ট্রোলাররা ট্রোল করে সংসার চালায়, ওদের পাত্তা দিই না: শ্রাবন্তী

আসন্ন ছবি 'ছবিয়াল', ছেলে ঝিনুক এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় লাগাতার ট্রোলিং নিয়ে মুখ খুললেন অভিনেত্রী।

ট্রোলাররা ট্রোল করে সংসার চালায়, ওদের পাত্তা দিই না: শ্রাবন্তী
শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়।
Follow Us:
| Updated on: Dec 10, 2020 | 5:39 PM

তাঁকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় গত এক মাস ধরে চলছে কদর্য ট্রোলিং। হাতে একগুচ্ছ কাজ থাকলেও কাজের চেয়ে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনই হঠাৎ চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে।  তিনি শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায় (srabanti chatterjee)। টলিউডের ‘মিষ্টি মেয়ে’। এ যাবৎ ব্যক্তিগত জীবনের উথালপাথাল নিয়ে চুপ ছিলেন তিনি। প্রশ্ন করা হলে এড়িয়ে গিয়েছেন। মুখ খুললেন টিভিনাইন বাংলার সামনে। আসন্ন ছবি ‘ছবিয়াল’, ছেলে ঝিনুক এবং ট্রোলিং নিয়ে নিজের মনের কথা জানালেন শ্রাবন্তী।

কাঁধ ছোঁয়া চুল, গোলাপি লিপস্টিক, আর প্রায় নো মেক-আপ লুকে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালেন তিনি। এত কাজ… এত ব্যস্ততা… সামলাচ্ছেন কী করে? হাল্কা হেসে শ্রাবন্তীর উত্তর, “লকডাউনে এতগুলো মাস কাজ বন্ধ ছিল। আমার পরিবারে একমাত্র রোজগেরে আমিই। কাজ শুরু হতেই তাই ফুলফ্লেজেডে শুরু করে দিয়েছি। ছুটি একদম পাচ্ছি না। জীবনে আর শনিবার-রবিবার বলে কিছু নেই।”
তিনি জিম খুলেছেন সম্প্রতি, মধ্যমগ্রামের স্টার মলে। চাইলেই শহরের পাঁচতলা শপিংমল হতে পারত তাঁর নয়া জিমের আস্তানা। কথায় কথায় জানা গেল, মফঃস্বলের মানুষও যাতে সার্টিফায়েড জিমের মজা উপভোগ করতে পারেন, সে কারণেই তাঁর ওই জায়গায় জিম খোলা। লকডাউনের মধ্যেই জিম খুলেছিলেন শ্রাবন্তীর স্বামী রোশন। সেই জিমের ইন্টেরিয়র থেকে শুরু করে, খুঁটিনাটি নিজের হাতে সাজিয়েছিলেন শ্রাবন্তী। যদিও এখন পরিস্থিতি আলাদা। সম্পর্ক আগের মতো নেই তা রোশন প্রকাশ্যে এনেছিলেন আগেই। জিমের পাল্টা জিম? প্রতিযোগিতা? শ্রাবন্তী যদিও জানাচ্ছেন, লকডাউনে যেহেতু মানুষ অনেকদিন জিম বন্ধ থাকার কারণে যেতে পারেননি, আর ভালমন্দ খেয়ে খানিক ওজনও বাড়িয়ে ফেলেছেন, সে জন্যই তাঁর এই জিমের আইডিয়াটা।

 

লকডাউনের পর এখনও পর্যন্ত যে ১৩টি বাংলা ছবি মুক্তি পেয়েছিল তাতে শ্রাবন্তীকে দেখা যায়নি। তবে এ বার দেখা যাবে। ডিসেম্বরের ১১ তারিখ মুক্তি পাচ্ছে তাঁর ছবি ছবিয়াল। পরিচালনায় রয়েছেন মানস বসু। এই ছবিতেই শ্রাবন্তীর বিপরীতে প্রথমবার থাকছেন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়। শ্রাবন্তী এ ছবিতে স্বপ্ন, এক অলিখ কল্পনা। ভেঙে বলতে চাইলেন না। আমন্ত্রণ জানালেন ছবিটি হলে গিয়ে দেখার। কথায় কথায় উঠে এল ছেলে ঝিনুকের প্রসঙ্গ। ছেলে তাঁর বন্ধু। বেস্ট ফ্রেন্ড। মায়ের মন খারাপ থেকে ভাল থাকার একমাত্র অবলম্বন। টিনেজার ঝিনুক এখনই হ্যান্ডসাম হাঙ্ক। ঢেউ খেলানো চুল, ট্রেন্ডি জ্যাকেটে মিস্টার কুল, মায়ের মতো সেও কি আসছে অভিনয়ে? প্রশ্ন করতেই দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে এই প্রথম বার প্রাণখোলা হাসলেন তিনি। বললেন, “ওর মিউজিকে বেশি ইন্টারেস্ট। পপ-রক। এ সবই করতে থাকে সারাদিন। এখন তো অনলাইনে ক্লাস চলছে। ও এখনও মনে হয় না অভিনয়ে আসার ব্যাপারে কিছু ডিসাইড করেছে। তবে ও যে পেশায় বেছে নিক না কেন মা হিসেবে আমি সবসময় ওর পাশে আছি। ”


ছেলেকে পাশে পেলেও সোশ্যাল মিডিয়ার একটা বড় অংশ পাশে দাঁড়ায়নি শ্রাবন্তীর। প্রথম বিচ্ছেদের পর থেকেই একের পর এক ব্যক্তিগত আক্রমণ ধেয়ে এসেছে তাঁর দিকে। কখনও অযাচিত ‘ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট’ আবার কখনও বা তাঁর বৈবাহিক জীবনের পোস্টমর্টেম। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়িয়েছে একের পর এক ফেক নিউজ। বানানো হয়েছে মিম। তাঁর নিজের কথা শুনতে চায়নি কেউই। কষ্ট হয় না? “হয়, হলে কাঁদি”। আর প্রচন্ড রাগ হলে? “চুপ করে যাই”, ছোট্ট উত্তর তাঁর।

এত পজেটিভ থাকেন কী করে? কীভাবে সামলান সোশ্যাল টক্সিসিটি? চোখে চোখ রেখে তাকালেন শ্রাবন্তী। ক্যামেরার দিকে মুখ করে বলিষ্ঠ গলায় বললেন, “যারা ট্রোল করে তাদেরও তো সংসার চালাতে হবে। ভিউ বাড়লে টাকা আসবে। সেটাই চলে আসছে। পাত্তা দিই না জাস্ট। সবাইকে বলব ভাল থাকো, ভাল মানুষদের পাশে থাকো। যারা খারাপ তাদেরকে সরিয়ে দাও। নিশ্চয়ই বুঝতে পারবে কে ভাল, কে খারাপ। একটাই জীবন। আনন্দে থাকো। সম্মান দাও। সম্মান পাবে।”

চোখে পড়ল তাঁর ফুল হাতা টিশার্টে বড় বড় করে লেখা রয়েছে ‘কিপ ইওর হেড আপ’, মাথা উঁচু করে বাঁচুন । শুধুই ক্যাপশন নাকি ভিতরে রয়েছে কোনও গুঢ় বার্তা? এই ঠিক কয়েক মাস আগে নেটিজেনের কাঠগড়ায় রাতারাতি ভিলেন হয়ে যাওয়া রিয়া চক্রবর্তী গ্রেফতারের দিনে এমনই এক ফুলস্লিভ কালো রঙের একটি টিশার্ট পরে ঢুকেছিলেন এনসিবি দফতরে। মনে পড়ছে? তাতে বড় বড় করে লেখা ছিল, “রোজেস আর রেড/ ভায়োলেটস আর ব্লু/ লেটস স্ম্যাশ দ্য পেট্রিয়ার্কি/ মি এন্ড ইউ”। রিয়ার উপর ক্রমাগত হওয়া সাইবার বুলিংয়ের প্রতিবাদে রিয়ার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন বিদ্যা বালান দিয়া মির্জারা। তাতেও পরিবর্তন হয়নি। মজ্জায় গাঁথা পুরুষতন্ত্র চোখ রাঙানি বন্ধ হয়নি আজও। থামেনি ট্রোলিং-শেমিং। যদিও তাতে বিশেষ ভাবিত নন শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়। তিনি বাঁচেন নিজের শর্তেই।