Pinaka: ‘শিবের ধনুকে’ থরথরিয়ে কাঁপে শত্রুরা, কেন ভারতের এই অস্ত্র কিনতে এত কাড়াকাড়ি?

ঈপ্সা চ্যাটার্জী |

Nov 13, 2024 | 3:31 PM

Indian Army: পিনাকের পাল্লা আগে ছিল ৪০ থেকে ৪৫ কিলোমিটার। এখন সেটা বেড়ে হয়েছে ৭৫ থেকে ৯০ কিলোমিটার। আর ট্রাকে চাপিয়ে সহজেই একে যে কোনও জায়গা থেকে যে কোনও জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায়। উপরন্তু অস্ত্র উন্নত হলেও দাম তেমন বাড়েনি।

নয়া দিল্লি: আরও শক্তিশালী হচ্ছে ভারতীয় সেনা। আগেই ফ্রান্স থেকে রাফাল কিনেছে ভারত, এবার কিনতে চলেছে পিনাক। কী এই অস্ত্র জানেন? মাল্টি ব্যারেল রকেট লঞ্চার। তাও আবার ১০০ শতাংশ ভারতীয় প্রযুক্তিতে তৈরি।

পুরাণমতে শিবের ধনুকের নাম পিনাক। রবি ঠাকুর লিখেছিলেন পিনাকেতে লাগে টঙ্কার। আমাদের
এই পিনাকের টঙ্কার লেগেছে আর্মেনিয়ার যুদ্ধক্ষেত্রে। আর সে আওয়াজটা বোধহয় ফরাসি সেনার কানে পৌঁছে গিয়েছে। তাই এত আগ্রহ। প্রতিরক্ষায় আত্মনির্ভরতার পথে ভারত যে আস্তে আস্তে অস্ত্রের বাজারে গ্লোবাল এক্সপোর্টার হয়ে উঠছে,  সে কথা সকলের জানা। ফ্রান্সের মতো একটা প্রথম বিশ্বের উন্নত দেশ। সামরিক দিক থেকে অত্যন্ত শক্তিশালী। পরমাণু শক্তিধর দেশ। সেই দেশে,  ভারতের তৈরি যুদ্ধাস্ত্র বিক্রির জন্য যাচ্ছে।

পিনাক হল ১০০ শতাংশ ভারতীয় প্রযুক্তিতে তৈরি মাল্টি ব্যারেল রকেট লঞ্চার। সহজভাবে বলতে গেলে, মেশিনগান থেকে যেমন গুলিবৃষ্টি হয়, তেমনই মাল্টি ব্যারেল রকেট লঞ্চার থেকে রকেটবৃষ্টি হয়। পিনাক মাত্র ৪৫ সেকেন্ডের মধ্যে পরপর ১২টা রকেট ছুড়তে পারে। শত্রুসেনাকে টার্গেট করার জন্য মেশিনগান। আর শত্রুর ঘাঁটি উড়িয়ে দেওয়ার জন্য মাল্টি ব্যারেল রকেট লঞ্চার।

এই রকেট লঞ্চার প্রথম তৈরি করে ডিআরডিও। লাইসেন্স নিয়ে এখন একাধিক বেসরকারি সংস্থাও পিনাক বানায়। কার্গিল যুদ্ধে পাহাড়ের ওপরের পাক সেনার বাঙ্কার ওড়াতে ভারত প্রথম এর ব্যবহার করেছিল। এখন এই অস্ত্র আরও অনেক অনেক উন্নত হয়েছে। আগে, একটা ইউনিট ১০ বছর ব্যবহার করা যেত। এখন ২০ বছর পর্যন্ত স্বচ্ছন্দে ব্যবহার করা যায়।

পিনাকের পাল্লা আগে ছিল ৪০ থেকে ৪৫ কিলোমিটার। এখন সেটা বেড়ে হয়েছে ৭৫ থেকে ৯০ কিলোমিটার। আর ট্রাকে চাপিয়ে সহজেই একে যে কোনও জায়গা থেকে যে কোনও জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায়। উপরন্তু অস্ত্র উন্নত হলেও দাম তেমন বাড়েনি। সেটাও অবশ্যই ফ্রান্সের আগ্রহের অন্যতম একটা কারণ। ফ্রান্সকে পিনাক বিক্রি করা নিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক এখনও সরাসরি কিছু জানায়নি।

গত জানুয়ারি মাসে ভারতে আসেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁ। ১০০ শতাংশ প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে দু-দেশ যৌথভাবে হেলিকপ্টার এবং পরমাণু শক্তিচালিত ডুবোজাহাজ তৈরি করবে বলে তখন ঠিক হয়। আন্ডার ওয়াটার ড্রোন, যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন তৈরি নিয়েও কথা হয়। এরপর সেপ্টেম্বরে ফ্রান্সে যান জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। তারপর ওদেশে যান চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল অনিল চৌহান। সূত্রের খবর, এই সবকটা সফরেই ভারতের কাছ থেকে পিনাক মাল্টি ব্যারেল রকেট লঞ্চার সিস্টেম কেনার ব্যাপারে আগ্রহ দেখায় ফ্রান্স। আর তারপর দিনকয়েক আগেই ফরাসি সেনার ব্রিগেডিয়ার পদমর্যাদার অফিসার স্টিফেন রিচৌ ভারত-ফ্রান্স ডিফেন্স মিটে যোগ দিতে দিল্লি আসেন। সেখানে তিনি বলে যান, ফরাসি সেনার প্রচুর এমবিআরএল দরকার।

ভারতের পিনাক খুবই উন্নত। ভারত সেনার জন্য পিনাক কিনতে খুবই আগ্রহী। নাইজিরিয়া, ইন্দোনেশিয়ার মত একাধিক দেশ আগেই শিবের ধনুক কিনতে চেয়েছিল। এবার লাইন লাগাল ফ্রান্সও। এবার শুরুতে যে পিনাকেতে লাগে টঙ্কারের কথা বলছিলাম, সে প্রসঙ্গে আসি। এক ডিফেন্স এক্সপার্ট বলেন, পূর্ব ইউক্রেনে রুশ ফৌজ লাগাতার মাল্টি ব্যারেল রকেট লঞ্চার সিস্টেম ব্যবহার করে যাচ্ছে। যার সামনে জেলেনস্কির সেনাকে অসহায় লাগছে। সেটা দেখেই ফরাসি সেনার মনে হয়েছে এমন অস্ত্র তাদের হাতে থাকা খুবই দরকার। আর পিনাকের কার্যকারিতা তারা দেখে আর্মেনিয়ার যুদ্ধে।

দুই সাবেক সোভিয়েত দেশ আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান, সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর আলাদা হয়ে যায়। আজারবাইজানে মুসলিমদের সংখ্যা বেশি। আর্মেনিয়ায় খ্রিস্টানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। কিন্তু, আবার দু-দেশের সীমান্ত এলাকায় আজারবাইজানের মধ্যে নাগোরনো-কারাবাখ নামে সাড়ে ৪ হাজার বর্গ কিলোমিটার একটা অঞ্চল রয়েছে, যেখানে খ্রিস্টানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাঁরা আর্মেনিয়ার সঙ্গে জুড়তে চান। আজারবাইজানে থাকতে চান না। নাগোরনো-কারাবাখের খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের আবার নিজস্ব মিলিশিয়াও আছে। সবমিলিয়ে সেই ২০২০ সাল থেকেই চলছে যুদ্ধ। আগে পুতিন দু-দেশকে সামলে-সুমলে রাখতেন। কিন্তু, তিনি এখন ইউক্রেনে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় এরা তেড়েফুঁড়ে যুদ্ধে নেমে পড়েছে। আর এই যুদ্ধে আজারবাইজানের বিরুদ্ধে আর্মেনিয়ার অন্যতম হাতিয়ার ভারতের পিনাকা রকেট লঞ্চার। পিনাকা ব্যবহার করে আর্মেনিয়ার সেনা এতটাই সন্তুষ্ট যে এইবারে তারা ভারতের কাছ থেকে তেজস যুদ্ধবিমানও কিনতে চাইছে। আর সেই ডিল যদি হয়ে যায়, তাহলে, আর্মেনিয়া-আজারবাইজান সীমান্তে আমরা ভারত-চিনের একটা টক্করও দেখতে পাওয়া যাবে।