Straight Cut: দেশ-বিদেশের নানা অজানা তথ্য তোলা রইল ‘স্ট্রেট কাট’-এ
আগামী ৩ মাসের মধ্যে ইসরোর হাতে আসছে আরও একটি পুনঃর্ব্যবহার যোগ্য লঞ্চ ভেহিকেল। নাম পুষ্পক। আগামী ৩ থেকে ৭ দিনের মধ্যে দ্বিতীয় দফায় পুষ্পকের মহড়া। আরও একদফা, অর্থাত্ তৃতীয় দফার পরীক্ষার পর মে- জুন মাসে ইসরোর হয়ে কাজ শুরু করবে পুষ্পক রকেট।
৩ বছরের মধ্যে আবার চাঁদে যাচ্ছে ভারত। তবে চন্দ্রযান ফোরের ব্যাপার স্যাপার একেবারেই অন্যরকম। ভারতের মহাকাশযান চাঁদে নামবে। চাঁদের মাটিতে ঘুরে বেড়াবে। চাঁদ থেকে নমুনা সংগ্রহ করবে এবং পৃথিবীতে ফিরেও আসবে। ইসরো যেভাবে অভিযানের পরিকল্পনা করছে তা রাশিয়া-আমেরিকাও করে উঠতে পারেনি। চন্দ্রযান-৪’র মূলত চারটি টার্গেট। এক, চন্দ্রপৃষ্ঠে নিরাপদ এবং সফ্ট ল্যান্ডিং। দুই, নমুনা সংগ্রহ করে পৃথিবীতে ফিরে আসা। তিন, চাঁদের কক্ষপথে ডকিং-আনডকিং করা। চার, এক মডিউল থেকে অন্য মডিউলে নমুনা স্থানান্তর। আগে বলি, চন্দ্রযান ফোরের লঞ্চেও চমক থাকছে। ধরুন একটা সোমবার যদি চন্দ্রযান ফোর লঞ্চ হল। গোটা দেশ টিভিতে চোখ রাখল। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আবার আমাকে-আপনাকে টিভি খুলতে হবে চন্দ্রযান ফোর পার্ট টু দেখতে। কেন জানেন? আসলে দু-ধাপে চন্দ্রযান ফোর লঞ্চের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরো। প্রথম ধাপে তিনটি অংশকে গন্তব্যে পাঠাবে দেশের সবচেয়ে সফল লঞ্চ ভেহিকল এলভিএমথ্রি। পরের ধাপে দুটি অংশকে নিয়ে যাবে পিএসএলভি। সবমিলিয়ে চন্দ্রযান থ্রি আর চন্দ্রযান ফোরের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য বললেও ভুল বলা হবে না। যতটা খবর পাওয়া যাচ্ছে চন্দ্রযান ফোরে পাঁচটি অংশ থাকবে। প্রোপালসন মডিউল। ডিসেন্ডার মডিউল। ট্রান্সফার মডিউল। অ্যাসেন্ডার মডিউল এবং রি- এন্ট্রি মডিউল। আপনাদের নিশ্চয় মনে আছে চন্দ্রযান থ্রি-তে ৩টি মডিউল ছিল। এক, ল্যান্ডার। দুই, রোভার ও তিন, প্রোপালসন মডিউল। চতুর্থ চন্দ্রাভিযানে আরও দুটি মডিউল যোগ হচ্ছে। আপনাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে, দুটি অংশ কী একইসঙ্গে চাঁদের মাটিতে পৌঁছবে? উত্তরে বলি, না। আলাদা আলাদা সময়ে পে-লোডগুলি চাঁদে নামবে। আর এখানেই ইসরোর সবচেয়ে কঠিন, সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং কাজটা শুরু। এক পে-লোডগুলি যাতে খুব কাছাকাছি একই জায়গায় নামে তা নিশ্চিত করতে হবে। দুই, ৫টি অংশই যাতে মিশনের পুরো সময় নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখতে পারে, সেটাও দেখতে হবে। এজন্য ভেরিয়েবল ইউজিনিক কমিউনিকেশন প্রযুক্তি ব্যবহার করবে ইসরো। আর তিন, চাঁদ থেকে মাটি-পাথর নিয়ে ফিরবে চন্দ্রযান ফোর। ফেরার সময় নির্বিঘ্নে ল্যান্ডিং নিয়েও কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়ছে ইসরো। দেশের মহাকাশ গবেষণায় যা কিনা প্রথমবার ঘটবে। ইসরোর পরিকল্পনা ফাইনাল লঞ্চের আগে একাধিকবার পৃথিবীর নিম্নকক্ষে ডামি মহাকাশযান পাঠিয়ে তা ফিরিয়ে আনার মহড়া হবে। ইসরো চিফ খোলাখুলি বলছেন, গগনযানের চেয়েও অনেক জটিল ও চ্যালেঞ্জিং হতে চলেছে মিশন চন্দ্রযান ফোর। চাঁদের মাটি থেকে নমুনা নিয়ে ফিরতে সফল হয়েছে মাত্র তিনটি দেশ। আমেরিকা, রাশিয়া ও চিন। তার থেকেও বড় কথা, চন্দ্রযান থ্রি-র মতো এবারও দক্ষিণ মেরুতেই আমরা নামব। আমরা সবাই এতদিনে জেনে গেছি চাঁদের দক্ষিণ মেরু কতটা কঠিন জমি। এবড়ো-খেবড়ো গর্ত ভরা জমিতে যে কোনও মুহূর্তে রোভার মুখ থুবড়ে পড়তে পারে। আর নমুনা সংগ্রহ করতে গেলেও বিপদ। কারণ ভারি পাথর বা শক্ত মাটি থেকে নমুনা নেওয়াও কঠিন। ইসরোর গবেষকরা আপাতত এনিয়েই ব্যস্ত। তাঁরা এমন রোভার ও ল্যান্ডার তৈরি করতে চাইছেন, যা তিনটি কাজ করতে পারবে। এক, মাইনাস আড়াই ডিগ্রি সেলসিয়াসেও কাজ করবে পারবে। দুই, রুক্ষ, পাথুরে জমি থেকে নমুনা নিতে পারবে। তিন, সামনে কোনও বাধা এলে নিজে থেকেই বিকল্প পথ তৈরি করে নিতে পারবে। এজন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যও নেওয়া হতে পারে। সবমিলিয়ে দারুণ আকর্ষণীয়, চ্যালেঞ্জিং ও গর্ব করার মত একটা প্রজেক্ট। এমন একটা মিশন, যেটা হলে আমরা সিরিয়াল, খেলা, ওয়েব সিরিজ, সিনেমা ছেড়ে শুধু ইসরোর দিকেই তাকিয়ে থাকব। এ মাস থেকেই যার কাজ শুরু করে দিয়েছে ইসরো। আপনাদের আরও একটা খবর দিয়ে রাখি। আগামী ৩ মাসের মধ্যে ইসরোর হাতে আসছে আরও একটি পুনঃর্ব্যবহার যোগ্য লঞ্চ ভেহিকেল। নাম পুষ্পক। আগামী ৩ থেকে ৭ দিনের মধ্যে দ্বিতীয় দফায় পুষ্পকের মহড়া। আরও একদফা, অর্থাত্ তৃতীয় দফার পরীক্ষার পর মে- জুন মাসে ইসরোর হয়ে কাজ শুরু করবে পুষ্পক রকেট। পিএসএলভি, জিএসএলভি-র পর এই পুষ্পকে চেপে ভারতের মহাকাশযান গন্তব্যে পৌঁছবে। নিজস্ব মিশন ছাড়াও নাসার সঙ্গে যৌথভাবে আরও এক বড় কর্মকাণ্ডে জুড়ে গেছে ইসরো।
এবার একটা আশা জাগানোর খবর। এখনও ব্যাপারটা বাস্তবায়িত হয়নি। তবে হলে আমাদের সবারই লাভ হবে। দেখুন প্ল্যান করে বেড়াতে যাওয়া। ছুটিতে বাড়ি আসা। কিংবা আত্মীয়-পরিজনের বিয়ের জন্য দূরের শহরে যাওয়া। এরকম হাতে গোনা কয়েকটা ক্ষেত্রেই আমরা অনেক দিন আগে থেকে প্লেন বা ট্রেনের টিকিট কেটে রাখি। না হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখবেন জার্নির সাত-দশ-পনেরো দিন আগে টিকিট কাটা হয়। জরুরি কাজ পড়ে গেলে সেটা কাল-পরশু-তরশুও হয়ে যায়। প্লেন বা ট্রেন। দুটোর ক্ষেত্রেই এটা সত্যি। আর জার্নির অল্প কয়েকদিন আগে যদি আপনি প্লেনের টিকিট কাটেন তাহলে টিকিটের দাম হয়ে যায় আকাশ ছোঁয়া। ফেস্টিভ সিজন কিংবা অন্য কোনও কারণে ওই সময় যদি রাশ থাকে তাহলে তো কথাই নেই। প্লেনের ভাড়া দ্বিগুণ-তিনগুণও হয়ে যায়। যেমন ধরুন বৃষ্টিতে যদি কোনও কারণে NH-34 বন্ধ হয়ে যায়। তাহলে কলকাতা-বাগডোগরা উড়ানের ভাড়া ২০ হাজারও ছাড়িয়ে যায়। সোজা কথায় এটা একটা অত্যন্ত গর্হিত কাজ। আমার-আপনার মতো সাধারণ মানুষের কম্পালসানের সুযোগ নিয়ে দিনে ডাকাতি। কিন্তু বেসরকারি বিমানসংস্থার ভাড়ায় হস্তক্ষেপ করে না সরকার। যখন কোনও রুটে ভাড়া লাগাম ছাড়িয়ে যায়। তখন নাম কা ওয়াস্তে ডিজিসিএ দু-একটা কথা বলে। কোনও এয়ারলাইন্স তা শোনে না। মানুষের পকেট কাটার এই সিস্টেম চলতেই থাকে। এ অবস্থা থেকে একটা সুরাহা মেলার রাস্তা অবশেষে দেখা গেল। বিমানের সর্বোচ্চ ভাড়া বেঁধে দেওয়ার জন্য সুপারিশ করে রিপোর্ট দিয়েছে পরিবহণ, পর্যটন ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। রিপোর্টে বলা হয়েছে ডিজিসিএ নিয়ামক সংস্থা হিসাবে যেমন কাজ করছে করুক। শুধুমাত্র বিমান ভাড়া ঠিক করার জন্য অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রকের অধীনে আলাদা একটা সংস্থা তৈরি করা হোক। সেই সংস্থা রুট ধরে ধরে ভাড়ার উর্ধ্বসীমা বেঁধে দেবে। প্রস্তাবিত এই সংস্থার হাতে কোয়াসি-জুডিশিয়াল বা আধা-বিচারবিভাগীয় ক্ষমতা দিতে হবে। যাতে অনিয়ম হলে ব্যবস্থা নেওয়ার রাস্তা তাদের হাতে থাকে। আরেকটা জিনিস দেখুন। আপনি যদি প্লেনের টিকিটের সঙ্গে বাড়তি টাকা খরচ না করেন তাহলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আপনি পাবেন মাঝখানের সিট। জানলার ধারের সিট বা যে রো-এ একটু পা ছড়িয়ে বসা যায়। সেই রো-এর সিট পেতে আপনাকে টিকিটের ওপর আরও কিছু খরচ করতে হবে। সংসদীয় কমিটি বলেছে এটাও চলবে না। কারণ একই ফ্লাইটে একই ক্লাসে আসনের তারতম্যে ভাড়ার তারতম্য হলে তা সমানাধিকারের নীতি লঙ্ঘন করে।
আমি যা বলতে পারি এতদিন নিয়ম ছিল কোনও এয়ারলাইন্স যাতে অস্বাভাবিক হারে ভাড়া বাড়াতে না পারে। তা দেখবে এয়ারলাইন্সগুলোকে নিয়েই তৈরি করা একটা বডি। কিন্তু বলতে বাধ্য হচ্ছি সেল্ফ রেগুলেশনের প্রশ্নে শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছে তারা। তাই কড়া ব্যবস্থা প্রয়োজন। যা সংসদীয় কমিটির রিপোর্টে উঠে এসেছে। আসলে কী জানেন কোভিডের সময় থেকেই ছোট উড়ান সংস্থাগুলো চালাতে না পেরে এক এক করে বিদায় নেওয়া শুরু করে। যেসব ছোট উড়ান সংস্থা এখনও আছে। তাদের অবস্থা খুব ভালো নয়। যার ফলে ভারতের আকাশটা এখন কার্যত দুটো বড় বিমান সংস্থার হাতে চলে গেছে। আর তাই ভাড়ার নামে লুঠ চলছে। দেখুন ভোট এসে গেছে। পার্লামেন্ট বন্ধ। এখনই কিছু হবে কিনা বলা মুশকিল। তবে নতুন সরকার তৈরির পর আমরা ভালো কিছু আশা করতেই পারি। আরেকটা কথাও আমি বলব। ২০১৬ সালে সরকার ছোট শহর এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিমান যোগাযোগ চালু করার লক্ষ্যে উড়ান প্রকল্প নিয়ে এসেছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন তিনি হাওয়াই চটি পরা মানুষকে হাওয়াই জাহাজে ওড়ানোর ব্যবস্থা করবেন। প্লেনের ভাড়া এই হারে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকলে সেটা হবে কি।
এই দুনিয়ায় কত কীই-ই যে হয়। রাজশেখর বসু মানে পরশুরাম থাকলে বোধহয় বলতেন হয়। সবই হয়। জানতি পারো না। সত্যিই তো। এতদিন কি আমরা জানতাম যে রাশিয়া-ইউক্রেন থেকে বহু দূরে অন্য একটা মহাদেশে টানা যুদ্ধ চলছে রুশ ও ইউক্রেনীয় সেনার। হ্যাঁ, অবিশ্বাস্য শোনালেও সত্যি। সুদানে এই যুদ্ধ চলছে। সুদানের মাটিতে মারাও যাচ্ছেন রাশিয়া ও ইউক্রেনের মানুষ। এঁদের মধ্যে সেনারা যেমন রয়েছেন। তেমনই আছেন চুক্তিভিত্তিক ভাড়াটে যোদ্ধারা। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে আফ্রিকার বুকে রুশ- ইউক্রেন যুদ্ধের অজানা কথা। দেখুন, ২০২৩-এর মার্চ-এপ্রিল থেকে সুদানে সেনা ও আধাসেনার মধ্যে ক্ষমতার লড়াই শুরু হয়। যুদ্ধ শুরুর পর আধাসেনার কাছে কোণঠাসা হতে হতে এখন শুধু রাজধানী খার্তুমে পিঠ ঠেকিয়ে লড়াই করছে সে দেশের সেনা। সেনাপ্রধান তথা সুদানের শাসক আবদেল ফতাহ আল-বুরহান খুব বেশিদিন বোধহয় গদি টিকিয়ে রাখতে পারবেন না। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের দাবি, সুদানের মাটিতে সুদানি সেনা-আধাসেনা যতটা লড়ছে। ঠিক ততটাই লড়ছে রাশিয়া- ইউক্রেনও। ইউক্রেন সেনাপ্রধান বুরহানের পক্ষে। জেলেনস্কি ওদেশে সেনা ও অস্ত্র পাঠাচ্ছেন। ইউক্রেনের সেনারা সুদানের সেনার হয়ে লড়ছে। তাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। আর পুতিনের ভাড়াটে যোদ্ধা ওয়াগনার গ্রুপ সুদানের আধাসেনা র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সের হয়ে যুদ্ধে নেমেছে। ইউক্রেনও কোটি কোটি ডলারের বিনিময়ে অস্ত্র দিচ্ছে। রাশিয়াও অস্ত্র বেচে ডলার কামাচ্ছে। ছোট্ট গরিব দেশটা গত এক বছরে কয়েকশো কোটি ডলারের অস্ত্রই কিনেছে। হতদরিদ্র দেশে সুদানে আছে সোনার খনি। অধিকাংশ খনি এখন আধাসেনার কব্জায়। সেখানে রাশিয়ার মাইনিং ইঞ্জিনিয়াররা ঢুকে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। বুঝতেই পারছেন। সবাই আসলে লুঠছে। দেশটায় সরকারি কর্মীদের মাইনে বন্ধ। খাবার- জল-ওষুধ কিচ্ছু নেই। রোজ রেকর্ড সংখ্যায় শিশু অপুষ্টিতে মারা যাচ্ছে। কারও কিছুতেই কিছু এসে যায় না। আরও একটা কথা বলি। আমেরিকা সুদানের যুযুধান ২ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধেই যুদ্ধপরাধের অভিযোগ তুলেছে। সুদানে অস্ত্র পাঠানো নিষিদ্ধ করার কথা বলছে তারা। তবে বাস্তবটা হল সুদানে দুপক্ষের হাতেই যে অস্ত্র যাচ্ছে। তার পিছনে মার্কিন অস্ত্র ব্যবসায়ীদের ভূমিকা কম নয়। তাঁরা দেশের সরকারকে অন্ধকারে রেখে সুদানে ব্যবসা করছেন। এমনটা তো হতেই পারে না। তাই না? অর্থাত্ ব্যবসা মানে যেখানে মালকড়ি আছে। সেখানে ধ্বংস। শিশুমৃত্যু। মানবাধিকার সবই তুচ্ছ। আমি শুধু একটা কথা বলতে পারি। সুদানের মানুষ ভীষণ, ভীষণ কষ্টে আছেন। ভয়ে, আতঙ্কে আছেন। লোকালয়ে, ঘনবসতিতে গোলাগুলি চলছে, ট্যাঙ্কের গোলা পড়ছে, রকেট আছড়ে পড়ছে। দেশটার সাড়ে ৪ কোটি নাগরিকের মধ্যে কয়েক লক্ষ মানুষ শুধু ভাগ্যবান। তাঁরা অন্য দেশে পালাতে পেরেছেন। অবস্থা কতটা খারাপ আরও শুনবেন? সারা দেশে ৩০০ হাসপাতালের মধ্যে মাত্র ৫০টি হাসপাতালে কোনওমতে চিকিত্সা হচ্ছে। তাও শুধু গুলি বের করা ও মাইন ফাটলে আহত হওয়ার পর চিকিত্সা। এছাড়া দেশটায় আর কোনও চিকিত্সাই কার্যত হচ্ছে না। সুদান কেমন আছে সেটা বোঝাতে এটুকুই কি যথেষ্ট নয়? যুদ্ধ লাগা মানেই এইরকম সব ছবি তৈরি হওয়া। তবু যুদ্ধ বন্ধ হচ্ছে কই। যত দেখছি মনে হচ্ছে যেন লড়াইয়ের নতুন নতুন ফ্রন্ট খুলে যাচ্ছে। কৃষ্ণসাগর থেকে আফ্রিকা ঘুরে এসে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ এখন পৌঁছে গেছে বাল্টিকের তিরে।
এবার রুটি আর লিপস্টিকের গল্পের পালা। তুরস্কের রুটি। আর ইরানের লিপস্টিক। দুটো জিনিসই মানব সভ্যতার ইতিহাস নিয়ে গবেষণায় নতুন দরজা খুলে দিয়েছে। তুরস্কের কনয়া প্রদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে নানা প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন। সেখানে ক্যাটালাহউক নামে একটা আর্কিওলজিক্যাল সাইটে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ চালাচ্ছিলেন তুর্কি প্রত্নতত্ত্ববিদরা। কাদার ইটে তৈরি একটি বাড়ির খোঁজ পান তাঁরা। আর সেই বাড়ির ভিতর থেকেই মিলেছে বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো রুটি। পাঁউরুটি বলতে পারেন। কারণ মাইক্রোস্কোপে পরীক্ষায় দেখা গেছে রুটির মধ্যে রয়েছে ফারমেন্টেড স্টার্চ গ্র্যানিউলস। কেমিক্যাল পরীক্ষায় জানা গেছে জল এবং ময়দা দিয়ে তৈরি হয়েছিল এই রুটি। তৈরির সময় সেটা খুব নরমও ছিল। আর পরীক্ষায় জানা গেছে এই রুটির বয়স ৮ হাজার ৬০০ বছর। মানে স্টোন এজ শুরু হওয়ারও অনেক আগে। রুটির পাশে মিলেছে একটা ভাঙা উনুনও। দেখুন এখানে দুটো কথা বলার। আমরা সবাই জানি যে ৮০ খ্রিস্টাব্দে ভিসুভিয়াসের অগ্ন্যুত্পাতে পম্পেই নগরী ধ্বংস হয়ে যায়। দেড় হাজার বছর পর ছাই সরিয়ে যখন ধ্বংসস্তুপের খোঁজ মেলে। তখন দেখা যায় ছাইচাপা থাকায় খাবার-ফলমূল সব অবিকৃত অবস্থায় রয়ে গেছে। তুরস্কে তো তা হয়নি। তাহলে এই রুটি প্রায় অবিকৃত অবস্থায় মিলল কী করে। গবেষকরা জানিয়েছেন রুটিটি সেঁকা হয়নি। রুটির গায়ে খুব পাতলা একটা মাটির প্রলেপ দেওয়া ছিল। যাতে রুটি নষ্ট হয়ে না যায় সেজন্য। কিন্তু ভাবুন সেই মাটির প্রলেপ ৮ হাজার বছর ধরে খাবারটাকে প্রায় ঠিক চেহারায় ধরে রাখল কী করে। তাহলে কি বলতে হবে স্টোন এজের আগেও মানুষ খাবার সংরক্ষণ করতে জানত। দ্বিতীয় কথাটা হল এখনও পর্যন্ত মনে করা হয় আজ থেকে সাড়ে সাত হাজার বছর আগে মানুষ প্রথম রান্না করতে শিখেছিল। ইরানের পাঁউরুটির বয়স যদি সাড়ে ৮ হাজার হয়। তাহলে তো মানুষের রান্না শেখার ইতিহাস আরও এক হাজার বছর পিছিয়ে যাচ্ছে। তুরস্ক থেকে কিছুটা দূরে ইরান। ২০০১ সালে ইরানের জিরোফত এলাকায় মাটির নীচে কয়েকটা পাথরের তৈরি সরু বোতল খুঁজে পান প্রত্নতত্ত্ববিদরা। বোতলের ভিতরে ছিল লাল রঙের একটা পদার্থ। সম্প্রতি রেডিও কার্বন পরীক্ষায় জানা গেছে এটি আসলে বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো লিপস্টিক। বয়স ৩ হাজার ৭০০ বছর। খনিজ অক্সাইড হেমাটাইটের উপস্থিতিতে জিনিসটার রঙ হয়েছে লাল। সায়েন্টিফিক রিপোর্টস নামে এক জার্নালে এই গবেষণার খবর বেরিয়েছে। দেখুন লিপস্টিক শুধুই মহিলাদের সাজের জিনিস। এমন ভাবলে ভুল হবে। এর সঙ্গে একটা লম্বা ইতিহাস জড়িয়ে আছে। বিশেষ করে লাল লিপস্টিক নিয়ে তো বটেই। সে গল্প আরেকদিন আপনাদের শোনাবো। আমি শুধু ভাবছিলাম যে দেশটায় আজ মেয়েদের হিজাব ছাড়া রাস্তায় বেরনো বারণ। সেই দেশের মেয়েরাই কিনা সেই ব্রোঞ্জ এজেও ঠোঁট রাঙিয়ে রাস্তায় বেরোতেন। আরেকটা কথাও বলার। আজকের ইরাক। ইরান। সিরিয়া। তুরস্ক। এই সবটা নিয়েই ছিল প্রাচীন মেসোপটেমিয়া। মানবসভ্যতার প্রথম আঁতুড়ঘর। সেখান থেকেই মিলল প্রথম রুটি। আর প্রথম লিপস্টিক। আমাদের পূর্বপুরুষদের পদচিহ্ন খুঁজতে গিয়ে এই মাটি থেকেই হয়ত আগামীদিনে খোঁজ মিলবে আরও অনেক অনেক নতুন ঐশ্বর্যের।
বদলে যেতে পারে দুনিয়ার ভুগোল। বিশ্বে দীর্ঘতম নদীর নাম নীল। উত্স থেকে মোহনা ৭ হাজার ১০০ কিলোমিটার। ১১টি দেশের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে এই নদী। দ্বিতীয় স্থানে আমাজন। দৈর্ঘ্য ৭ হাজার কিলোমিটারের একটু কম। ৭টি দেশের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে সে। আর জলপ্রবাহের হিসেবে দুনিয়ার বৃহত্তম নদী আমাজন। সেখানে তার ধারে কাছে আর কেউ নেই। আমাজনের উত্স পেরুর আপুরিম্যাক রিভার। মানে সেটাই এখনও পর্যন্ত স্বীকৃত। আমাজন কোনও একটা সিঙ্গল রিভার নয়। অসংখ্য শাখানদী-উপনদী মিলিয়ে একটা বৃহত্তর আমাজন রিভার সিস্টেম। ফলে কোথা থেকে নদীর মেন স্ট্রিম শুরু সেটা নিয়ে অনেকে অন্য মত দেন। তাঁদের মতে আমাজনের উত্স আরও কিছু দূরে পেরুর মান্তারো রিভার। আর সেটা হলে দৈর্ঘ্যে নীলকে ছাপিয়ে যাবে আমাজন। নদীর প্রকৃত উত্স সন্ধানে আগামী এপ্রিলে শুরু হচ্ছে অভিযান। অভিযাত্রীরা সকলেই পোড় খাওয়া। তাঁরা ৭ হাজার কিলোমিটার নদীপথে সবটা নৌকোয় কভার করবেন। সঙ্গে থাকছে অত্যাধুনিক সব যন্ত্রপাতি। যা দিয়ে মাপা হবে নদী সত্যিই কতটা লম্বা। অতলান্তিকের পার থেকে আন্দিজ পর্যন্ত চলবে অভিযান। লাতিন আমেরিকার কাগজগুলোয় জোর লেখালেখি শুরু হয়ে গেছে। সবাই আমাজনের হয়ে গলা ফাটাচ্ছেন। আমরা আউটসাইডার হলেও রেজাল্ট কী আসে সেদিকে নজর রাখতে হবে বইকী। আর এসবের মধ্যে একটা চিন্তার খবরও এসেছে। সেটাও আপনাদের বলি। আমেরিকার সাপ্তাহিক নিউজ ম্যাগাজিন নিউজ উইকের এক রিপোর্ট নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে। সেখানে বলা হয়েছে আমাজনের সবচেয়ে বড় শাখানদী রিও নিগ্রোর জলস্তর রোজ ৮ ইঞ্চি করে কমে যাচ্ছে। ব্রাজিল সরকার জানিয়েছে আমাজনে জলের ধারা কমতে থাকায় নদীর আশপাশের ৬২টা গ্রামের মধ্যে ৫৯টিতে খরা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। ১৫টি জনপদের অবস্থা খুবই খারাপ। সেখানে সরকারি সাহায্য পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। ফলে আমাজন শুকিয়ে যাচ্ছে কিনা এই প্রশ্নটাও কিন্তু উঠতে শুরু করেছে।