দুর্গাপুর: বালি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্যে রীতিমতো বিপত্তির মুখে পড়েছে দামোদরের নিম্ন উপত্যকার বাসিন্দারা। বন্যা পরিস্থিতি থেকে শুরু করে একাধিক বিপদ গিয়েছে। বারবারই তাঁরা অভিযোগ করেছেন অবৈধ বালি পাচারের (Sand Smuggling) জেরেই নদীগুলির নাব্যতা কমেছে। ফলে সমস্যায় পড়েছেন সাধারণ মানুষ আর মুনাফা লুটেছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। অবশেষে দামোদর-অজয় নদ চত্বরে বালিপাচারে যুক্ত ‘কিং পিং’ পারভেজ আলম সিদ্দিকীকে গ্রেফতার করল পুলিশ। তদন্তকারীদের অনুমান, ‘কান টানলে মাথা আসবে’। পারভেজের গ্রেফতারির দৌলতে মূল মাথাগুলিকে শনাক্ত করাও সম্ভব হবে।
আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট সূত্রে খবর, শনিবার সন্ধেয় বিহারের মজফবপুর থেকে গোয়েন্দা বিভাগের আধিকারিকরা পারভেজকে গ্রেফতার করে দুর্গাপুরে নিয়ে আসেন। রবিবার তাঁকে দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে পেশ করা হয়। পারভেজকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে তদন্ত করার আবেদন জানায় পুলিশ। আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করে। পারভেজকে ১৪ দিন গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে দুর্গাপুর মহকুমা আদালত।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে পশ্চিম বর্ধমান ও বীরভূম জেলা সহ একাধিক জায়গায় অবৈধভাবে বালিঘাট চালাতেন পারভেজ। কয়েক’শো কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে বালি পাচার করার অভিযোগ রয়েছে পারভেজের বিরুদ্ধে। বেআইনি বালি কারবারের বিরুদ্ধে অভিযানে নেমে কয়েকজনকে গ্রেফতারের পরেই অন্যতম পান্ডা পারভেজের নাম উঠে আসে।
উল্লেখ্য, গত কয়েকবছর ধরে পশ্চিম বর্ধমানের অন্ডাল, পাণ্ডবেশ্বর, জামুড়িয়া, কাঁকসা জুড়ে বালি মাফিয়াদের দাপট ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়েছে। দামোদরের বালির চাহিদাও বিপুল। সেই সুযোগই নিয়েছে বালি মাফিয়ারা।
গ্রিন ট্রাইবুনালের নির্দেশিকাকে উপেক্ষা করে দামোদর, অজয় নদের বুক চিরে মেশিন বসিয়ে চলত বালি উত্তোলন।
ভূমি রাজস্ব দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রিন ট্রাইবুনালের নির্দেশ অনুযায়ী, বর্ষায় নদী থেকে বালি তোলা নিষিদ্ধ। কিন্তু বৈধ বালি ব্যবসায়ীরা এপ্রিল-মে মাস থেকে ব্যবসার জন্য নদী তীরবর্তী জায়গায় বালি মজুত করে।
সূত্রের খবর, সেই মত মজুত বালির পরিমাণ অনুযায়ী ১৬৫ টাকা প্রতি ১০০ সিএফটি বালির রয়েলটি ধার্য হয়। তা জমা দেওয়ার পর ভূমি রাজস্ব দফতর চালান ইস্যু করে। বৈধঘাট থেকে বালি তুললেও বালি মজুতের কোনও অনুমতি না থাকায় অবৈধ বালি মজুত করা হচ্ছে বলে এমনই অভিযোগ করেন সংশ্লিষ্ট ব্লকের বিএলআরও। সেইমতো তদন্তে নামে পুলিশ। চলে ধরপাকড়, জিজ্ঞাসাবাদ। অবশেষে গ্রেফতার করা হয় পারভেজকে।
নদী থেকে অবৈধ বালি উত্তোলন কোনও নতুন ঘটনা নয়। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে এই অবৈধ বালি উত্তোলন করা হয়েছে। এক প্রশাসনিক আধিকারিক জানিয়েছেন, নদীতীরে ১০০ মিটার দূরে দূরে বালি তোলায় বরাবরই নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু বহু জায়গাতেই ১০০ মিটারের মধ্যে বালি তোলা হচ্ছে। অনেক জায়গায় আবার জলপ্রবাহ রুখে নদীর মাঝবরাবর বাঁধ দেওয়া হচ্ছে। ফলে পাড় ঘেঁষে জলস্রোত বইতে থাকায় ভূমিক্ষয় ঘটছে।
বালি মাফিয়া রুখতে কড়া পদক্ষেপ করেছে রাজ্য সরকার। নতুন স্যান্ড মাইনিং পলিসির কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। নবান্নের সাংবাদিক বৈঠকে মমতা জানান, বালি খনন নিয়ে অনেক অভিযোগ সামনে আসছে। তাই ‘স্যান্ড মাইনিং পলিসি ২০২১ আনা হয়েছে। স্থানীয় মাফিয়ারা বালি, কয়লা, পাথর পাচার করে বলে অনেক জায়গায় অভিযোগ উঠেছে। আবার কাউকে খননের দায়িত্ব দিলে তিনি চারগুণ বেশি খনন করে নেন। ফলে প্রাকৃতিক সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। এতদিন কেবল জেলাশাসকের হাতেই খননের দায়িত্ব থাকত। সেই দায়িত্ব এ বার মাইনিং কমিটির হাতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন মুখ্যমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: Dilip Ghosh: তৃণমূলে যোগ না দিলে খেলায় ‘না’! লিয়েন্ডার নিয়ে বিস্ফোরক দিলীপ