‘কলকাতাকে রাজধানী করা হোক’, নেতাজী স্মরণে দাবি তুললেন মমতা
রেড রোডের মঞ্চ থেকেই মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, নেতাজীর জন্মদিনকে জাতীয় ছুটির দিন ঘোষণা করা হোক
কলকাতা: ইঙ্গিত মিলেছিল টুইট থেকেই। একজনের টুইটে উল্লেখ ‘পরাক্রম দিবস’ পালনের কথা। অন্যজন লিখেছেন, ‘দেশনায়ক দিবস’। দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) বনাম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee )-নেতাজির জন্মবার্ষিকী ঘিরে দুই রাজনীতিবিদের অবস্থানের পার্থক্য আরও স্পষ্ট হল বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে। শনিবার নেতাজী ভবন থেকে কর্মসূচি শুরু করেই একটি শব্দের ওপর খুব বেশি জোর দিতে দেখা গিয়েছে মমতাকে। ‘দেশনায়ক’। এরপর শ্যামবাজার থেকে পদযাত্রা করে রেড রোডে পৌঁছেও এই প্রসঙ্গেই একাধিক বিষয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সুর চড়ালেন তিনি। আর উল্লেখযোগ্যভাবে দাবি তুললেন, ফের দেশের রাজধানী করা হোক কলকাতা-সহ চার শহরকে!
বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড়ে নেতাজীর মূর্তির (Netaji Birthday Anniversary) সামনে সাইরেন বাজিয়ে দেশনায়কের জন্মমুহূর্ত স্মরণ করা হয়। এরপর শাঁখ বাজিয়ে পদযাত্রার সূচনা করেন মমতা। রেড রোডে শেষ হয় পদযাত্রা। প্রত্যাশা মতোই এই মঞ্চ থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সুর চড়াতে দেখা যায় ‘দেশনায়ক’ প্রসঙ্গে কেন্দ্রের ভূমিকার বিরুদ্ধে। প্রশ্ন তোলেন, স্বাধীনতা আন্দোলনের ভূমিই যখন বাংলা, তখন কলকাতাকে কেন রাজধানী করা হবে না?
রেড রোডের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তুললেন, “দেশে কেন একটা রাজধানী? দেশের চার প্রান্তে চারটি রাজধানী হোক। উত্তর-পূর্বে, দিল্লিতে, দক্ষিণে এবং পশ্চিমে একটা।” দেশের চারটি প্রস্তাবিত রাজধানীতে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সংসদীয় অধিবেশন বসানোরও দাবি করেছেন তিনি। কীভাবে তা সম্ভব, এদিন তার ব্যাখ্যাও দেন তিনি। তাঁর কথায়, দক্ষিণের কেরল, অন্ধ্র প্রদেশ, উত্তর এবং মধ্য ভারতের উত্তর প্রদেশ, পঞ্জাব, মধ্যপ্রদেশ এবং উত্তর পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলির কোনও একটিকে রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করা হোক।
এরপরই ‘গান্ধীবাদ-সুভাষবাদ জিন্দাবাদ’, ‘সুভাষ বোস জিন্দাবাদ’ স্লোগান তোলেন তিনি। ভারতে অধুনা অবলুপ্ত প্ল্যানিং কমিশন ফিরিয়ে আনার দাবি জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “ভারতের প্ল্যানিং কমিশন তৈরি করেন নেতাজী। ক্ষমতায় এসে দেখলাম নেতাজীর প্ল্যানিং কমিশন তুলে নেওয়া হল। করে দেওয়া হল নীতি আয়োগ।” কেন প্ল্যানিং কমিশন তুলে নেওয়া হল তার বিরুদ্ধে সুর চড়ান মমতা। তাঁর কথায়, “ন্যাশনাল প্ল্য়ানিং কমিশন ফিরিয়ে দিতে হবে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা অবশ্য বলছেন, কলকাতাকে রাজধানীর করার প্রস্তাবের পিছনে দ্বিমুখী উদ্দেশ্য রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর। প্রথমত, একুশের নির্বাচনের আগে মুখ্যমন্ত্রী আসলে বাঙালি আবেগ, মননকে স্পর্শ করতে চাইছেন। কলকাতা বাঙালির প্রাণের শহর। ব্রিটিশ অধ্যুষিত দেশের রাজধানী ছিল কলকাতা। শহরের পরতে পরতে জড়িয়ে স্মৃতি, ইতিহাস, লড়াই, আত্মবলিদানের গল্প। মুখ্যমন্ত্রী সেই আবেগকেই আরও একবার নাড়িয়ে দিতে চাইলেন এই প্রস্তাব উত্থাপিত করে।
দ্বিতীয়ত, একটি বিষয় লক্ষ্যণীয়, মুখ্যমন্ত্রী একবারের জন্যও শুধুমাত্র কলকাতার প্রসঙ্গ তোলেননি। সেক্ষেত্রে দক্ষিণের কেরল, অন্ধ্র প্রদেশ, উত্তর এবং মধ্য ভারতের উত্তর প্রদেশ, পঞ্জাব, মধ্যপ্রদেশ এবং উত্তর পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলির কোনও একটিকে রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করার কথা বলেছেন তিনি। আসলে বাঙালি মন করতে জয় করতে অত্যুৎসাহী বিজেপি নেতৃত্বকেও হালকা অস্বস্তিতে ফেলতে চাইলেন তিনি। যেদিন খোদ কলকাতার মাটিতে প্রধানমন্ত্রী, ঠিক তখনই কলকাতাকেই রাজধানীর করার প্রস্তাব তুলে নয়া চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ। মোদী এপ্রসঙ্গে আদৌ কোনও মন্তব্য করেন কিনা, তা বিবেচ্য। তবে বাঙালি হৃদয় ছুঁতে অতি তৎপর মোদী-শাহ জুটি অন্ততপক্ষে যে একুশের লড়াইয়ের আগে এই প্রস্তাব হেলায় উড়িয়ে দিতে পারবে না, তা ভালোই আঁচ করতে পেরেছেন পোড় খাওয়া নেত্রী।
নেতাজীর জন্মদিনকে জাতীয় ছুটির দিন ঘোষণা করার আরও একবার দাবি তোলেন মমতা। পাশাপাশি শিক্ষা দফতরকে নির্দেশ দেন, “তরুণের স্বপ্ন এবং সবুজের অভিযান এই দুটো বই যেন কম্পালসারি করা হোক।”
আরও পড়ুন: লাইভ: নেতাজী ভবন পৌঁছলেন প্রধানমন্ত্রী
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কথায়, একুশের নির্বাচনের আগেই নেতাজীকে দুই রাজনীতিবিদের ভাবাবেগের প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখছে বাংলা। টুইটারে চলছে হ্যাশট্যাগের লড়াই আর মঞ্চে মনীষীর প্রতি বাঙালির আবেগ ছুঁয়ে যাওয়ার আপ্রাণ প্রয়াস। তবে কলকাতাকে রাজধানীর করার বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়।