পুরুলিয়া: বিধানসভা নির্বাচনের আগে অনেকেই যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে (BJP)। কেউ দলবদল করেছিলেন, কেউ আবার রাজনীতির নতুন মুখ হিসেবে এসেছিলেন গেরুয়া শিবিরে। ভোটের পর তাঁদের মধ্যে অনেকেই দল ছেড়েছেন। সেই তালিকায় সদ্যই নাম লিখিয়েছেন টলি নায়িকা শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায় (Srabanti Chatterjee)। টুইটারে দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে দলত্যাগ করেন তিনি। তাঁর দলত্যাগকে কার্যত ‘ম্যানহোলের ময়লা’ বলে তীব্র কটাক্ষ করলেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় (Kalyan Banerjee)।
ব্যক্তিগত কাজে বৃহস্পতিবার পুরুলিয়ায় যান সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে শ্রাবন্তীর দলত্যাগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “গঙ্গা বয়। গঙ্গার পাশে অনেক শহর থাকে। সেই শহরের ময়লা জমে ম্যানহোলে। ম্যানহোল খুলে দিলে সেই ময়লা গঙ্গায় মিশতে চাইবে। গঙ্গার জলে ভাসবে। এর থেকে বেশি কী হবে!”
বর্ষীয়ান তৃণমূল সাংসদের এই কটাক্ষ নজর এড়ায়নি রাজনৈতিক মহলের। সাংসদ যে পরোক্ষে প্রাক্তন বিজেপি তারকা নেত্রীকে ‘ম্যানহোলের ময়লা’ ও তৃণমূলকে ‘গঙ্গা’ বলে উল্লেখ করে কটাক্ষ হেনেছেন তা অস্বীকার করতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট মহল। যদিও, বিজেপির পাল্টা দাবি, শ্রাবন্তীর দলত্যাগে দলের সংগঠনের কোনও ক্ষতি হবে না। কারণ, শ্রাবন্তী বিধায়কের টিকিট পেলেও নির্বাচনে জয়লাভ করেননি। তারপরে তাঁকে আর দলের কোনও সাংগঠনিক কাজে সেভাবে দেখাও যায়নি। তাই তিনি দলে থাকা বা না থাকাতে কোনও পরিবর্তনই হবে না বলে দাবি পদ্ম শিবিরের।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার সকালে টুইট করে দল ছাড়ার কথা জানিয়েছেন শ্রাবন্তী। তিনি লিখেছেন, ‘আমি দলের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করলাম।’ দল ছাড়ার কারণ নিজেই জানিয়েছেন শ্রাবন্তী। তিনি দাবি করেছেন, রাজ্যের জন্য কিছু করার কোনও উদ্যোগ নেই বিজেপির। সেই কারণেই দল ছাড়লেন তিনি। শ্রাবন্তী সংগঠনের সঙ্গে তেমনভাবে যুক্ত নয়, তাই দল ছাড়লে দলের তেমন কোনও ক্ষতির সম্ভাবনা নেই, তবে এক তারকা মুখ কমে যাওয়া বিজেপির জন্য ধাক্কা বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ। ট্রেন্ড বলছে, যারা গেরুয়া শিবির ছেড়েছেন, তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন বা তৃণমূলে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এ ক্ষেত্রে শ্রাবন্তী তেমন কোনও পদক্ষেপ করবেন কি না, সেই প্রশ্নও উঠছে।
একুশের নির্বাচনের আগে ঘটা করে বিজেপিতে যোগ দেন টলি অভিনেত্রী শ্রাবন্তী। তৎকালীন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের হাত থেকে পতাকা তুলে নেন তিনি। বেহালা পশ্চিম কেন্দ্রে প্রার্থীও হন। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে লড়েন অভিনেত্রী। নির্বাচনে ৫০ হাজার ভোটে হেরে যান শ্রাবন্তী। ভোটের পর থেকেই আর রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তেমন সক্রিয় হতে দেখেনি অভিনেত্রীকে। এবার দল ছাড়ার কথা নিজেই ঘোষণা করলেন তিনি।
শুধু শ্রাবন্তীই নয়, পার্নো মিত্র, পায়েল সরকার, তনুশ্রীর মতো একাধিক তারকাকে ভোটের ময়দানে নামিয়েছিল বিজেপি। অভিনেতা হিরণ বা ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পালের মতো কয়েকটি নাম বাদে, আর কাউকে দেখা যায়নি জয়ী প্রার্থীদের তালিকায়। ভোটের পর গেরুয়া শিবিরের এই তারকা প্রার্থীদের নগরের নটি বলে সম্বোধন করেন বিজেপি নেতা তথাগত রায়। তাঁদের ভোটে লড়ানোর সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেননি তিনি। শ্রাবন্তী দল ছাড়ার পর তিনি জানান, এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
রাজনৈতিক মহলের মতে শ্রাবন্তী চলে যাওয়ায় কোনও প্রভাব পড়বে না দলে। তিনি সক্রিয় ছিলেন না, সংগঠনের কোনও কাজও করেননি। তাই তাঁর অভাব বোধ হবে না গেরুয়া শিবিরের। তবে এ ভাবে পরপর নেতা-নেত্রীদের দল ছাড়ার ঘটনা, বঙ্গ বিজেপির কাছে একটা ধাক্কা বলে মনে করছেন অনেকেই।
আরও পড়ুন: Kunal Ghosh: শুভেন্দুর উদ্দেশে ‘কুমন্তব্য’, কাঁথি আদালতে কুণালের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের