দার্জিলিং: লোকসভা ভোটে পাহাড়ে বিজেপির প্রার্থী কে হবে? তা নিয়ে ইতিমধ্যেই গুঞ্জন শুরু হয়ে গিয়েছে। বিশেষ করে দু’দিন আগেই কার্শিয়াঙের বিজেপি বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা দাবি করেছেন, স্থানীয় কাউকেই প্রার্থী করতে হবে। অর্থাৎ, পাহাড়ের ‘ভূমিপুত্র’ গোছের কাউকেই প্রার্থী চাইছেন বিষ্ণুপ্রসাদ। বিধায়ক এভাবে প্রকাশ্যে মুখ খোলায় বেজায় অসন্তুষ্ট বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও কড়া কথা শুনিয়ে দিয়েছেন। তবে বিষ্ণুপ্রসাদের সেই দাবির পরই আচমকা শিলিগুড়ি শহরে হাজির পাহাড়ের ‘ভূমিপুত্র’ হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। বিজেপি বিধায়কের ‘ভূমিপুত্র’ প্রার্থীর পক্ষে সওয়াল, আর তারপরই শ্রিংলার এই সফর নিছকই কাকতালীয়? নাকি নেপথ্যে রয়েছে অন্য কোনও সমীকরণ? তা নিয়েই জোর চর্চা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
দীর্ঘদিন ভারতের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন তিনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব সামলেছেন। বাংলাদেশে, থাইল্যান্ডেও কাজ করেছেন। জি-২০ বৈঠকে ভারতের প্রধান কো-অর্ডিনেটরের ভূমিকাতেও দেখা গিয়েছিল তাঁকে। এই হর্ষবর্ধন শ্রিংলা ছোটবেলায় জীবনের একটি বড় সময় কাটিয়েছেন পাহাড়ে। তাঁর পারিবারিক যোগও রয়েছে পাহাড়ের সঙ্গে। গত বছরের পুজোর আগে দার্জিলিং ও ডুয়ার্সের বেশ কিছু সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও যুক্ত থাকতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। লোকসভায় তিনি বিজেপির প্রার্থী হচ্ছেন কি না, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছিল সেই সময় থেকেই। এরপর গত বছর সজল ঘোষের লেবুতলা পার্কের ‘রাম মন্দির’-ও দেখতে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে আবার জয় শ্রীরাম স্লোগানও উঠেছিল শ্রিংলার বক্তব্যের সময়।
শুক্রবার সকালে বিবেকানন্দের জন্মজয়ন্তীতে হঠাৎ শিলিগুড়ি শহরে হাজির প্রাক্তন বিদেশসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। শিলিগুড়ির ঝংকার মোড় এলাকায় বিবেকানন্দের মূর্তিতে মাল্যদান করেন তিনি। বিস্ত্র বিতরণ কর্মসূচিতে অংশ নেন। চা চক্রে যোগ দেন। বিস্তর কর্মসূচি। তাহলে কি ‘ভূমিপুত্র’ শ্রিংলাই এবার বিজেপির পাহাড়ের প্রার্থী? জল্পনা আরও বেড়েছে শ্রিংলার বক্তব্যেই। তিনি বলেন, “দেশের সেবা করেছি দীর্ঘদিন। এখন আমি চাই, দার্জিলিং-শিলিগুড়িতে ফিরে এসে লোকজনের সঙ্গে সমন্বয় করতে। এখানে থাকারও পরিকল্পনা রয়েছে আমার।”
হর্ষবর্ধন শ্রিংলার সঙ্গে এদিন বিজেপির স্থানীয় কিছু নেতাদেরও দেখা গিয়েছে। তবে শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ এদিন ছিলেন না তাঁর সঙ্গে। শ্রিংলা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করায় শঙ্কর ঘোষের বক্তব্য, “হর্ষবর্ধনবাবুর বিষয়ে আমি জানি না। শুনলাম, দেখলাম কয়েকজনের সঙ্গে ঘুরছেন। সঙ্গে কয়েকজন পরিচিত মুখও দেখলাম। আমি বিষয়টি জানি না। উনি এসেছেন, এটা দলের কোনও কর্মসূচি কি না জানি না। উনি কেন ঘুরছেন, উনিই বলতে পারবেন।”
একইসঙ্গে পাহাড়ের সাংসদ রাজু বিস্তাকেও ঢালাও সার্টিফিকেট দিলেন তিনি। বললেন, “আমি শুধু এটা জানি, বর্তমান সাংসদ রাজু বিস্তা আমাদের রাজ্যের সবথেকে জনপ্রিয় সাংসদদের মধ্যে একজন। ওনার কাজ, ওনার সময় দেওয়া, পাহাড়-সমতলের যোগসূত্র বজায় রেখে কাজ করা সত্যিই উল্লেখযোগ্য। কেন্দ্রের বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা শুধু দার্জিলিং লোকসভায় নয়, গোটা উত্তরবঙ্গের জন্য নিয়ে আসায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। আমি আমার সাংসদের কাজে ব্যক্তিগতভাবে খুশি।”