Deocha Pachami Coal Mining Project: ‘জোর করে জমি অধিগ্রহণ নয়’, পাচামিতে পথে-প্রতিবাদে ২৫ টি সংগঠন

TV9 Bangla Digital | Edited By: tista roychowdhury

Jan 06, 2022 | 3:15 PM

Birbhum: শুধুই চাকরি নয়, পাচামি এলাকায়  যে আদিবাসীরা জমি দান করবেন তাঁদের জমির বদলে যথাযোগ্য অন্য আরেকটি জমি দিয়ে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে সে কথা আগেই ঘোষণা করেছিল সরকার।

Deocha Pachami Coal Mining Project: জোর করে জমি অধিগ্রহণ নয়, পাচামিতে পথে-প্রতিবাদে ২৫ টি সংগঠন
দেউচাতে বিক্ষোভ, নিজস্ব চিত্র

Follow Us

বীরভূম: জোর করে জমি অধিগ্রহণ করা যাবে না। এই দাবিতে সিউড়িতে পথে নামল ২৫ টি সংগঠন। বৃহস্পতিবার সকালে জেলাশাসকের দফতরে একটি স্মারকলিপি জমা দেন তাঁরা। সংগঠনগুলির যৌথ অভিযোগ, দেউচা পাচামিতে কয়লা শিল্প (Deocha Pachami Coal Mining Project) গড়তে জোর করে ভুল বুঝিয়ে জমি নেওয়া হচ্ছে আদিবাসীদের থেকে। কোনও রকম সোশ্যাল রিপোর্ট না দিয়েই সরকার এই কাজ শুরু করেছে বলে অভিযোগ। এদিন পথে মিছিল করে ২৫ টি সংগঠন। এই ২৫ টি সংগঠনের মধ্যে ছিল বাম শিবিরও।

মিছিলে অংশগ্রহণকারী এক বাম নেতার কথায়, “কোনওরকম সোশ্যাল রিপোর্ট জমা না দিয়ে সরকার এভাবে জমি অধিগ্রহণ করতে পারে না। কিন্তু, সরকার এখানে ভুল বুঝিয়ে জোর করে জমি অধিগ্রহণ করছে। এখানে আদিবাসী মহিলাদের উপর কীভাবে হামলা করা হয়েছে, কীভাবে তাঁদের নামে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে  তা সকলেই জানেন। আমরা এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে পথে নেমেছি। ” যদিও এই দাবিকে অযৌক্তিক বলে দাবি করেছে শাসক শিবির।

প্রসঙ্গত,  প্রস্তাবিত ডেউচা পাচামি কয়লা খনি প্রকল্পের (Deocha Pachami Coal Mining Project) জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। সেই ঘোষণা অনুযায়ী ধাপে ধাপে প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে জেলা প্রশাসন। সম্প্রতি বীরভূম জেলা শাসক বিধান রায় ঘোষণা করেছিলেন, যেসকল বাসিন্দারা এই প্রকল্পের জন্য জমি দিতে ইচ্ছুক তাঁদের একজনকে সরকারি চাকরি দেওয়া হবে। সেই চাকরি দেওয়ার জন্য আবেদন পত্র প্রদান এবং জমা নেওয়ার কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে।

আবেদন পত্র প্রদান ও জমা নিতে বিশেষ পদক্ষেপ প্রশাসনের

চাকরির আবেদনপত্র বিতরণ এবং জমা দেওয়ার জন্য আব্দারপুর গেস্ট হাউসে একটি অফিস তৈরি করা হয়েছে। সেখানেই এই আবেদন পত্র বিলি করা হচ্ছে।  এই অফিসে ডেউচা পাচামি প্রস্তাবিত কয়লা খনি এলাকার বহু মানুষকে আবেদনপত্র সংগ্রহ করতে লক্ষ্য করা যায়।

তাঁরা জানান, এই কয়লা খনি প্রকল্পের জন্য  সদিচ্ছাই নিজেদের জমি দিচ্ছেন এবং তারই পরিপ্রেক্ষিতে চাকরির জন্য আবেদন পত্র সংগ্রহ করতে এসেছেন। খুব শীঘ্রই সেই আবেদন পত্র পূরণ করে পুনরায় তা প্রশাসনকে জমা দেবেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের এমন সদর্থক পদক্ষেপে কার্যত পাচামি প্রকল্পে আশার আলো দেখছে জেলা প্রশাসন।

বীরভূম জেলার শাসক বিধান রায় জানিয়েছেন, চাকরির এই ফর্ম বিলির পর থেকেই অনেকে জমি দিতে এগিয়ে এসেছেন। পাচামি এলাকার প্রায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ মানুষ ফর্ম সংগ্রহ করেছেন। দ্রুত এই ফর্ম বিলির কাজও সম্পন্ন হবে বলেই আশা করছেন জেলাশাসক।

জমির বদলে পুনর্বাসন

শুধুই চাকরি নয়, পাচামি এলাকায়  যে আদিবাসীরা জমি দান করবেন তাঁদের জমির বদলে যথাযোগ্য অন্য আরেকটি জমি দিয়ে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে সে কথা আগেই ঘোষণা করেছিল সরকার। আদিবাসীদের নতুন ফ্ল্যাটবাড়ি নয়, বদলে গ্রামীণ পরিবেশেই পুনর্বাসন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে এমনটাই ঘোষিত হয়েছিল প্রশাসনের তরফে।

জেলাশাসক বিধান রায়ের কথায়, “আদিবাসীদের সর্বাধিক সংশয় ছিল তাঁদের জমি অধিগ্রহণ করা হলে তাঁরা কোথায় যাবেন। এছাড়া তাঁদের সংস্কৃতি নষ্ট হতে পারে। সেইসব কথা চিন্তা করেই সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আদিবাসীদের কোনও নতুন ফ্ল্যাটবাড়ি নয়, বদলে মহম্মদবাজার ব্লকেই গ্রামীণ পরিবেশেই আদিবাসীদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।”

পাচামিতে বিক্ষোভের আঁচ 

কিন্তু, তারপরেও পাচামি এলাকায় বিক্ষোভের আঁচ বিন্দুমাত্র কমেনি। সম্প্রতি, খনি বিরোধী আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে পাচামি এলাকার অনতিদূরেই ঝাড়খণ্ডের জেশা কাঠপাহাড়ি এলাকায় পোস্টার দেখা যায়। সেই পোস্টারে লেখা ছিল “হাম আপকে সাথ হ্যায়।” নীচে লেখা ‘সিপিআই মাওবাদী’। যা নিয়ে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

গত সপ্তাহে শনিবার পাচামি এলাকায় মিছিল করেন আদিবাসী মহিলারা। লাঠি-তির-ধনুক নিয়ে তাঁরা মিছিলে নামেন। পুলিশি জুলুমের প্রতিবাদে তাঁদের এই মিছিল বলে  অনুমান করা হয়। গত বৃহস্পতিবার আট আদিবাসী মহিলাকে নির্মমভাবে মেরে রক্তাক্ত করার অভিযোগ উঠেছিল। দেউচা পাচামির ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ ওঠে।

কেন প্রতিবাদ?

দেউচা পাচামি প্রকল্প চালু হলে, মূলত খনি এলাকায় কয়লা উত্তোলনের কাজ শুরু হবে। এর ফলে আদিবাসীদের যে জমি ও বাড়ি তা সরকারের অধীনে চলে যাবে। পরিবর্তে যে পুনর্বাসনের প্যাকেজ দেওয়া হবে। কিন্তু সেই প্যাকেজ তা যথাযথ ও যথেষ্ট নয় বলেই মনে করছেন তাঁরা। পাশাপাশি, তড়িঘড়ি ওই এলাকা পরিবরর্তিত হতে পারে আসানসোল-রানিগঞ্জের মতো এক বিরাট শিল্পতালুকে। ফলে, গোটা ভৌগোলিক ও সামাজিক পরিবেশটাই বদলে যেতে পারে। সেদিক থেকে আদিবাসীরা কোথায় যাবেন, সেই আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। তাঁদের দাবি, পূর্ব পুরুষেরা এত দিন ধরে যেখানে রয়েছেন, সেই জায়গা ছেড়ে যাবেন না তাঁরা। সেই কারণেই এই প্রতিবাদ।

তৃণমূলের মিছিলে চড়াও হন আদিবাসী মহিলারা

বৃহস্পতিবার দেউচা পাচামি এলাকায় বিভিন্ন গ্রামে একটি মিছিলের আয়োজন করে তৃণমূল কংগ্রেস। মিছিলকারীদের দাবি, এলাকার মানুষেরা এই মিছিলের আহ্বান করেছিলেন। মিছিলে ছিলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের সকলেই। ছিলেন সদ্য তৃণমূলে যোগদানকারী আদিবাসী নেতা সুনীল সরেন। কিন্তু সেই মিছিল এগোতেই শুরু হয় অশান্তি।

মিছিল শুরুর কিছুক্ষণ পরেই হঠাৎই তৃণমূল নেতাকর্মীদের উপর চড়াও হন আদিবাসী মহিলারা। লাঠিসোটা নিয়ে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। মারধর করা হয় সাংবাদিকদেরও। ছিঁড়ে ফেলা হয় পোস্টার, ফেস্টুন ইত্যাদি। আক্রমণকারী মহিলাদের দাবি, তাঁরা এই এলাকায় কোনও কয়লাখনি চান না। সে কারণে এখানে কোনও মিছিলও হতে দেবেন না। ভিটে ও জমি ছাড়তে নারাজ মহিলাদের কথায়, “কিচ্ছু চাই না আমরা। কীসের দেউচা পাচামি? কীসের মিছিল? আমরা কিচ্ছু চাই না। যেমন আছি তেমন থাকব। নিজেদের খাব। এখানেই থাকব।”

এই ঘটনার পর অনুব্রত মণ্ডল দাবি করেন, ওই মহিলাদের মদ খাইয়ে শিখিয়ে পড়িয়ে আনা হয়েছিল। তৃণমূল নেতা দাবি করেন, “সাত- আটজন মহিলাকে মদ খাইয়ে শিখিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে মিছিল সাকসেসফুল হয়েছে।”

পুলিশি জুলুমের অভিযোগ

অভিযোগ, অতর্কিতে প্রতিবাদী আদিবাসী মহিলাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পুলিশ। আট আদিবাসী মহিলাকে নির্মমভাবে মেরে রক্তাক্ত করা হয়েছে বলেও দাবি। দেউচা পাচামির ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ তুলেছে বিজেপি। এখানেই শেষ নয়, বিজেপির দাবি, হামলার ছবি যত মোবাইলে ছিল সব মুছে ফেলতে বাধ্য করেন পুলিশ কর্মীরা। বিজেপির দাবি, আহতদের গ্রাম থেকে বের হওয়া যাবে না বলে ফরমান জারি করেছে পুলিশ ও তৃণমূল।

সিঙ্গুরের মতো জোর করে জমি অধিগ্রহণ করা হবে না, এমনটা আগেই জানিয়েছিলেন  মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আদিবাসীদের পুনর্বাসনের জমি দেওয়া হবে সেকথাও আগেই ঘোষণা করেছে সরকার। তারপরেও কিছুতেই শান্ত হয়নি পাচামি এলাকা। তবে বর্তমানে আদিবাসীদের এভাবে স্বেচ্ছায় জমিপ্রদানে কিছুটা বদল আসতে পেরেছে খনিঅঞ্চলে এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ।

আরও পড়ুন: Siliguri Municipal Election: নির্বাচনে আদর্শ বিধি ‘ভেঙে’ জনসংযোগে গৌতম, কমিশনে নালিশ পদ্মের

 

 

Next Article