মুর্শিদাবাদ: ২০২৬ সালে এ রাজ্যে বিধানসভা ভোট। তার আগে ছ’টি কার্যত সেমিফাইনালের মতো। আন্দাজ করা যেতে পারে কী হতে পারে রেজাল্ট। সেই কারণেই কি এবারের ভোটে একা লড়ে নিজেদের অবস্থান বুঝতে চাইলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার? আগামী ভোটের আগে কতটা দুধ, কতটা জল বুঝে নিতে চাইলেন তিনি? কারণ, উপনির্বাচনে একা লড়ে মুখ থুবড়ে পড়েছে কংগ্রেস। যদিও শুভঙ্করবাবুর বক্তব্য, তাঁরা দীর্ঘ সময়ের পরে নিজেদের প্রতীক ও পতাকাকে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি। তবে রেজাল্ট খারাপ হওয়ার পর থেকেই জনীতির অলিগলিতে ঘুরছে একটাই প্রশ্ন জোট হলে মুখ রক্ষা হতে পারত কংগ্রেস? অতীত ঘাঁটলে যদিও খুব একটা আশানরূপ কিছু ফলাফল মিলছে না, তবুও এই পরাজয়ের পর কার্যত জোটের পক্ষেই সওয়াল করেছেন প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীরপ রঞ্জন চৌধুরী। তিনি যে এখনও ঘোলেই ভরসা রাখছেন হাবেভাবে তা বুঝিয়ে দিয়েছেন।
বামেদের সঙ্গে জোট হলে কি ফলাফল ভাল হত? প্রশ্নের উত্তরে কার্যত দায় নেতৃত্বের দিকে ঠেলেই একপ্রকার অধীর বলেন, “আমি জানি না জোট কে করবে না করবে। বামেরা কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করেছে কি না। বা কংগ্রেস বামেদের সঙ্গে জোট করছে কি না জানা নেই। যাঁরা দায়িত্বে আছে তাঁদের কাছে কী প্রস্তাব এসেছিল জানা নেই।” এরপর জোটের পক্ষে সওয়াল করে কংগ্রেস নেতা বলেন, “তবে আমি যতদিন দায়িত্বে ছিলাম ২০১৬ সালে অবশ্যই জোট করেছিলাম। সেই সময় তৃণমূলের অবস্থা খারাপ করে দিয়েছিলাম। সেদিন যদি তৃণমূলকে আরএসএস-বিজেপি সমর্থন না করত এ বাংলায় ২০১৬ সালে পরিবর্তন হত। আমরা কথা শুনতে অদ্ভুত লাগলেও পরিসংখ্যান সেই কথাই বলছে। সেই সময় বিজেপির ভোট তৃণমূলকে জিতিয়েছিল। সেদিনই গল্প শেষ হয়েছিল। তারপর আমরা পারিনি। আমাদের ধ্বংস করে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। আমাদের উপর আক্রমণ করা হয়েছে। আমরা দুর্বল হয়েছি। তবে দুর্বল হলেও ভাঙতে দিইনি যতদিন আমি দায়িত্বে ছিলাম। আর তাই এ কথা যাঁরা দায়িত্বে আছে তাঁদের জিজ্ঞাসা করবেন।” তবে অধীর এ কথা বললেও ভোটের রেজাল্ট আদৌ তেমনটা নয় বলেই মতামত ওয়াকিবহাল মহলের।
বস্তুত, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি থাকাকালীন বাম-কংগ্রেস জোট করে রাজনীতিতে নেমেছে। গত লোকসভা ভোটেও তার অন্যথা হয়নি। তবে ফলাফল ভাল না হলেও একমাত্র মালদহ দক্ষিণ কেন্দ্র থেকে ঈশা খান চৌধুরী গড় ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিল। তবে পরাজিত হয়েছিলেন পাঁচবারের সাংসদ অধীর নিজে। তবে এবারের উপনির্বাচন হল উল্টো। প্রদেশ কংগ্রেসের দায়িত্ব পাওয়ার পর শুভঙ্কর সরকারের নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস ‘ঢাল-তলোয়ার’ নিয়ে একাই নামল যুদ্ধের ময়দানে। কিন্তু লাভের লাভ হয়নি। তবে কি জোট হলে ফলাফল ভাল হত?
শুভঙ্কর যদিও জানিয়েছেন, “পশ্চিমবঙ্গের ৬ টি বিধানভা উপনির্বাচনে আমরা দীর্ঘদিন পর সবগুলো আসনে আমাদের পতাকা ও প্রতীক নিয়ে লড়াই করেছি। উল্লেখযোগ্য ভাবে গত বিধানসভা নির্বাচন ‘২১ এবং গত লোকসভা নির্বাচন’২৪ এর তুলনায় কোচবিহারের সিতাই কেন্দ্রে কংগ্রেসের ভোট প্রচুর পরিমাণে বেড়েছে। অন্য কেন্দ্রগুলিতেও আমরা দীর্ঘ সময়ের পরে নিজেদের প্রতীক ও পতাকাকে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি।” অর্থাৎ কংগ্রেস নেতার এই বক্তব্যে কার্যত স্পষ্ট তিনি ‘একলা চলো’ নীতিতেই বিশ্বাসী। তাই আগামীর ভোটে তাদের অবস্থান কী থাকে এখন দেখার সেইটাই।