কলকাতা: শর্তসাপেক্ষে বিজেপিকে সিঙ্গুরে ধরনার অনুমতি দিয়েছে হুগলি জেলা পুলিশ। শর্ত হল, দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে বন্ধ করে ধরনা-অবস্থান চলবে না। একইসঙ্গে বলা হয়েছে মঞ্চে ৫০ থেকে ৬০ জনের বেশি লোক থাকতে পারবে না। কিন্তু সেই ধরনা মঞ্চে অনুপস্থিত অধুনা বিজেপি নেতা রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। আর এ নিয়েই মুখ খুললেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim)।
ফিরহাদ এদিন বলেন, “ধরনা মঞ্চ করে এখন ডাইভার্ট করার চেষ্টা করছে বিজেপি। এতে কোনও লাভ নেই। সিঙ্গুর এভাবে দখল করা যায় না। সিঙ্গুরে তৃণমূল ছিল, তৃণমূলেরই থাকবে। আমাদের মাস্টারমশাইকেও নিয়ে গিয়েছিল, কিন্তু লাভ হয়নি। সিঙ্গুরে জয়লাভ করেছে সেই তৃণমূল। এখানে লকেট কেন কাউকে দেখা যাবে না, একা দিলীপ ঘোষ খালি বসে থাকবেন।”
প্রসঙ্গত, এই ধরনা মঞ্চে দেখা যায়নি রবীন্দ্রনাথকে। যা নিয়ে প্রশ্নও উঠতে শুরু করে। কারণ, নির্বাচনের পর থেকেই আর বিজেপির কর্মসূচিতে বিশেষ দেখা যায়নি রবীন্দ্রনাথকে।
কৃষকদের বিভিন্ন দাবি দাওয়াকে সামনে রেখে তিনদিন ব্যাপী ধরনায় বসছে বিজেপি। তাও আবার জমি আন্দোলনের প্রাণভূমি সিঙ্গুরে। ১৪ ডিসেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ধরনা চলবে।
ভারতীয় জনতা কিষাণ মোর্চার ব্যানারে সিঙ্গুরে এই ধরনার ডাক দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার এই ধরনা মঞ্চে যাওয়ার কথা বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ, রাজ্য নেতা রাহুল সিনহাদের। থাকার কথা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীরও।
তবে এই কর্মসূচি ঘিরে রবিবার থেকেই জটিলতা শুরু হয়। সেদিন বিজেপির স্থানীয় কর্মীরা ধরনামঞ্চ বাঁধার কাজ শুরু করতে গেলে পুলিশি বাধার মুখে পড়তে হয় বলে অভিযোগ ওঠে। এরপরই সেখানে পৌঁছন সায়ন্তন বসু। সিঙ্গুরে জমি আন্দোলনের ধাত্রীভূমিতে দাঁড়িয়েই সায়ন্তন হুঁশিয়ারি দেন, সিঙ্গুরে পুলিশ রুখলে কুরুক্ষেত্র হবে। সোমবারও একটি প্রস্তুতি সভায় সায়ন্তন বলেন, পুলিশ এখানে ধরনায় বসতে না দিলে পুলিশ সুপারের দফতরের সামনে গিয়ে বিজেপির কিষাণ মোর্চার সদস্যরা অবস্থান করবেন।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই বিজেপির এই কর্মসূচি ঘিরে তৎপরতা রয়েছে হুগলি পুলিশের। সিঙ্গুর থানার পুলিশ, হুগলি গ্রামীণ পুলিশ জেলার যাঁরা আধিকারিক রয়েছেন তাঁরা এখানে তৎপর রয়েছে। শৃঙ্খলা রক্ষায় তৎপর তাঁরা। পুলিশের পক্ষ থেকে দুর্গাপুর রোড এর পাশে ব্যারিকেড করে দেওয়া হয়েছে, যাতে দুর্গাপুর রোড দিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক থাকে। যদিও সকাল ১০টা অবধি সে অর্থে বিজেপি কর্মীদের ভিড় ধরনাস্থলে দেখা যায়নি। যদিও বিজেপির শীর্ষনেতৃত্ব জানিয়েছে, সকাল ১১টা থেকে তারা এই কর্মসূচি শুরু করতে পারবে।
যে ইস্যুগুলিকে মূলত হাতিয়ার করে বিজেপি ধরনায় বসছে সেগুলি কৃষকদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সারের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি কালোবাজারির অভিযোগ তুলেছেন কৃষকরা। এদিনের ধরনা মঞ্চ থেকে বিজেপি সেই অভিযোগ নিয়ে সরব হবে। দ্বিতীয়, বিভিন্ন সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসল নষ্ট হওয়ার কারণে ক্ষতিপূরণ কিংবা বিমা দেওয়া। সেচের জন্য বিদ্যুতের যে খরচ হয়, তা নিয়েও তিনদিনের কর্মসূচিতে রাজ্যের বিরুদ্ধে বার্তা দেবে বিজেপি।