কমলেশ চৌধুরী ও শুভেন্দু হালদারের রিপোর্ট
কলকাতা: দুর্গা পুজোয় বৃষ্টির আশঙ্কা থাকলেও, মোটামুটি শুকনো আবহাওয়াতেই পুজো কেটেছে বাঙালির। কিন্তু কালীপুজোর আগেই আবহাওয়ার বড় পরিবর্তনের আশঙ্কা। রক্তচক্ষু নিয়ে হাজির হচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’। ইতিমধ্যেই ওড়িশা ও বাংলার উপকূলে ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে ওড়িশা-বাংলার কাছে পৌঁছবে ‘দানা’। তবে বুধবার থেকেই আবহাওয়ার পরিবর্তন হতে শুরু করবে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া থাকবে উপকূলে। ঝড় কোথায় আছড়ে পড়বে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস বলছে, ১২০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিবেগে বইতে পারে ঝড়। ফলে সমুদ্র হলে উত্তাল। মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। ২০০৯ সালে আয়লা ঘূর্ণিঝড়েরও গতিবেগ ছিল ১২০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা। তাই আবারও ঝড়ের প্রভাবে সব তছনছ হয়ে যেতে পারে কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রাত কাটাচ্ছেন উপকূলবর্তী এলাকার বাসিন্দারা।
‘দানা’ ঘূর্ণিঝড়ের আতঙ্কে ত্রস্ত সুন্দরবনের উপকূল এলাকা। আজ, সোমবার থেকে আগামী শনিবার পর্যন্ত মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে, সেই সঙ্গে মৎস্য দফতরের পক্ষ থেকে সোমবার সন্ধ্যার মধ্যে সব মৎস্যজীবী ট্রলারকে উপকূলে ফিরে আসতে বলা হয়েছে। একটানা তিন দিন ভারী বৃষ্টি হতে পারে, সঙ্গে ঝড়। পূর্বাভাসে এমনটাই বলা হয়েছে। বাড়তে পারে সমুদ্র ও নদীর জলস্তর।
জেলার সুন্দরবন উপকূলে বিশেষ সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা প্রশাসনও প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। সুন্দরবন পুলিশ জেলার পক্ষ থেকে উপকূলবর্তী সাগর, নামখানা, ফ্রেজারগঞ্জ, বকখালি, পাথরপ্রতিমা ও রায়দিঘি এলাকায় মাইক নিয়ে প্রচার করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে কাকদ্বীপ মহকুমার সাগর, কাকদ্বীপ, পাথরপ্রতিমা ও নামখানা ব্লকে সাইক্লোন সেন্টার খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বাঁধের কাছে বসবাসকারী বাসিন্দাদের ধীরে ধীরে বাড়ি থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে উচুঁ এলাকা বা সাইক্লোন সেন্টারে আশ্রয় নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কাকদ্বীপ মহকুমা শাসকের দফতরে ২৪ ঘন্টার কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। এই দুর্যোগ মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সিভিল ডিফেন্স, এসডিআরএফ এবং এনডিআরএফ-কে সতর্ক করে সমস্ত রকম প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে বলা হয়েছে। পরিস্থিতি বুঝে সুন্দরবনের উপকূল এলাকায় জরুরিভিত্তিতে মোতায়েন করা হতে পারে ওই বিশেষ বাহিনী।
ব্লক প্রশাসন এবং পঞ্চায়েতগুলোকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। সেচ দফতরের আধিকারিক এবং কর্মীরা বাঁধের উপর নজরদারি চালাবে। কোথাও কোন বাঁধে সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত মেরামত করা হবে বলে সেচ দফতরের নির্দেশ। পঞ্চায়েত এবং ব্লক অফিসগুলোতে শুকনো খাবার, পানীয় জলের পাউচ এবং ত্রিপল মজুদ করা হচ্ছে। উপকূল এলাকায় নজরদারি চালাতে বিডিও অফিসগুলোতেও একটি করে কন্ট্রোল রুম খোলা হবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।