কলকাতা : বিগত কয়েকদিনে কলকাতা হাইকোর্টে এক বেনজির পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশে কেন বারবার স্থগিতাদেশ দেওয়া হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। দেশের প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করার কথাও বলেছিলেন তিনি। আবার বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় একাধিক মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আইনজীবীদেরই একাংশ। তার রেশ ধরে কার্যত রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের ছায়া পড়েছে আদালতে। বিচারপতির এজলাসে বসে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন তৃণমূলপন্থী আইনজীবীরা। সেই নজিরবিহীন বিক্ষোভের পরই বিচারপতি আইনজীবীদের কাছে জানতে চাইলেন, তাঁর ভুলটা কোথায়? তাঁর এজলাসে কী সমস্যা হচ্ছে?
বুধবার সকাল থেকে আদালত চত্বরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। বিচারপতি তাঁর কক্ষে প্রবেশ করতেই শুরু হয়ে যায় বিক্ষোভ। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস বয়কট করা হচ্ছে বলে জানান আইনজীবীদের একাংশ তথা তৃণমূলপন্থী আইনজীবীরা।
এই পরিস্থিতি মধ্যে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় তৃণমূলপন্থী আইনজীবী চণ্ডীচরণ দে-কে বলেন, ‘আপনাদের বলছি, রাজনীতি করবেন না, আমি তো রাজনীতি করছি না। আমি একটা দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হতে চেয়েছি।’
উত্তরে চণ্ডীচরণ দে জানান, সিবিআই তদন্তের নির্দেশ নিয়ে তাঁদের কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু ডিভিশন বেঞ্চ নিয়ে কেন প্রশ্ন তোলা হল, সেটাই আপত্তির কারণ।
আইনজীবীর এই যুক্তিতে বিচারপতি বলেন, ‘আপনারা যদি মনে করেন আমি ডিভিশন বেঞ্চের বিরুদ্ধে বলে ভুল করেছি তাহলে সুপ্রিম কোর্টে যান। এ ভাবে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন কেন?’ তাঁর বিরুদ্ধে আইনজীবীদের তরফে প্রধান বিচারপতিকে যে চিঠি দেওয়া হয়েছে, তা ‘বেদনাদায়ক’ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বিচারপতি আরও বলেন, “আমি দুর্নীতি দেখলে রুখে দাঁড়াব। তাতে আমার মাথায় বন্দুক ঠেকালেও আমি থামব না। দুর্নীতি ঠেকাতে সাহায্য করুন।” তাঁর উত্তরে আইনজীবী চণ্ডীচরণ দে বলেন, “আমিও চাই দুর্নীতি বন্ধ হোক।”
স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত একাধিক মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এসএসসি-র গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি বা এসএলএসটির মামলায় যতবার তিনি সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন, ততবারই সেই নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেয় ডিভিশন বেঞ্চ। আর তা নিয়েই আপত্তি জানান বিচারপতি। রাজনৈতির প্রভাব খাটানো হচ্ছে কি না সেই প্রশ্নও তুলে দেন তিনি।
কলকাতা হাইকোর্টে লিখিতভাবে প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। দেশের প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপও দাবি করেন তিনি। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘কাদের সুবিধা পাইয়ে দিতে ডিভিশন বেঞ্চ সিঙ্গল বেঞ্চের হাত বেঁধে দিচ্ছে?’
স্কুল সার্ভিস কমিশনের দুর্নীতির অভিযোগ আজকের নয়। বছরের পর বছর ধরে বহু চাকরি প্রার্থী অভিযোগ জানিয়ে আসছেন। যোগ্য প্রার্থীরা কবে চাকরি পাবে সেই আশায় দিনের পর দিন রাস্তায় বসে থেকেছেন তাঁরা। সিবিআই তদন্তের নির্দেশ তাঁদের কিছুটা আশা জুগিয়েছে বলেই দাবি চাকরি প্রার্থীদের। আর তাঁরা বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। এক চাকরি প্রার্থী বলেন, ‘আমরা প্রায়ই বিচার ব্যবস্থার ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলি। তবুও অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো বিচারপতিরা এখনও আছেন বলে আমরা আস্থা রাখছি। ওনাকে হ্যাটস অব।’
উল্লেখ্য, এসএসসি-র বেশ কয়েকটি মামলায় ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে সিবিআই তদন্ত। তৎকালীন নিয়োগ কমিটির সদস্যদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হচ্ছে।