কলকাতা: প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য (Buddhadeb Bhattacharjee)। ৮০ বছর বয়স হয়েছিল তাঁর। বালিগঞ্জে পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতেই বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ২০ মিনিট নাগাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। রেখে গেলেন স্ত্রী ও এক সন্তানকে। দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন তিনি। শয্যাশায়ী ছিলেন। বুধবার থেকে শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে, বৃহস্পতিবার সকালে এল মৃত্যুসংবাদ। দীর্ঘ পাঁচ দশকের রাজনৈতিক জীবন। প্রথমে কাশীপুর-বেলগাছিয়া কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলেন তিনি। এরপর ১৯৮৭ সালে যাদবপুর কেন্দ্র থেকে ভোটে দাঁড়ান। ২০১১ সাল পর্যন্ত টানা এই কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলেন বুদ্ধবাবু।
১৯৪৪ সালের ১ মার্চ কলকাতায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের জন্ম। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তাঁর কাকা। আজীবন বামপন্থায় বিশ্বাসী এই মানুষটির রুচিবোধ নিয়ে এখনও চর্চা হয়। রাজনীতির পাশাপাশি সাহিত্যচর্চাতেও সমান আগ্রহ ছিল বুদ্ধবাবুর। শৈলেন্দ্র সরকার বিদ্যালয় থেকে স্কুল জীবন শেষ করে প্রেসিডেন্সি কলেজে (অধুনা প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়) বাংলা সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করেন। এরপর সরকারি স্কুলেই শিক্ষকতা করতেন।
১৯৬৬ সালে সিপিএমের প্রাথমিক সদস্যপদ নেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ১৯৭২ সালে সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হন। ১৯৭৭ সালে বিধানসভা ভোটে প্রথমবার লড়াই। ২০১১-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে পর্যন্ত সে জয়যাত্রা অব্যাহত থেকেছে। রাজ্যের বিভিন্ন দফতর সামলেছেন তিনি। তথ্য সংস্কৃতি দফতর থেকে পর্যটন, নগরোন্নয়ন— কখনও পূর্ণ মন্ত্রী, কখনও আবার সাময়িকভাবে সামলেছেন দফতর।
১৯৯৬ সালের পর স্বরাষ্ট্র দফতরের মন্ত্রী ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ১৯৯৯ সালে ডেপুটি মুখ্যমন্ত্রী হন তিনি। জ্যোতি বসু অবসর নেওয়ার পর ২০০০ সালে মুখ্যমন্ত্রী পদে বসেন বুদ্ধবাবু। বাংলায় ৩৪ বছরের বাম রাজত্বের শেষের ১০ বছরের মুখ্যমন্ত্রী তিনিই।
পরনে সাদা ধবধবে ধুতি-পাঞ্জাবি, বাঁদিকে পাট করে আঁচড়ানো চুল, শব্দচয়নে সদা সতর্কতা, গলার স্বরের গাম্ভীর্য, স্পষ্ট উচ্চারণে বাংলায় কথা বলা — ১০টা বছরেই তাঁকে করে তুলেছিল ‘ব্র্যান্ড বুদ্ধ’। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি ব্র্যান্ড হয়েই থেকে গেলেন। বিতর্ক এসেছে, যেমনটা আসে রাজনীতির অনুষঙ্গে। তবে সেসব ঠেলে সরিয়ে তিনি আজীবন ‘বুদ্ধবাবু’ হয়েই থেকেছেন। কোনও বিরোধী রাজনীতিক তাঁকে ভাষার বাণে বিঁধতে গেলেও কখনও ‘বাবু’ ছাড়া সম্বোধন করেনি। এটাই বোধহয় ‘ব্র্যান্ড বুদ্ধ’র ক্যারিশমা।
দক্ষিণ কলকাতায় পাম অ্যাভিনিউয়ের দু’ কামরার ফ্ল্যাটে আড়ম্বরহীন জীবন কাটিয়েছেন শেষ দিন পর্যন্ত। গত কয়েক বছরে একাধিকবার উডল্যান্ডস হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তিনি। বারবার সেই লড়াই জিতে ফিরেও এসেছেন। কখনওই হাসপাতালে যেতে চাইতেন না তিনি। পাম অ্যাভিনিউয়ের ঘরটাই ছিল তাঁর সবটা। বৃহস্পতিবার সেই ঘরেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। শেষ হল বাম রাজনীতির এক জমানার।
আরও খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Tv9 বাংলা অ্যাপ (Android/ iOs)