গুয়াহাটি: ত্রিকোন প্রেম, অন্তরঙ্গ ছবি তুলে হুমকি, আর তার জেরে অসমের গুয়াহাটির একটি অভিজাত হোটেলে খুন হলেন পুনের এক ব্যবসায়ী। আর তাঁকে খুন করার অভিযোগে সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি), কলকাতার এক দম্পতিকে গ্রেফতার করল গুয়াহাটি পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, নিহত ওই ব্যবসায়ীর নাম সন্দীপ কাম্বলি, বয়স ৪২ বছর। গুয়াহাটির অভিজাত হোটেলে তাঁকে মৃত অবস্থায় পাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই, এই হত্যা রহস্যের সমাধান করে পুলিশ। কলকাতায় পালিয়ে আসার আগেই গ্রেফতার করা হয় অঞ্জলি সাউ এবং তাঁর প্রেমিক বিকাশ সাউকে।
পুলিশি তদন্তে জানা গিয়েছে, কলকাতা বিমানবন্দরের এক রেস্তোরাঁয় কাজ করত বছর ২৫-এর অঞ্জলি সাউ। -এর সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সম্প্রতি তাঁর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল পুনের গাড়ি ব্যবসায়ী সন্দীপ কাম্বলির। গত কয়েক মাস ধরে অঞ্জলিকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিলেন সন্দীপ। তাতে রাজি ছিল না অঞ্জলী। কারণ, আগে থেকেই বিকাশ সাউ নামে আরেকজনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল তার। সন্দীপের সঙ্গে সে সব সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল। কিন্তু, সন্দীপ তা মানতে পারেনি। তার উপর, সন্দীপের কাছে অঞ্জলির বেশ কিছু অন্তরঙ্গ ছবিও ছিল। গুয়াহাটির পুলিশ কমিশনার দিগন্ত বোরা বলেছেন, “মহিলা তাঁর সঙ্গে সব সম্পর্ক শেষ করলেও, তাঁর প্রতি ওই ব্যবসায়ীর চরম অধিকারবোধ ছিল। তিনি মহিলাকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকেন। এদিকে, বিকাশ সাউ নামে অপর এক ব্যক্তির সঙ্গে মহিলার আগে থেকেই সম্পর্ক ছিল।”
সম্প্রতি বিকাশকে, সন্দীপ কাম্বলি সম্পর্কে সব কথা জানায় অঞ্জলি। তিনি তাকে বিয়ের জন্য চপ দিচ্ছেন এবং তাঁর কাছে অঞ্জলির অন্তরঙ্গ ছবি আছে, তাও জানায়। এরপরই, অঞ্জলি এবং বিকাশ, সন্দীপ কাম্বলির কাছ থেকে ওই ছবিগুলি কেড়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করে। কারণ, বিকাশ বুঝেছিল, ছবিগুলি উদ্ধার করতে না পারলে, বিকাশকে কিছুতেই পিছু ছাড়া করা যাবে না। প্রাথমিকভাবে, সন্দীপ কাম্বলি এবং অঞ্জলি সাউ ঠিক করেছিলেন, তাঁরা কলকাতা বিমানবন্দরেই দেখা করবেন। কিন্তু পরে সন্দীপ কাম্বলি, অঞ্জলিকে গুয়াহাটিতে আসতে বলেন। জানান, সেখানকার ব়্যাডিসন ব্লু হোটেলে তিনি দুজনের জন্য একটি রুম বুক করেছেন। এরপর, ওই একই পাঁচ তারা হোটেলে আলাদা একটি রুম বুক করে বিকাশও।
৪ ফেব্রুয়ারি গুয়াহাটির ওই হোটেলে সন্দীপ ও অঞ্জলির দেখা হয়। কিছু পরে, বিকাশও তাদের হোটেলের ঘরে আসে। ত্রিকোন প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে তিনজনের মধ্যে তীব্র বাদানুবাদ হয়। সন্দীপ কাম্বলিকে ওই ছবিগুলি মুছে ফেলার জন্য চাপ দেয় বিকাশ এবং অঞ্জলি। সন্দীপ রাজি না হওয়ায়, তারা তাঁর মোবাইল ফোনটি কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এই নিয়ে বিকাশ এবং সন্দীপের মধ্যে মারামারি শুরু হয়েছিল। এক পর্যায়ে বিকাশের মারে অজ্ঞান হয়ে যান সন্দীপ। ডাকাডাকি করেও সাড়া না মেলায়, সন্দীপকে ওই অবস্থায় ফেলে ঘটনাস্থল থেকে পালায় আতঙ্কিত বিকাশ ও অঞ্জলি। পুলিশ কমিশনার দিগন্ত বোরা বলেছেন, “সোমবার দুপুর আড়াইটার দিকে, বিকাশ এবং সন্দীপের মধ্যে ঝগড়া হয়। সন্দীপের মোবাইল ফোন কেড়ে নিতে চেয়েছিল বিকাশ ও অঞ্জলি। ওই ফোনে অঞ্জলি এবং সন্দীপ কাম্বলির কিছু অন্তরঙ্গ ছবি রয়েছে। হাতাহাতির সময়, সন্দীপ জখম হয়ে মাটিতে পড়ে গিয়েছিল। পরে তাঁর মৃত্যু হয়।”
পুলিশ আরও জানিয়েছে, ঘটনার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হোটেলের কর্মীরা পুলিশে খবর দিয়েছিলেন। ফলে দ্রুত তদন্ত শুরু করতে পেরেছিল পুলিশ। তারা সিসিটিভি ফুটেজ, গেস্ট লিস্ট এবং বিমানবন্দরে কোন কোন যাত্রীরা যাচ্ছেন, তার তালিকা খতিয়ে দেখে। তারপরই বিকাশ ও অঞ্জলিকে শনাক্ত করা হয়। রাত সোয়া নটায় কলকাতায় ফেরার উড়ান ছিল তাদের। তার কয়েক ঘন্টা আগে, সন্ধ্যা সাড়ে ছয়াতেই গুয়াহাটির আজরা এলাকা থেকে বিকাশ এবং অঞ্জলিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এই ঘটনার আরও তদন্ত করা হচ্ছে। অঞ্জলি ও বিকাশকে জেরা করছেন পুলিশ আধিকারিকরা।