ঝাড়গ্রাম: লালগড়ে ভোট মিটতেই গ্রেফতার ছত্রধর মাহাতো (Chhatradhar Mahato)। রাজধানী এক্সপ্রেস মামলায় এই গ্রেফতারি বলে এনআইএ (NIA) সূত্রে খবর। রবিবার কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ গ্রেফতার করে তাঁকে। ১১ বছর পর শনিবার নিজের কেন্দ্রে ভোট দিয়েছিলেন ছত্রধর। এরপর রবিবার কাকভোরে তাঁর বাড়িতে হানা দেয় তদন্তকারীদের ৩০ জনের একটি দল। গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। এদিনই আদালতে তোলা হবে ছত্রধরকে। ইতিমধ্যেই কলকাতায় আনা হয়েছে তাঁকে। এনআইএ স্পেশাল কোর্ট রবিবার বন্ধ। তাই ছত্রধরকে ব্যাংকশাল কোর্টের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পেশ করা হবে। অন্যদিকে ছত্রধরের আইনজীবীর বক্তব্য, এই গ্রেফতারি পুরোপুরি অনৈতিকভাবে, নিয়ম না মেনেই হয়েছে বলে জানিয়েছে ছত্রধরের পরিবার।
২০০৯ সালের ২৭ অক্টোবর। তখন ছত্রধর জেলে। ছত্রধরের মুক্তির দাবিতে ঝাড়গ্রামের বাঁশতলা স্টেশনে রাজধানী এক্সপ্রেস আটকানোর অভিযোগে ছত্রধরের বিরুদ্ধে মামলা হয়। সেই মামলারই পুনর্তদন্ত চেয়ে আদালতে গিয়েছিল এনআইএ। আদালত তাদের তা করার নির্দেশ দেয়।
এছাড়াও ২০০৯ সালে লালগড়ের সিপিএম নেতা প্রবীর মাহাতো খুনে ছত্রধর-সহ ৩৩ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের ধারায় মামলা হয়। ২০১০ সালে তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করে পুলিশ। সেই মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলেন ছত্রধর।
সূত্রের খবর, শনিবার রাতেই দিল্লির এনআইএ সদর দফতর থেকে নির্দেশ আসে ছত্রধর মাহাতোকে গ্রেফতার করা হবে। রাজধানী এক্সপ্রেস আটকানোর ঘটনায় ছত্রধরের ষড়যন্ত্রের বেশ কিছু তথ্য উঠে আসে বলে সূত্রের খবর। এরপরই শনিবার কলকাতা এনআইএ-এর একটি টিম রওনা দেয় লালগড়ের পথে। বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয় ভোরের দিকে।
আরও পড়ুন: ‘ইন্দিরা গান্ধীও আমার মান ভাঙাতে লোক পাঠাতেন’, মমতার ফোন-ফাঁসে মন্তব্য সুব্রতর
রবিবার সকালে কলকাতায় আনার পরই শুরু হয় জেরা পর্ব। নিজেদের হেফাজতে নিতে চেয়ে এনআইএ এ দিনই আদালতে তুলবে ছত্রধরকে। অন্য দিকে আরও একটি মামলায় নাম রয়েছে তাঁর। সিপিএম নেতা প্রবীর মাহাত খুনের মামলা। যেখানে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ সম্প্রতি নির্দেশ দিয়েছে, ছত্রধরকে সপ্তাহে তিনদিন সল্টলেকে এনআইএ দফতরে হাজিরা দিতে হবে। গত শুক্রবার তাঁকে হাজিরা দিতে বলা হয়েছিল। অর্থাৎ ভোটের আগের দিন তাঁর হাজিরা ছিল। ভোট মিটতেই গ্রেফতারি। আপাতত রাজধানী এক্সপ্রেসকাণ্ডে ছত্রধর মাহাতোকে গ্রেফতার করা হলেও পরবর্তীকালে প্রবীর মাহাতো খুনের মামলাতেও পদক্ষেপ করতে পারে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
এদিকে এই গ্রেফতারি প্রসঙ্গে ছত্রধর মাহাতর আইনজীবী কৌশিক সিনহা বলেন, “কেন এই গ্রেফতারি তার যথাযথ কোনও কারণ ছত্রধরের পরিবারকে জানানো হয়নি। হঠাৎই ভোররাতে এনআইএ-এর একটি দল এসে তাঁকে নিয়ে যায়। সবথেকে দুঃখজনক কেন এই গ্রেফতার সেটাই তাঁর পরিবারকে জানানো হল না। নতুন করে কোনও মামলা দায়ের হল কি না সেটা দেখতে হবে। কারণ ছত্রধরের বিরুদ্ধে কোনও গ্রেফতারি পরোয়ানা নেই। বিষয়বস্তু পুরোটা দেখে আমরা জামিন চাওয়ার বিষয়টি দেখব।”
যদিও এনআইএ সূত্রে খবর, নতুন কোনও মামলা নয়, পুরনো রাজধানী-মামলাতেই এই গ্রেফতারি। এনআইএ-এর তরফে দাবি, যেহেতু ছত্রধরের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে যেহেতু নির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ রয়েছে তাই গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়াও গ্রেফতার করা যেতে পারে। আর তা যে কোনও সময়, যে কোনও জায়গা থেকে।