কলকাতা: এবার ভিক্টোরিয়া। ফের জয় ‘শ্রী রাম ধ্বনি’ শুনে মেজাজ হারালেন মমতা (Mamata Banerjee)। এর আগে গ্রাম-গঞ্জের রাস্তায় যে ঘটনা ঘটেছিল, এদিন তৃণমূল নেত্রীর একই ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা গেল ভিক্টোরিয়ার মঞ্চে। তাও আবার খোদ প্রধানমন্ত্রী (Narendra Modi) ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের সামনে।
শেষবার তাঁদের দেখা হয়েছিল আমফানের পর। প্রায় ৯ মাস পেরিয়ে ফের দেখা। নেতাজীর ১২৫ তম জন্মজয়ন্তীতে ফের একবার মুখোমুখি হলেন মোদী-মমতা। একসঙ্গে গুটিগুটি পায়ে দুজনে হেঁটে ও ঘুরে দেখলেন ভিক্টোরিয়ার মিউজ়িয়াম। একসঙ্গে দর্শকাসনে বসে অনুষ্ঠানও দেখলেন তিনি। তবে প্রধানমন্ত্রী, রাজ্যপাল ও বাকি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের সঙ্গে মঞ্চে ওঠার কিছুক্ষণ পরই কাটল তাল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি জানিয়ে দিলেন, ‘অপমানিত’ হয়েছেন তিনি।
ঘটনার সূত্রপাত তিনি ভাষণ রাখার আগেই। অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী ভাষণ দেন কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রী প্রহ্লাদ সিং পটেল। এরপর ভাষণ দেওয়ার কথা ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সঞ্চালক তাঁর নাম ঘোষণা করতেই জনতা ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি দিতে শুরু করে। একবার সঞ্চালক সকলকে শান্ত হওয়ার আবেদন জানান। কিন্তু তাতে হিতে বিপরীত হয়, আরও বেড়ে যায় ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি। মাইক হাতে নিয়েই ক্ষোভে ফেটে পড়েন মমতা।
মাইক হাতে নিয়ে মমতা বলেন, “আমার মনে হচ্ছে সরকারি অনুষ্ঠানের একটা শালীনতা থাকা উচিত। এটা সরকারি অনুষ্ঠান, কোনও রাজনৈতিক দলের অনুষ্ঠান নয়। সাধারণ মানুষের অনুষ্ঠান। আমি প্রধানমন্ত্রী এবং সাংস্কৃতি মন্ত্রকের কাছে কৃতজ্ঞ কলকাতায় এই অনুষ্ঠান করার জন্য। কিন্তু কাউকে আমন্ত্রণ করে তাঁকে বেইজ্জত করা আপনাদের শোভা দেয় না। আমি এই ঘটনার প্রতিবাদে কোনও বক্তব্য রাখছি না।” শেষে ‘জয় হিন্দ’ ও ‘জয় বাংলা’ বলে ফের চেয়ারে গিয়ে বসে পড়েন মমতা।
#WATCH | I think Govt’s program should have dignity. This is not a political program….It doesn’t suit you to insult someone after inviting them. As a protest, I won’t speak anything: WB CM Mamata Banerjee after ‘Jai Shree Ram’ slogans were raised when she was invited to speak pic.twitter.com/pBvVrlrrbb
— ANI (@ANI) January 23, 2021
আরও পড়ুন: ‘মহামারির বিরুদ্ধে ভারতের মোকাবিলা দেখে নেতাজী খুশি হতেন’, বললেন মোদী
তবে এই প্রথম জয় শ্রী রাম স্লোগাম শুনে মমতা মেজাজ হারিয়েছেন এমনটা নয়। এর আগেও একাধিকবার এই স্লোগান শুনে মমতা নিজের তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। এই নিয়ে বিজেপি আইটি সেল প্রধান অমিত মালব্য কটাক্ষের সুরে টুইট করে লেখেন, “নেতাজীর জন্মজয়ন্তীতে বক্তব্য না দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেতাজীর গরিমাকে অপমান করেছেন।” বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় টুইটে লেখেন, “জয় শ্রী রাম ধ্বনিকে মমতা অপমান হিসেবে দেখেন। এটা কী ধরনের রাজনীতি।”
जय श्रीराम के नारे से स्वागत
ममताजी अपमान मानती है।
कैसी राजनीति है! pic.twitter.com/fbeOReuJU2
— Kailash Vijayvargiya (@KailashOnline) January 23, 2021
Mamata Banerjee insulted the legacy of Rabindranath Tagore by refusing to attend Viswa Bharati’s centenary celebrations. She has done the same by not delivering her speech on the occasion of Netaji’s anniversary celebrations.
Bengal will not tolerate this disregard of its icons.
— Amit Malviya (@amitmalviya) January 23, 2021
ঘটনা নিয়ে তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “অত্যন্ত লজ্জাজনক ঘটনা। বাংলার মাথা হেঁট হয়ে গেল। বিজেপি কর্মীদের কার্ড দেওয়া হয়েছিল। আয়োজকদের যতটা সতর্ক থাকার দরকার ছিল তাঁরা ততটা ছিলেন না। এই ঘটনার নিন্দা জানানোর কোনও ভাষা নেই।”
অন্যদিকে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় এই ঘটনার নিন্দা করে বলেন, “নেতাজীকে নিয়ে সরকারি অনুষ্ঠানে জয় শ্রীরাম ধ্বনির নিন্দা করছি। বিজেপি সমর্থকরা বাংলার সম্মান নষ্ট করল। প্রধানমন্ত্রীর বারণ করা উচিত ছিল। টুইটে ঘটনার নিন্দা করেছেন তৃণমূল রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন।” তৃণমূল সাংসদ নুসরত জাহানও অত্যন্ত নিন্দা করেছেন ঘটনার।
dignity (noun) The state or quality of being worthy of honour and respect.
You can’t teach ‘dignity’. Nor can you teach lumpens to be dignified.
Here is a one-min video of what exactly happened today. Including the dignified response by @MamataOfficial pic.twitter.com/aEQ3jF7CYf
— Derek O’Brien | ডেরেক ও’ব্রায়েন (@derekobrienmp) January 23, 2021
राम का नाम गले लगाके बोले ना कि गला दबाके । ?
I strongly condemn shouting of political and religious slogans at Government Functions to celebrate legacy of Freedom Fighter Netaji Subhash Chandra Bose on his 125th birth anniversary celebrations. #SaveBengalFromBJP #Shame— Nusrat Jahan Ruhi (@nusratchirps) January 23, 2021
ঘটনার তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “এটা একটা অসভ্যতা। সরকারি মঞ্চে এই ধরনের অসভ্যতা। এটা করা যায় না। এটা পুরোপুরি অনুচিত একটা জিনিস।”
আরও পড়ুন: ‘কলকাতাকে রাজধানী করা হোক’, নেতাজী স্মরণে দাবি তুললেন মমতা
অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর দর্শকাসনে যেখান থেকে জয় শ্রীরাম স্লোগান উঠেছিল, সেখানে হাজির দর্শকদের সঙ্গে মুখোমুখি হন TV9 বাংলার সাংবাদিক। উপস্থিত দর্শকদের একাংশ অবশ্য বলেন যে, সরকারি অনুষ্ঠানে এমনটা হওয়া উচিত হয়নি। তবে সিংহভাগের দর্শকদের বক্তব্য, যা হয়েছে এতে কোনও আপত্তি নেই। জনৈক দর্শকের কথায়, “রামের নাম আবেগের সঙ্গে আসে। আবেগের সঙ্গেই এই স্লোগান দেওয়া হয়েছে। এতে কোনও ভুল নেই।”