Poland Story: এক মহারাজার গল্প…

Aug 22, 2024 | 10:30 PM

Poland City: পোল্যান্ড সেন্টারে গেলে হয়ত দেখবেন, সেখানে পোলিশদের ধাঁচে টেবিলে বিয়ার হাতে আড্ডা চলছে। ৪৫ বছর পর প্রথম কোনও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নরেন্দ্র মোদীর পোল্যান্ড সফরে সেই ইতিহাসই নতুন করে ফিরে এল। আর সেখান থেকেই দু-দেশের সম্পর্ক আরও মজবুত করার বার্তা দিলেন মোদী।

এক মহারাজার গল্প বলি। স্বাধীনতার আগে আমাদের দেশে কয়েকশো মহারাজা ছিলেন। ইনি তাঁদেরই একজন। পোল্যান্ডে তাঁকে ডাকা হয় ডোবরেগো মাহারাজাদি। মানে মহানুভব মহারাজ। পোল্যান্ডে রাজধানী ওয়াশর খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা রাস্তার নাম গুড মহারাজা স্কোয়ার। ওখানেই রয়েছে তাঁর স্মৃতিসৌধ। গুজরাতের নভনগরের রাজা ছিলেন জামসাহেব দিগ্বিজয় সিং। সেই সময় নভনগর মানে এখনকার জামনগর। ১৯৩৯ সালে হিটলার পোল্যান্ড আক্রমণ করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। নাজি বাহিনীর অত্যাচারে দলে, দলে পোলিশরা দেশ ছেড়ে পালাতে শুরু করলেন। অনেকে জার্মান সেনার হাতে আটকও হলেন। এর কিছুদিন পর রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি। চুক্তিতে সিক্রেট প্রোটোকল বলে একটা বিষয় ছিল। যার মূল কথা, দখল করা দেশ, একে অন্যের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেবেন হিটলার ও স্ট্যালিন। এই সিক্রেট প্রোটোকলের অংশ হিসাবে পোল্যান্ডের একটা অংশ রাশিয়ার হাতে এল। যার ফল – পোল্যান্ড থেকে কয়েক হাজার পরিবারকে রাশিয়ায় রিফিউজি ক্যাম্পে পাঠানো হয়। ১৯৪১ সালের শেষ দিকে সিদ্ধান্ত হয়, রাশিয়া এবং জার্মানির দখলে থাকা দেশ থেকে শিশুদের তৃতীয় কোনও দেশেও পাঠানো যেতে পারে। সেইমতো রাশিয়া থেকে কয়েকটি জাহাজে তুলে দেওয়া হয় শিশুদের। সবার বয়স ৪ থেকে ১৩ বছরের মধ্যে। মোট ৪টি জাহাজ। মেক্সিকো ও নিউজিল্যান্ড একটি করে জাহাজ ঢোকার অনুমতি দিয়েছিল। বাকি দুটি জাহাজ একের পর এক দেশে ঢুকতে চেয়েও, পারেনি। বাধ্য হয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে দুটি জাহাজই মুম্বইয়ে এসে হাজির হয়। জাহাজে প্রায় এক হাজার পোলিশ শিশু। ব্রিটিশ শাসনে থাকা ভারতে আশ্রয় মিলবেই – এটা ধরে নিয়ে মুম্বইয়ে নেমেছিলেন পোলিশ সিভিল ফোর্সের সদস্যরা। তাঁরাই জাহাজে করে শিশুদের নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাওয়ার দায়িত্বে ছিলেন, কিন্তু মু্ম্বই এলেও ওই শিশুদের নামতে দেওয়া হয়নি। কেননা, তাঁদের কাছে বৈধ পরিচয়পত্র ছিল না। সেই সময় এগিয়ে আসেন জামসাহেব দিগ্বিজয় সিং। পার্সোনাল গ্যারান্টি দিয়ে ওই শিশুদের দায়িত্ব নেন। নভনগরে নিজের প্রাসাদের খুব কাছে ছিল মহারাজের বোর্ডিং স্কুল। সেখানেই ঠাঁই হয় ওই পোলিশ শিশুদের। শিশুদের দেখাশোনার জন্য পোল্যান্ড থেকে ট্রেনড স্টাফ আনিয়েছিলেন। ভাড়া করা হয় পোলিশ কুক।

যু্দ্ধ শেষ হওয়ার পর সবাইকে পোল্যান্ডে ফেরত পাঠিয়ে তবে দায়িত্ব শেষ করেছিলেন দিগ্বিজয় সিং। নভনগরের মানুষ তাঁকে বাপু বলে ডাকত। তাঁর আশ্রয়ে থাকা পোলিশ শিশুরাও সেই নামেই সম্বোধন করত তাঁকে। পোল্যান্ড সফরের শুরুতেই সেই মহারাজার স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। অনুষ্ঠানে এমন অনেকেই ছিলেন, যাঁদের পূর্বপুরুষ ১৯৪২ সালে আশ্রয়ের জন্য মুম্বইয়ে নেমেছিলেন। কোলাপুর মেমোরিয়ালেও শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী। কোলাপুরের কাছে ভালিভাদেতে তৈরি হয়েছিল পোলিশ শরণার্থীদের আশ্রয় শিবির। ১৯৪৫ সালে জামনগর থেকে শিশুদের শিবিরও এখানে তুলে আনা হয়। সব মিলিয়ে সেই সময় কমবেশি ৫ হাজার পোলিশ নাগরিক আশ্রয় পেয়েছিলেন মহারাষ্ট্রের এই হিল স্টেশনে। তাঁর ব্যবস্থাও মহারাজ দিগ্বিজয়ই করেছিলেন। জার্মান আক্রমণে এঁরা সবাই দেশছাড়া হন। পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়াশর মতো করেই সাজানো হয়েছিল ছোট্ট এই হিল স্টেশন। এখনও ওই শহরে গেলে পোলিশ বেকারি, পোলিশ রেস্তোঁরার দেখা মিলবে। পোল্যান্ড সেন্টারে গেলে হয়ত দেখবেন, সেখানে পোলিশদের ধাঁচে টেবিলে বিয়ার হাতে আড্ডা চলছে। ৪৫ বছর পর প্রথম কোনও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নরেন্দ্র মোদীর পোল্যান্ড সফরে সেই ইতিহাসই নতুন করে ফিরে এল। আর সেখান থেকেই দু-দেশের সম্পর্ক আরও মজবুত করার বার্তা দিলেন মোদী।