এখনও শোক কাটিয়ে উঠতে পারেননি অনেকেই। এখনও বিশ্বাস করে উঠতে পারেননি, যে অভিনেতা অভিষেক চট্টোপাধ্য়ায় আর এই পৃথিবীতে নেই। এখনও তাঁর স্মৃতি হাতড়ে চলেছে মানুষ। এর মধ্যেই ঘটে গেল এক অদ্ভুত ঘটনা। একটি পোস্টার ভাইরাল হয়েছে নেট দুনিয়ায়। সেই পোস্টারে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়া হয়েছে সদ্য প্রয়াত অভিনেতাকে। পোস্টারেই লেখা হয়েছে “….অকাল প্রয়াণে আমি গভীর ভাবে শোকাহত, তাঁর বিদেহী আত্মার চির শান্তি কামনা করি ও পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই”। এই ‘আমি’ হলেন কৃষ্ণনগর শহরের তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি শিশির কর্মকার। পাশে করজোড়ে শিশিরবাবুর ছবি। এবার প্রশ্ন জাগতেই পারে, এতে ‘ভাইরাল’ হওয়ার মতো কী আছে? আছে… আলবাত আছে! নেট ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রোলের ঝড় বয়ে যাচ্ছে যে কারণে, তা হল অভিষেকের ছবির নীচে লেখা রয়েছে ‘ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী’। ভাবতে পারছেন, অভিনেতার পরিচয় দেওয়া হয়েছে ‘ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী’ হিসেবে। নেটিজ়েনরা ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন স্বাভাবিকভাবেই। বলেছেন, “ইয়ার্কি হচ্ছে…!”
পোস্টারটি বিপুলভাবে শেয়ার হয়েছে। বিপুলভাবে ট্রোল হচ্ছে। একজন লিখেছেন, “এই নোংরামির মানেটা কী? একটা জলের মতো পরিষ্কার মানুষ তিনি। মারা গিয়েছেন। তাঁকে সম্মান জানাতে পারেন না তো অসম্মান করার অধিকার কে আপনাকে দিল?”
পরিচালক অনীক দত্ত-ও গর্জে উঠেছেন। প্রতিবাদ জানিয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। পোস্টার শেয়ার করে লিখেছেন, “অশিক্ষার আর একটি নিদর্শন। শ্রদ্ধা জানানো না অশ্রদ্ধা?”
এরকম ভূরি-ভূরি বিদ্রূপ আসছে পোস্টারকে কেন্দ্র করে। এসব কীভাবে ঘটল? কেনই বা এই উদাসিনতা? বিষয়টি কি ইচ্ছাকৃতভাবে ঘটানো হয়েছে? নাকি কেউ চক্রান্ত করেছে? পোস্টারে করজোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা কৃষ্ণনগরের তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি শিশির কর্মকারের কি এ ব্যাপারে কিছুই বলার নেই? বিষয়টি TV9 বাংলার নজরে সবার প্রথমে আসা মাত্রই দ্রুত যোগাযোগ করে শিশিরবাবুর সঙ্গে। ফোন তুলেই তিনি উগড়ে দিলেন রাগ, ক্ষোভ। বললেন… এ ‘কর্ম’ কার?
ফোনের ওপারে শিশির কর্মকার বললেন, বিষয়টিকে মোটেও হাল্কাচ্ছলে নেননি। তিনি বলেছেন পুলিশের কাছে যাবেন। নালিশ করবেন। তাঁর ভাবমূর্তি নষ্ট করা হয়েছে। কিন্তু কে করল এমন কাজ? কৃষ্ণনগরের তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি বলেছেন, “নদিয়ায় ডিজি বাংলা চ্যানেল আছে। যার নাম দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোটের আগে ওর সঙ্গে আমার একটা চুক্তি হয়েছিল – তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করবে। যাতে পুরসভার ভোট জিততে পারি। অর্থনৈতিকভাবে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলাম। ভোটের পর আমি বিষয়টাকে বন্ধ করে দিতে বলেছিলাম। কিন্তু আমার কথা শোনেননি। বন্ধ করেননি। পরিবর্তে দেখছি এই ধরনের নোংরামি করেছে। ইচ্ছাকৃতভাবে এটা করেছেন। আমার যেটা মনে হচ্ছে – উনি কারও হয়ে কাজটা করেছেন। মনে হয় রাজনৈতিক বিরোধীদের কথা শুনে আমার বিরুদ্ধে এরকমটা করেছেন। আমার সম্মানহানী করার চেষ্টা করেছেন। আমি আজ থানায় যাচ্ছে। নালিশ জানাব।”
বিষয়টি নিয়ে শিশিরবাবু টেলিফোনেও কথা বলেছিলেন দেবাশিসবাবুর সঙ্গে। শিশিরবাবু TV9 বাংলাকে সেই কথাও বলেছেন, “আমি সরাসরি ফোন করেছিলাম। সরাসরি জিজ্ঞেস করেছিলাম। উনি বলেছেন, ভুল হয়েছে। এটা তো ভুলের কথা নয়। এত বড় ভুল কেউ করে না। আমি বলেছি, যে ভাবে ফেসবুকে দিয়েছেন, ফেসবুকেই আপনাকে ক্ষমা চাইতে হবে। সেই ক্ষমাও ওরা চেয়েছে ডিজি বাংলার নাম দিয়ে। তা সত্ত্বেও আমি থানায় নালিশ জানাতে চাই। কারণ, আমার মনে হয় এটা ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছুই নয়। ওরা আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করেছে। এটা আমি কিছুতেই বরদাস্ত করব না।”