কলকাতা: যত কাণ্ড সেই শ্রীভূমিতেই (Durga Pujo 2021)। ভিড়ের চাপে বেসামাল শ্রীভূমি। অষ্টমীতে বন্ধ ‘বুর্জ খলিফা’। শ্রীভূমির ভিড় ঠেকাতে ট্রেন পরিষেবায় কোপ। পুলিশের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা সুজিত বসুর। অষ্টমী থেকেই পরিস্থিতি অত্যন্ত ঘোলা! তারই মধ্যে ঘৃতাহুতি করলেন খোদ তারই দলের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় (Kalyan Banerjee)। সুজিত বসুকেই (Sujit Bose) বিঁধে তিনি বললেন, ‘সুজিতের আরও একটু রেসপনসিবল হওয়া উচিত ছিল।’
শ্রীরামপুরের আরএমএস ময়দানে নিজের এলাকায় নবমীর পুজোতে ব্যস্ত কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। গতকালের বুর্জ খলিফার আলো বন্ধের পর থেকে চোটে রয়েছেন সুজিত বসু। নবমীর পুজোর ফাঁকেই কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, “সুজিত এমনিতে ভালো ছেলে। কিন্তু এই ব্যাপারে আরও একটু বেশি রেশপনসিবেল হওয়া উচিত ছিল।”
বিতর্কে উস্কে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইঙ্গিত শ্রীভূমি স্পোর্টিংয়ের পুজোয় কিছুটা হলেও আইন লঙ্ঘিত হয়েছে। কল্যাণের কথায়, “আইন অনুযায় বিমানবন্দরের ২০ থেকে ২৫ কিমি রেডিয়াসে কোনও রকম কনস্ট্রাকশন বা লাইট অনুমতি নিয়ে করতে হয়। এটা এক্ষেত্রে করা হয়েছে বলে আমার মনে হয় না। কেন আমি এত ভিড় ডাকব?”
শ্রীভূমির পুজো উদ্যোক্তাদের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে তিনি প্রশ্ন তোলেন, “কোভিডের সময়ে আমার উদ্দেশ্য হল পুজো হচ্ছে হোক, ভিড় করতে দেব না। ক্রাউড ম্যানেজমেন্ট একটা বড় ব্যাপার। এমন কিছু একটা করা উচিত নয়, যেখানে লক্ষ লক্ষ লোক এল। তাতে তো আমাদের সরকারি উদ্দেশ্যটাই ব্যাহত হয়েছে। খোলা মেলা করে রাখা উচিত ছিলো।”
গোটা ঘটনার সূত্রপাত সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ। মণ্ডপে মাত্রাতিরিক্ত ভিড় সামলাতে হিমশিম খায় পুলিশ। এরপর বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের তরফে পুজো উদ্যোক্তাদের কাছে অনুরোধ করা হয় যাতে বুর্জ খলিফার আলো নিভিয়ে দেওয়া হয়। এই নিয়ে পুজো উদ্যোক্তাদের সঙ্গে দফায় দফায় বচসা, কথা কাটাকাটি হয় পুলিশের। মানুষের নিরাপত্তার কথা ভেবেই দর্শনার্থীদের প্রবেশাধিকার বন্ধের সিদ্ধান্ত, তুঙ্গে ছিল কথা কাটাকাটি, পুজো বন্ধ করে ঘট পুজো করার ভাবনা, মণ্ডপ থেকে পুলিশ প্রহরা তুলে নেওয়ার আর্জি- এই সব মিলিয়ে গোটা পরিস্থিতি অষ্টমী থেকেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
অষ্টমীতে মাঝরাত গড়ানোর পরই সাংবাদিক সম্মেলন করে এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়। উচ্চ পদস্থ পুলিশ কর্তাদের উপস্থিতিতে দমকলমন্ত্রী তথা পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা সুজিত বসু জানিয়ে দেন, আজ, অর্থাত্ নবমী থেকে কোনও দর্শনার্থী শ্রীভূমি পুজো মণ্ডপে ঢুকতে পারবেন না। তবে পুজোর অনান্য উপাচার স্বাভাবিক নিয়মেই চলবে।
শাসকদলের একাধিক মন্ত্রী একাধিক পুজোর সঙ্গে জড়িত। কিন্তু এবারের সব চর্চার শিরোনামে উঠে এসেছে বুর্জ খলিফার নাম। নেপথ্যে উঠে এসেছে মন্ত্রী সুজিত বসুর নামও। একা বুর্জ খলিফাই জনস্রোত টেনেছে গোটা মহানগরীর। বিতর্কও অবশ্য কম হয়নি। কিন্তু সব বিতর্ক মাত্রা ছাড়িয়েছে অষ্টমীর রাতে। কার্যত মণ্ডপের দর্শনার্থীদের জন্য ‘নো এন্ট্রি’ ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছেন মন্ত্রী।
সুউচ্চ এই মণ্ডপের স্পটলাইটে বিমান অবতরণে অসুবিধা হচ্ছে বলে থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। ভিড়ে করোনাভাইরাস–বিধি লঙ্ঘন হচ্ছে বলেও খবর। তবে গতকালের বিতর্ক এড়িয়ে মন্ত্রী বলেছেন, “উপরের লাইটটা বন্ধ রেখেছি। কারণ বহু মানুষ ওই লাইটটি দেখার জন্য দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন। অন্য কোনও কারণ নেই। কোনওভাবেই যাতে ভিড় না হয় সেই জন্যই এই পদক্ষেপ। আমরা নতুন ভাবনা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চেয়েছিলাম। আমরা সফল হয়েছি।” আপাতত, মণ্ডপের সামনে কড়া পুলিশ প্রহরা। আবাসিকরা ছাড়া আর কেউই ঢুকতে পারছেন না মণ্ডপে। তাও আবার পরিচয়পত্র দেখিয়ে। তবে এসবের মাঝে বিতর্কে আরও ঘি ঢাললেন মন্ত্রীরই দলের সাংসদ।