“আমরা হিন্দু-মুসলিম দেখি না”, হাইকোর্টে ধোপে টিকল না ‘লভ জেহাদ’ মামলা
আদালতের পর্যবেক্ষণ, 'ব্যক্তিগত সম্পর্কের ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ দু’জন মানুষের পছন্দের স্বাধীনতা খর্ব করবে।' বিজেপি বিরোধী দলগুলো দাবি করছে, ‘লভ জেহাদ’ বলে আদতে কিছুই নেই। বিজেপি ধর্মীয় বিভাজনের স্বার্থে এই শব্দের আমদানি করেছে।
TV9 বাংলা ডিজিটাল: ‘লভ জেহাদ’ (Love Jihad) ইস্যুতে বিতর্ক অব্যাহত। একাধিক বিজেপি শাসিত ‘লভ জেহাদ’-এর বিরুদ্ধে আইন আনতে চলছে ঠিকই, কিন্তু এই আইন যে ধোপে টিকবে না সেই ইঙ্গিত এলাহাবাহ হাইকোর্টের (Allahabad High Court) একটি রায়েই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে।
উত্তর প্রদেশের উচ্চ আদালত ‘লভ জেহাদে’র একটি মামলার শুনানিতে তাৎপর্যপূর্ণ কিছু মন্তব্য করেছে। আদালতের পর্যবেক্ষণ, ‘ব্যক্তিগত সম্পর্কের ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ দু’জন মানুষের পছন্দের স্বাধীনতা খর্ব করবে।’ আদালতের এই রায়ের গুরুত্ব অপরিসীম। বিশেষ করে এমন একটা সময় যখন গেরুয়া শিবিরের তরফ থেকে লাগাতার ‘লভ জেহাদ’কে কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে। এবং বিজেপি বিরোধী দলগুলো দাবি করছে, ‘লভ জেহাদ’ বলে আদতে কিছুই নেই। বিজেপি ধর্মীয় বিভাজনের স্বার্থে এই শব্দের আমদানি করেছে।
সম্প্রতি মধ্য প্রদেশ, হরিয়ানা ও উত্তর প্রদেশের (Uttar Pradesh) মতো একাধিক রাজ্য ‘লভ জেহাদ’ ইস্যুতে এসপার-ওসপার করার মনোভাব দেখিয়েছে। বিয়ের আগে বা পরে জোর করে ধর্ম পরিবর্তনকেই ‘লভ জেহাদ’ আখ্যা দিয়েছে তারা। তবে আদালতে সে যুক্তি গ্রাহ্য হওয়ার নয়, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন বিচারপতিরা।
প্রিয়াঙ্কা খারওয়ার নামক এক মহিলা সলামত আনসারিকে বিয়ে করার জন্য গত বছর নিজের ধর্ম পরিবর্তন করেন। প্রিয়াঙ্কার বাবা-মা সেই বিয়েকে বাতিল ঘোষণার দাবিতে ‘লভ জেহাদে’র অভিযোগ তুলে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। সেই মামলার শুনানি শুরু হলে ‘লভ জেহাদ’ বির্তকে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে আদালত কক্ষ।
এলাহাবাদ হাইকোর্ট জানিয়ে দেয়, ‘আমরা প্রিয়াঙ্কা এবং আনসারিকে হিন্দু-মুসলিম হিসেবে দেখছি না। বরং তারা দু’জন বড় হয়ে নিজেদের স্বাধীনতায় কাউকে পছন্দ করেছেন এবং এক বছরের বেশি সময় ধরে সুখে সংসার করছেন। আদলত এবং সাংবিধানিক আদালত সর্বদা সংবিধানের ২১ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুসারে ব্যক্তি স্বাধীনতা রক্ষার ক্ষেত্রে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।‘
আরও পড়ুন: বাংলায় ‘লভ’ এবং ‘জিহাদ’এর সহাবস্থান নেই, মন খুলে ভালবাসুন, বললেন নুসরত
উত্তর প্রদেশের কুশীনগরের বাসিন্দা প্রিয়াঙ্কা গত বছর অগস্ট মাসে সলামত আলিকে বিয়ে করার আগে নিজের প্রেমিকের ইচ্ছানুযায়ী ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। নাম বদলে রাখেন ‘আলিয়া’। কিন্তু সে মাসেই প্রিয়াঙ্কার বাবা-মা সলামতের বিরুদ্ধে একটি এফআইআর দায়ের করেন। কিডনাপিং-সহ পকসো আইনেও মামলা করা হয়। কেননা যে সময় সলমান বিয়ে করেন তখনও প্রিয়াঙ্কার বয়স ১৮ হয়নি বলে তাঁর বাবা-মা দাবি করেছিলেন। বলাই বাহুল্য, কোনও দাবিই আদালতে টেকেনি। আদালত সাফ জানিয়েছে, সম্প্রদায় পরে, মনুষ্যত্ব আগে।