কলকাতা: আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে আগেও সরব হয়েছিলেন আরজি করের প্রাক্তন ডেপুটি সুপার আখতার আলি। তিলোত্তমা পর্বে সেই অভিযোগ আরও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। টালা থানায় আখতার আলি আগেই অভিযোগ জানিয়েছিলেন। এফআইআর না নেওয়ায় এ সব প্রশ্নেই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন আখতার।
সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে যে যে অভিযোগ
১. বেআইনি মৃতদেহ ব্যবহার
ইএনটি কর্মশালায় বেআইনি ভাবে মৃতদেহের ব্যবহারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে।
২. বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য পাচার
বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য পাচার। এনআরএস-আরজি করে বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য উৎপাদনে একই ক্ষমতা। তবুও সেপ্টেম্বর ২০২২-ফেব্রুয়ারি ২০২৩ সালের মধ্যে এনআরএসে বায়োমেডিক্যাল বর্জ্যর পরিমাণ ১ লক্ষ ৫৩ হাজার ৬৫০ কেজি। আরজি করে একই সময়ে BMW’র মাত্রা সেখানে ৪৯ হাজার ৬০২.৪৪ কেজি। প্রশ্নের প্রেক্ষিতে তদন্তে বর্জ্য পাচারের বিষয়টি ধরা পড়লেও তদন্তকারীরাই অধ্যক্ষের রোষে পড়েন বলে অভিযোগ।
৩. ল্যাব পরিকাঠামোয় আর্থিক দুর্নীতি
UG স্কিল ল্যাবের পরিকাঠামো নির্মাণে একটি বিশেষ সংস্থাকে ২ কোটি ৯৭ লক্ষ ৩৬ হাজার টাকার বরাত পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ। ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজে একই ল্যাব পরিকাঠামো তৈরির খরচ হয় ৬১ লক্ষ ৪৭ হাজার ২৯৪ টাকা। এখানেও ওঠে প্রশ্ন।
৪. চড়া দামে অক্সিজেনশন যন্ত্র ক্রয়
কোভিডের সময় বেসরকারি স্বাস্থ্যক্ষেত্রের থেকেও চড়া দরে হাই-ফ্লো ন্যাজাল অক্সিজিনেশন যন্ত্র ক্রয়। সরকারের কোটি কোটি টাকা অপচয়ের অভিযোগ।
৫. বরাত পাইয়ে দিতেও দুর্নীতি
নিয়ম না মেনে হাসপাতাল চত্বরে খাবারের স্টল, কাফে তৈরির অভিযোগ। ২০২২ সালের জুনে আরজি করের টিএমসিপি ইউনিট কাফে তৈরির জন্য অধ্যক্ষকে চিঠি লেখেন। সেদিনই দরপত্র ডাকা হয়। তিনটি সংস্থা দরপত্রে যোগ দিলেও তিন সংস্থারই সিলমোহর, সই এক। কলেজ কাউন্সিলকে এড়িয়ে বরাত দেওয়ার এই প্রক্রিয়ার পিছনেও আর্থিক গরমিলের অভিযোগ।
৬. ইউজি-পিজি কাউন্সেলিংয়ে বেনিয়ম
ইউজি-পিজি কাউন্সেলিংয়ে বেনিয়ম। ২০২২ সালে সিসি ক্যামেরা, কম্পিউটার, শব্দধ্বনি ব্যবস্থা, চেয়ার, টেবিল ভাড়া নেওয়ার জন্য খরচ ১৪ লক্ষ টাকা। দাবি, ১৪ লক্ষ টাকায় এ সবই কিনে নেওয়া সম্ভব। ভাড়া বাবদ এত খরচ কেন?
৭. অ্যাকাডেমিক তহবিল ‘নয়ছয়’
২০২৩ সালে এনএমসি’র পরিদর্শক দলকে উপহার দেওয়ার নামে একটি নির্দিষ্ট সংস্থার কাছ থেকে সামগ্রী কেনা হয়। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বরাত পিছু ২০ শতাংশ কমিশন চাওয়ার অভিযোগ। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে হাওড়ার এক সংস্থা স্বাস্থ্যভবনে এই অভিযোগ করলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
৮. কর্মীনিয়োগেও দুর্নীতি
হাসপাতালে চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগ, বেআইনি পার্কিং থেকে বিপুল টাকা আয়ের অভিযোগ।
প্রাক্তন ডেপুটি সুপার আখতার আলি বলেন, “ওঁর অনেক প্রভাবশালী। ওঁর ওপর হাত ছিল। সেই হাত এখনও থাকতে পারে। ট্রান্সফার অর্ডার হত, তারপর কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই অর্ডার বাতিল হয়ে যেত। এবার ইস্তফা দিলেন, তারপরই আবার প্রাইজ় পোস্টিং হয়ে গেল।” তবে সন্দীপ ঘোষ যে প্রভাবশালী, তা কেবল আখতার আলিই নন, একথা বলেছেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিও।
আরও খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Tv9 বাংলা অ্যাপ (Android/ iOs)