কলকাতা উত্তর লোকসভা কেন্দ্রে এবার লড়াই যে জোর হবে তার আভাস প্রথম থেকেই মিলেছে। এই উত্তর কলকাতা নিয়ে তৃণমূলের অন্দরেই কত জল গড়াল। এ কেন্দ্রের তিনবারের সাংসদ তৃণমূলের সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনও শোনা যায়, এই আসনে এবার বরানগরের পদত্যাগী বিধায়ক তাপস রায় নাকি প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। এ নিয়েই এমন অশান্তি বাধে, তাপস রায় তৃণমূল ছেড়ে যোগ দেন বিজেপিতে। কারও কারও দাবি, তাপস নাকি এবার এ কেন্দ্রে বিজেপির মুখও হতে পারে। যদিও তাপস রায়ের দাবি, কখনওই তিনি এমন কোনও দাবি রাখেননি। এর কারণে দলত্যাগের কোনও প্রশ্নই নেই। তবে যাই হোক, এবার এ কেন্দ্রে লড়াই হবে জোরদার। সুদীপে 'অসন্তোষ' ২০০৯ থেকে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্য়ায় এখানকার সাংসদ। চারবারের বিধায়ক সুদীপ। তবে দলের অন্দরেই তাঁকে নিয়ে ক্ষোভের অভিযোগ মাঝেমধ্যেই উঠে আসে। এমনকী তৃণমূলের কুণাল ঘোষও সুদীপের এ আসন থেকে লড়াইয়ের বিরোধিতা করে বহুবার প্রকাশ্যে বলেছেন। দলেই যদি এমন লড়াই থাকে, স্বভাবতই তা বিরোধীদের বাড়তি অক্সিজেন জোগায়। বিজেপি মরিয়া এ আসন পেতে। বাকি দলগুলিও ঝাঁপাচ্ছে। এ কেন্দ্র যেন কলকাতার 'প্রাণকেন্দ্র' বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএম, ফরওয়ার্ড ব্লক, আরএসপি—সহ বিভিন্ন দলের রাজ্য দফতর অবস্থিত এই কলকাতা উত্তরে। শিয়ালদহ, বড়বাজার, কলেজ স্ট্রিট, ধর্মতলার মতো শহরের অন্যতম প্রাণকেন্দ্রও এই লোকসভা এলাকার মধ্যেই। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি যেমন এ কেন্দ্রের মধ্যে, তেমনই আরজিকর, এনআরএস, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, বেলেঘাটা আইডির মতো দেশজোড়া খ্যাত হাসপাতালও এখানেই। এখানেই মানিকতলা ইএসআই, শিয়ালদহ ইএসআই হাসপাতাল। হাতিবাগান থেকে আহিরিটোলা, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হেয়ার স্কুল, হিন্দু স্কুল, বেথুন কলেজ, স্কটিশ চার্চ— আরও কত নাম জড়িয়ে এ কেন্দ্রের সঙ্গে। সাতে সাত তৃণমূল কলকাতা উত্তর লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে চৌরঙ্গী, এন্টালি, বেলেঘাটা, জোড়াসাঁকো, শ্যামপুকুর, মানিকতলা, কাশীপুর-বেলগাছিয়া বিধানসভা কেন্দ্র। পরেশ পাল, নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়, শশী পাঁজা, অতীন ঘোষদের মতো শাসকদলের প্রথম সারির নেতারা এখানকার বিধায়ক। এখানে বিধানসভায় সাতে সাত তৃণমূল। ২০০৯ সালের ফলাফল ২০০৯ সালে এই লোকসভা কেন্দ্রে সিপিএমের প্রার্থী হন মহম্মদ সেলিম। সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূলের। ৪ লক্ষ ৬০ হাজার ৬৪৬ ভোটে জেতেন সুদীপ। সেলিম পেয়েছিলেন ৩ লক্ষ ৫১ হাজার ৩৬৮টি ভোট। সে বছর বিজেপির মুখ ছিল তথাগত রায়। মাত্র ৩৭ হাজার ৪৪টি ভোট পেয়েছিলেন। ২০১৪ সালে সেকেন্ড হয় বিজেপি তৃণমূল ২০১৪ সালে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ে ভরসা রাখলেও বিজেপি প্রার্থী করে রাহুল সিনহাকে। সুদীপ জেতেন ৩ লক্ষ ৪৩ হাজার ৬৮৭ ভোটে। রাহুল পেয়েছিলেন ২ লক্ষ ৪৭ হাজার ৪৬১টি ভোট। সিপিএমের রূপা বাগচীর প্রাপ্ত ভোট ছিল ১ লক্ষ ৯৬ হাজার ৫৩। তবে ২০১৪ সালে এ কেন্দ্রে কংগ্রেস, আপ, বিএসপি-ও প্রার্থী দেয়। এছাড়া নির্দলও ছিল প্রচুর। ২০১৯-এর ফলাফল ২০১৯ সালেও তৃণমূল ও বিজেপি প্রার্থী অপরিবর্তিত রাখে। একদিকে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, অন্যদিকে রাহুল সিনহা। সিপিএম প্রার্থী করেছিল কণীনিকা বোস ঘোষকে। সুদীপের প্রাপ্ত ভোট ছিল ৪ লক্ষ ৭৪ হাজার ৮৯১। রাহুল পান ৩ লক্ষ ৪৭ হাজার ৭৯৬। সিপিএমে পেয়েছিল ৭১ হাজার ৮০টি ভোট। নোটায় ভোট পড়ে ৬ হাজার ৭৩৬টি। তৃণমূল তৃতীয়বারের জন্য দখলে রাখে এই আসন। তবে এবার লড়াই আরও জমাটি। বিজেপি খেলা ঘোরাতে চাইবেই। তৃণমূলও চাইবে ধারা অব্যাহত রাখতে।