ভারতবর্ষ। সে কালেও, এ কালেও–যে দেশকে মাতৃমূর্তি হিসেবে পুজো করে এসেছেন অনেক দেশপ্রেমিক। ভারতমাতার মন্দিরও আছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। ‘মা কী ছিলেন, মা কী হইলেন’, এমন কথা সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় লিখেছিলেন তাঁর উপন্যাস ‘আনন্দমঠে’। বঙ্কিমচন্দ্রের আপন দেশে আজও কাগজে মুড়িয়ে যত্রতত্র ফেলে রেখে যান সদ্যজাত কন্যা সন্তানদের। এ যেন এক প্রহসন! কন্যা ভ্রুণ হত্যার নিদর্শন এ দেশে চলেই আসছে। সেই কারণেই ভারতে গর্ভস্থ্য সন্তানের লিঙ্গ জানা বেআইনি ঘোষিত করা হয়েছে।
মিঠুন চক্রবর্তীর কন্যা দিশানী চক্রবর্তীর জন্ম বৃত্তান্ত অনেকটা সে রকমই। দিশানীকে জন্মের সময় পরিত্যাগ করেছিলেন তাঁর আসল বাবা-মা। বাচ্চা মেয়েটাকে ময়লা ফেলার ডাস্টবিনে ফেলে আসা হয়। ভাগ্যের জোরে সেই বাচ্চা মেয়েটি হিংস্র পশুদের আক্রমণ থেকে রেহাই পেয়েছিল। তাঁকে উদ্ধার করা হয়েছিল ভাগ্যের কি দারুণ খেলা! একদিকে যেমন বাবা-মা এই কন্যা সন্তানকে চূড়ান্ত অবহেলায় ফেলে রাখেন ডাস্টবিনে, অন্যদিকে তাঁকে বুকে আগলে রেখে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী এবং তাঁর স্ত্রী যোগিতা বালি।
অবহেলিত একরত্তি দিশানীকে প্রথম দেখাতেই ভালবেসে ফেলেছিলেন মিঠুন-যোগিতা। তাঁদের তিন পুত্র সন্তান–মিমো, রিমো এবং নামাশি। কন্যা সন্তানের জন্য অনেক প্রার্থনা করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু প্রতিবারই পুত্র সন্তানের জন্ম হয়েছিল তারকা দম্পতির। দিশানীকে প্রথম দেখেই মিঠুন-যোগিতার মনে হয়েছিল, যে ঈশ্বরই তাঁদের কাছে পাঠিয়েছে এই ছোট্ট পরীকে।
কলকাতায় জন্ম হয় দিশানীর। সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়, এক সদ্যজাত কন্যা শিশুকে তার পরিবার ময়লা রাখার বিনে রেখে গিয়েছে। অনেকেই সেই সদ্যজাতর কান্না ডাস্টবিন থেকে শুনেও তাঁকে নিরাপদ আশ্রয় দেয়নি। এই খবর মিঠুন-যোগিতার কাছে পৌঁছতেই তাঁরা ছুট্টে আসেন। সঙ্গে-সঙ্গে তাঁকে দত্তক নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। প্রথম মিঠুনই চেয়েছিলেন দিশানীকে কন্যা হিসেবে দত্তক নিতে। যোগিতা স্বামীর সেই ইচ্ছাকে সমর্থন জানিয়েছিলেন প্রাণভরে।
জন্মেই ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায় দিশানীর। জন্মদাত্রী পিতা-মাতার থেকে বিচ্যুত এই কন্যার রাজকীয় জীবন শুরু হয় মিঠুনের প্রাসাদসম বাড়িতে। তিন ভাই তাঁকে আগলে রাখেন। দিশানীর লেখাপড়া হয় বিদেশের মাটিতে। লস অ্যাঞ্জেসে উচ্চশিক্ষা লাভ করেন দিশানী। নিউ ইয়র্ক ফিল্ম অ্যাকাডেমি থেকে অভিনয় নিয়ে লেখাপাড়া করেছেন তিনি। ছোট থেকেই নাকি পালিত বাবা-মাকে দেখেই অনুপ্রাণিত ছিলেন দিশানী। তাঁর প্রিয় নায়ক সলমন খান। বলিউড নয়, শুরুতেই হলিউডে অভিনয় করতে শুরু করেন তিনি। ছবির নাম ‘দ্য গেস্ট’।