুর নির্দেশে এই পুজো করেছিলেন বিপ্লবী বারিন ঘোষ।

ব্রিটিশের আইনের বিরুদ্ধে চোখা চোখা সব প্রশ্ন দিয়ে পুজোর সময় দেওয়াল সাজানো হতো। এজন্য প্রতিবারই পুজোর পর বারিনবাবুকে তলব করত পুলিশ। কাশী বোস লেনের দুর্গাপুজোর কথাই ধরুন না। ১৯৩৭ সালে এই পুজোর শুরু। প্রথম বছরেই উদ্যোক্তারা ঘোষণা করেন, চারদিন নয়। প্রতিপদ থেকে দশমী, পুজো হবে দশ দিন ধরে। আর পুজো করবেন প্রধান পুরোহিত-সহ ১১ জন। আসলে পুরোহিত ছিলেন একজনই। বাকি ১০ জন বিপ্লবী। তাঁরা পুজোর আসনে বসে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের কৌশল তৈরি করতেন। পুলিশ সব বুঝত। কিন্তু ঠাকুরের বেদিতে উঠে পুরোহিতদের পাকড়াও করার ঝুঁকি নিতে চায়নি। ১৯৪২ সাল।

একদিকে গান্ধীজির ভারত ছাড়ো আন্দোলন, অন্যদিকে স্বাধীনতার জন্য ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মির মরণপন লড়াই। সেইসব আন্দোলনে যোগ দেওয়ার বার্তাও দিয়েছে দুর্গাপুজো। কিউবার উপর মার্কিন আগ্রাসনের প্রতিবাদ কিংবা নন্দীগ্রাম আন্দোলন- দুর্গাপুজো কোনটা থেকে দূরে ছিল বলুন তো? উত্‍সব আর প্রতিবাদ বরাবরই হাত ধরাধরি করে হেঁটেছে দুর্গাপুজোয়।

Next Video