কলকাতা: হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই প্রবল চাপে ছিলেন। খুনের মামলায় জড়ানো থেকে শুরু করে প্রাণনাশের হুমকি, সবই পেয়েছেন। পরিস্থিতি এতই জটিল যে, দেশে ফেরার কথা চিন্তাই করতে পারছেন না। দেশে এক সময় যিনি ছিলেন মহাতারকা, সেই তিনিই এখন গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে কার্যত অপরাধী হয়ে গিয়েছেন। ভাবা হচ্ছিল, এখান থেকে ইউটার্নের জন্য ক্রিকেটকেই আঁকড়ে ধরবেন। ঘটল অন্য কিছু। চাপের মুখে ক্রিকেট ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলেন সাকিব আল হাসান (Shakib Al Hasan)। ভারতের বিরুদ্ধে চলতি টেস্ট (Test) সিরিজে কানপুরে খেলতে দেখা যাবে। বাংলাদেশি ক্রিকেটারের ঘনিষ্ঠ মহল বলছে, এটাই কার্যত তাঁর কেরিয়ারের শেষ টেস্ট হতে চলেছে। কারণ যে স্বপ্ন তিনি দেখছেন, তা পূরণ হওয়ার সম্ভবনা খুবই কম।
শুক্রবার কানপুরে ভারতের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামবে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ জয়ের পর স্বপ্নের ফানুশ ওড়ানো শুরু হয়েছিল। ভারতের বিরুদ্ধে তা কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে। চেন্নাইয়ে ২৮০ রানে প্রথম টেস্ট হেরেছে বাংলাদেশ। আর তাতে সাকিবের অবদান আতসকাচ দিয়ে খুঁজতে হবে। দ্বিতীয় টেস্টের আগের দিন সাকিব জানিয়ে দিলেন, টি-২০ ক্রিকেটে আর নয়। অর্থাৎ টেস্ট সিরিজ শেষ হওয়ার পর ভারতের বিরুদ্ধে যে তিন ম্যাচের টি-২০ সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ, তাতে সাকিবকে আর দেখা যাবে না। ৩৭ বছরের ক্রিকেটার ২০০৭ সাল, প্রথম টি-২০ বিশ্বকাপ থেকে খেলছেন। এই সাকিবের অবসর নেওয়া মানে একটা যুগের অবসান হয়ে গেল। তার থেকেও বড় কথা বাংলাদেশ ক্রিকেটের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল সাকিবের নাম। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে গত ২ দশক ধরে বাংলাদেশ ক্রিকেট যতটুকু প্রাধান্য পেয়েছে, তার পুরোটাই সাকিবের জন্য। এই সাকিব অবশ্য পরবর্তী প্রজন্মের বেশ কিছু উঠতি তারকাকে রেখে গেলেন। যাঁরা তাঁর বিশ্বকাপ না জেতার স্বপ্ন হয়তো পূরণ করবেন।
কানপুর টেস্টের আগে প্রেস কনফারেন্সে সাকিব অবসরের কথা ঘোষণা করেন। সাকিব ২টো শর্ত একইসঙ্গে দিয়েছেন। মীরপুরে তিনি শেষ টেস্ট খেলতে চান। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে হোম সিরিজ খেলার কথা বাংলাদেশের। যদিও সেই সিরিজ ঘিরে যথেষ্ট চাপানউতোর রয়েছে। নিরাপত্তাজনিত কারণে ওই সিরিজ আদৌ বাংলাদেশে হবে কিনা, যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। আর যদি হয়ও সাকিবের ঘরে ফেরা এই মুহূর্তে মুশকিল। এমনিতেই তাঁর বিরুদ্ধে সমন বেরিয়েছে। ঢাকা বিমানবন্দরে পা দেওয়া মাত্র তাঁকে গ্রেফতার করা হতে পারে। আর সেই কারণেই সাকিব বলছেন, ‘ঘরে ছেড়ে আসা খুব একটা মুশকিল নয়। কিন্তু ঘরে বাস করা বেশ চাপের।’
প্রশ্ন থাকছে আরও এক। ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে কবে অবসর নেবেন সাকিব? তাও জানিয়ে দিয়েছেন। পাকিস্তানের মাটিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে যে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি হতে চলেছে, সেটাই হবে সাকিবের শেষ ওডিআই টুর্নামেন্ট।