মালদহ: ‘বিদ্যুৎ বিল না দিলে লাইন কেটে দেওয়া হবে’ – এই ভয় দেখিয়ে বিদ্যুৎ বিলের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ। বহু বাড়ি হাজার হাজার করে টাকা তুলে লক্ষাধিক টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে এক বিদ্যুৎকর্মীর বিরুদ্ধে। এবার হাতেনাতে সেই বিদ্যুৎকর্মীকে পেয়ে চড়াও গ্রামবাসীরা। চলে বেধড়ক কিল চড় ঘুষি। পুলিশ গিয়ে আটক করে ওই অস্থায়ী কর্মীকে। ঘটনা মালদার মানিকচকের নাজিরপুরের।
জানা যাচ্ছে, গত অক্টোবর মাসে নাজিরপুর এলাকার বাসিন্দাদের বিদ্যুতের মিটার রিডিং করে যান বিদ্যুৎ দফতরের অস্থায়ী কর্মী গণেশ ঘোষ। মিটার রিডিংয়ের সময় যে সমস্ত পরিবারের পুরুষরা বাইরে কর্মরত অবস্থায় রয়েছে সেই সমস্ত বাড়ি চিহ্নিত করেন সেই বিদ্যুৎ দফতরের কর্মী। বেশ কিছুদিন পর সেই পরিবারগুলির কাছে গিয়ে তাঁদের বকেয়া বিল মেটানোর জন্য চাপ দেন সেই বিদ্যুৎ দফতরের কর্মী। এমনকি বিল না দিলে তাদের বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়া হবে বলে জানান।
পাছে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, এই ভয়ে যাঁদের বাকি ছিল, তাঁরা নিজেদের বকেয়া বিল সেই বিদ্যুৎ দফতরের অস্থায়ী কর্মীদের হাতে তুলে দেন। অভিযোগ বকেয়া বিদ্যুৎ বিল দিলেও সেই বিলের টাকা জমা পড়েনি তাঁদের নামে। তাঁরা দফতর মারফত জানতে পারেন, এখনও পুরনো বিল বাকি পড়ে রয়েছে।
এই খবর জানা মাত্রই, নাজিরপুরের বাসিন্দারা বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীর ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন গ্রামবাসীরা । এদিন আবারও নাজিরপুর এলাকায় ওই অস্থায়ী বিদ্যুৎ কর্মী আবার বিল চাইতে যান। আর তখনই তাঁকে আটক করেন এলাকাবাসীরা। তাঁকে মারধর করতে উদ্যত হয়।পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে যায় মানিকচক থাকার পুলিশ। ওই বিদ্যুৎ কর্মীকে আটক করা হয়েছে। মানিকচক থানায় গণেশ নামে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
পুলিশ গণেশ ঘোষকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এলাকার আর কোন কোন অঞ্চলে তিনি এইভাবে প্রতারণা করেছেন, তাঁর সঙ্গে কে বা কারা যুক্ত রয়েছে, তা জানতে চাইছেন তদন্তকারীরা।
পিঙ্কি মণ্ডল নামে স্থানীয় গৃহবধূ বলেন, “আগের বিল তার ১১৯৩ টাকা হয়। গণেশ আশ্বাস দিয়েছিল, হাজার টাকা দিলেই হয়ে যাবে। আর কোন টাকা দিতে হবে না। তার কথা মতো টাকা দিলেও নতুন বিল আসতেই দেখা যাচ্ছে পুরনো বিল বকেয়াই রয়েছে। তখনই বিষয়টা বুঝে যাই। আমার সঙ্গে নয়, আরও অনেকের সঙ্গে এই একই কাজ করেছে।”
গ্রামবাসীদের অভিযোগ স্বীকার করে নিয়েছেন অস্থায়ী বিদ্যুৎ দফতরের কর্মী গণেশ ঘোষ। তাঁর বক্তব্য, এলাকার বেশ কিছু গ্রাহকের বিল যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে তিনি দিতে পারেননি। শীঘ্রই তাঁদের বকেয়া বিল দেওয়া হবে। মানিকচক থানার আইসি পার্থ সারথী হালদার জানিয়েছেন, গ্রামবাসীদের অভিযোগের ভিত্তিতে অস্থায়ী বিদ্যুৎ কর্মীকে আটক করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। দফতরের তরফ থেকে সচেতন করা হয়েছে, হয় অনলাইনে বিল মেটান। না হলে দফতরে এসে। এভাবে বাড়ি বয়ে আসা অস্থায়ী কর্মীদের হাতে টাকা দেওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই।