বাঁকুড়া: নয় নয় করে দশ বছর কেটেছে। কত ভোট এসেছে, আবার পেরিয়েও গিয়েছে। রাস্তার ধারে মাঠের মাঝে গুটিকয় কাঠের খুঁটির উপর দড়ি দিয়ে আটকানো শতছিদ্র পলিথিনের নিচে শবর দম্পতির কোনোক্রমে দিন যাপনের ছবি বদলায়নি। সরকারি আবাসের আশায় দু’একবার আবেদন-নিবেদন যে করেননি তা নয়, কিন্তু লাভ হয়নি। অগত্যা হাল ছেড়ে বাঁকুড়ার রানীবাঁধ ব্লকের বড়দা গ্রামের শতছিদ্র সেই তাঁবুকেই নিয়তি বলে মেনে নিয়েছেন বারু ও ভারতী শবর।
রাজ্যে পালা বদলের পর বারেবারে জঙ্গলমহলে ঢালাও উন্নয়নের সার্টিফিকেট দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের নেতারা বারেবারে বলেছেন জঙ্গলমহল হাসছে। গত কয়েক বছর ধরে আবাস থেকে একশো দিনের কাজের প্রকল্প নিয়ে কেন্দ্র রাজ্য চরম চাপানউতোরও দেখেছে এ রাজ্যের মানুষ। কেন্দ্রের প্রতি বঞ্চনার অভিযোগ তুলে রাজ্যের শাসক দলের আন্দোলনের লাভের গুড় বারেবারে ঘরে তুলেছে রাজ্যের শাসক দল। লোকসভা ভোটেও এসেছে বড় জয়। কিন্তু আদপে সাধারণ মানুষের অবস্থা বদলেছে কী? প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা।
বিরোধীরা খোঁচা দিয়ে বলছে, বাঁকুড়ার রানিবাঁধ ব্লকের বড়দা গ্রামের বারু শবরের বাড়ি যেন রাজ্যের উন্নয়নের ঢক্কা নিনাদে চাপা পড়ে থাকা সেই কঙ্কালসার চেহারারই এক জ্বলন্ত উদাহরণ। বারু শবরের প্রতি এই বঞ্চনার ছবি আমরা বারেবারে তুলে ধরেছি টিভি নাইনের পর্দায়। এমন একটা অমানবিক ছবি দেখে শিউরে উঠেছে রাজ্যের মানুষ। কিন্তু ঘুম ভাঙেনি প্রশাসনের। আবাস প্রকল্পের বাড়ি পাওয়া তো দুরের কথা বর্ষার আগে বারু শবরকে সামান্য একটি ত্রিপল দিয়েও বদান্যতা দেখায়নি প্রশাসন। অগত্যা ভারী বৃষ্টিতে রাজ্যের মানুষ যখন পাকা বাড়ির নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে রাত যাপন করছেন তখন রাতভর জেগে মাঠের মাঝে থাকা শতছিদ্র পলিথিনের তাঁবুতে ওই শবর দম্পতির রাত কাবার হয়েছে তাঁবুতে ঝরে পড়া জল নিকাশ করতে করতে। কবে বারু শবরের মাথার উপর মিলবে একটা পাকা ছাদ? কবে ভারী বর্ষা অথবা হাড় হিম করা শীতের রাতে একটু নিশ্চিন্তে কাঁথা মুড়ি দিয়ে নিশ্চিন্তে রাত যাপন করতে পারবেন তাঁরা? উত্তর জানা নেই কারও।