পূর্ব মেদিনীপুর: আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি উপকূলে নির্বাচন। কিন্তু, ‘শুভেন্দু গড়ে’ নির্দল-কাঁটায় জেরবার শাসকদল। দলের অন্দরেই অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে জেলা কো-অর্ডিনেটর হয়েও ক্ষোভ প্রশমনে ব্যর্থ সুব্রত বক্সী (Subrata Bakshi)। প্রার্থীপদ নিয়ে লাগাতার বিক্ষোভের জেরেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বুধবার, কাঁথির জনমঙ্গল প্রেক্ষাগৃহে এগরা-কাঁথি পুর নির্বাচনী কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেন রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী।
পুরভোটে তৃণমূলের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পর্যবেক্ষক সুব্রত। সূত্রের খবর, তাঁর পর্যবেক্ষক হয়ে থাকা সত্ত্বেও দলের অন্দরেই নানা ক্ষোভ বিক্ষোভ দেখা গিয়েছে। প্রার্থীপদ না পেয়ে অনেকেই নির্দল হয়ে লড়তে প্রস্তুত। এদিকে, দলে নতুন আসা সদস্যদের অনেকেই টিকিট পেয়েছে। ফলে আদি কর্মীরা সেসব ভাল চোখে দেখছে না। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই গুঞ্জন শুরু হয়েছে। খাস শুভেন্দু অধিকারীর গড়ে তৃণমূলের এমন বিভাজন দলের সার্বিক ছবিটাও যে বিশেষ ভাল করে না এমনটাও মনে করছেন কেউ কেউ।
সূত্রের খবর, সেইসব বিক্ষুব্ধ কর্মীদের অন্য দায়িত্ব দেওয়ার কথা চিন্তা করছে দল। ক্ষোভ প্রশমন করতেই এই পন্থা নেওয়া, বলেই মনে করছেন কেউ কেউ। যদিও সাংবাদিক বৈঠকে এ নিয়ে বিশেষ মন্তব্য করেননি সুব্রত।
তবে, কাঁথির বৈঠক প্রসঙ্গে মৎস্যমন্ত্রী অখিল গিরি বলেছেন, “কিছু বিষয় নিয়ে কেউ কেউ ক্ষুব্ধ হয়েছে। দুঃখ-ক্ষোভ ভুলে তাঁদের প্রত্যেককেই দলের কাজে শামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন রাজ্য সভাপতি। আগামীতে তাঁদের অন্য পদে স্থান দেওয়া হবে।” এদিকে বিক্ষোভের আঁচ পৌঁছেছে তাম্রলিপ্ত পুরসভাতেও। সেখানে ৪ নম্বর ওয়ার্ডে নির্দল প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর ভানুপদ সাহা। তাঁকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি।
নির্বাচনী কমিটির বৈঠক শেষে এ ব্যাপারে ভানুপদবাবুর সঙ্গে আলোচনায় বসেন সেচমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র। প্রার্থীপদ না প্রত্যাহার করলে বৃহস্পতিবার দল তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে দল এমনটাই খবর। সব মিলিয়ে দলের অন্দরে ক্ষোভের জেরে নির্বাচনে এই জেলায় বিপাকে পড়তে পারে ঘাসফুল বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ।
উল্লেখ্য, ১০৮ পুরভোটে তৃণমূল ‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ মেনে প্রার্থীতালিকা ঘোষণা করেছে। সাংবাদিক বৈঠকে তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়ে দেন টিকিট না পেলে নির্দল হয়ে দাঁড়ানো যাবে না। বুধবার রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী তথা জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য ফিরহাদ হাকিম স্পষ্টই বলেছেন, ‘‘কেউ কাউন্সিলর হবেন, কেউ মেয়র। কিন্তু মনে রাখতে হবে দিনের শেষে কারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৈনিক হতে পারলেন।’’
তবে কেবল মেদিনীপুর নয়, বাঁকুড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উত্তর দিনাজপুর-সহ একাধিক জেলায় টিকিট না পেয়ে তৃণমূল কর্মীরা নির্দল হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। অনেকেরই অভিযোগ তাঁরা শাসক দলের হুমকিও পেয়েছেন। এরইমধ্যে, দলীয় নির্দেশ না মেনে নির্দল প্রার্থী হওয়ার অভিযোগে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সাতটি পুরসভার মধ্যে পাঁচ পুরসভার ১৫ জন প্রার্থী-সহ মোট ২০ জনকে বহিষ্কার করেছে তৃণমূল। পাশাপাশি, খড়গপুর শহরের যুব তৃণমূল সভাপতি অসিত পাল এবং ক্ষীরপাই শহর তৃণমূলের সভাপতি মনোজ হালদারকেও অপসৃত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: Malda: ১০ বছরে শুধু নীল-সাদা রঙ, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্টের মুখে বাম আমলে তৈরি পানীয় জলের প্ল্যান্ট
আরও পড়ুন: Bengal BJP: বিধানসভার পর পুরনিগমের নির্বাচনেও কেন পরাজয়? তথ্য-তালাশে বিজেপি