“আইনের চোখে যে পলাতক, সমাজের চোখেও সে পলাতক”, বিমল গুরুং প্রসঙ্গে মুখ খুললেন রাজ্যপাল

প্রতিবারের মতোই এবারেও রাজ্যকে তোপ দাগতে পিছপা হননি রাজ্যপাল। রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিয়ে তিনি বলেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের সময় রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে। রাজ্য বনাম কেন্দ্রের ক্রমাগত বিবাদে ভুক্তভোগী হচ্ছেন রাজ্যবাসী।

আইনের চোখে যে পলাতক, সমাজের চোখেও সে পলাতক, বিমল গুরুং প্রসঙ্গে মুখ খুললেন রাজ্যপাল
ফাইল চিত্র।
Follow Us:
| Updated on: Nov 27, 2020 | 3:16 PM

TV9 বাংলা ডিজিটাল: বিমল গুরুংকে একহাত নিলেন রাজ্যপাল। রবিবার রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় (Governor Jagdeep Dhankhar) বলেন “আইনের চোখে যে পলাতক, সমাজের কাছেও সে পলাতকই”। প্রায় তিন বছর আইনের চোখে ধুলে দিয়ে দিন কয়েক আগেই ফের আত্মপ্রকাশ করে তৃণমূলেই সমর্থনের কথা জানিয়েছেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার (Gorkha Janmukti Morcha)প্রধান বিমল গুরুং(Bimal Gurung)। এরই প্রতিক্রিয়ায় রাজ্যপালের এহেন মন্তব্য।

২০১৭ সালে দার্জিলিংয়ে আলাদা গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে হওয়া মিছিলে যে উত্তেজনা রণক্ষেত্রের রূপ নিয়েছিল, সেই মিছিলের নেৃতত্বে ছিলেন বিমল গুরুং। তার বিরুদ্ধে বেআইনী কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইন, খুনের দায়ে ও অন্যান্য আইপিসি ধারায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। সেই সময় পুলিসের নাগালে না আসায় তাঁকে পলাতক বলে ঘোষণা করা হয়। চলতি বছরের ২২ অক্টোবর আচমকাই উদয় হন তিনি। বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক চুকিয়ে তৃণমূলে সমর্থনের কথা জানান বিমল।

বিমলের এই ঘোষণার পরই নবান্নে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। অন্যদিকে বর্তমানে উত্তরবঙ্গ সফরে রয়েছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। গতকাল শিলিগুড়িতে একটি সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন,”যারা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার কথা ভাবেন, তারা নিজেই ধ্বংস হবেন। যতই বড় হোন না কেন, আইনের থেকে বড় কেউ নয়। আইনের মতে যে পলাতক, সমাজের কাছেও সে পলাতক এবং তার সঙ্গে সেভাবেই ব্যবহার করা উচিত। যদি কাউকে আইনের চোখে সমানভাবে দেখা না হয়, তবে তা ভুল। যদি আমি কোনও দাগী অপরাধীর সঙ্গে দেখা করি, তবে আমিও দোষী।”

রাজ্যপাল জানান, ৩৭০ ধারা (Article 370) ও অযোধ্যায় রাম মন্দির তৈরির মতোই উত্তরবঙ্গ নিয়ে সমস্যাও সংবিধান অনুযায়ী মেটানো হবে। তিনি বলেন,”যতই কঠিন বা জটিল সমস্যা হোক না কেন, তা ৩৭০ ধারা থেকে বড় নয় বা রাম মন্দির (Ram Mandir) নির্মাণের থেকে জটিল নয়, কিংবা তিন তালাকের (Triple Talaq) মতো আবেগপূর্ণ নয়। রাজনৈতিক বিচক্ষণতা ও বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা উচিত।”

তবে রাজ্যপালের এই মন্তব্যের পর চুপ থাকেনি শাসকদলও। তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন,”রাজ্যপাল একটাই কাজ করছেন, তা হল প্রতিদিন রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করা। আমরা ওনাকে বহুবার অনুরোধ করেছি এইধরনের মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে। তিনি সংবিধানের বিরুদ্ধে কাজ করছেন এবং নিজের পদমর্যাদা ক্ষুণ্ণ করছেন। তিনি বিজেপির মুখপাত্র হিসাবে কাজ করছেন।” মন্ত্রী গৈতম দেবও রাজ্যপালের পদত্যাগ দাবি করে বলেন, “তিনি একজন রাজনৈতিক নেতার মতো ব্যবহার করছেন, তাই তাঁর রাজ্যপাল পদ থেকে পদত্যাগ করা উচিত।”

প্রতিবারের মতোই এবারেও রাজ্যকে তোপ দাগতে পিছপা হননি রাজ্যপাল। রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিয়ে তিনি বলেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের সময় রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে। রাজ্য বনাম কেন্দ্রের ক্রমাগত বিবাদে ভুক্তভোগী হচ্ছেন রাজ্যবাসী।

রাজ্যপাল সংবাদিক বৈঠকে বলেন,”কেন্দ্র ও রাজ্য-উন্নয়নের দুটি চাকা। মানুষকে সাহায্য করতে গেলে এদের মধ্যে সমন্বয় থাকা প্রয়োজন। কোভিড-১৯ (COVID-19)আমাদের একটা জিনিস দেখিয়েছে যে রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থা কীভাবে ভেঙে পড়েছে। এর কারণ হল কেন্দ্রের সুপরিকল্পিত বিভিন্ন প্রকল্পের বিরুদ্ধে রাজ্যের বিরোধিতা। যদি রাজ্য আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প (Ayushman Bharat scheme) গ্রহণ করত,তবে ভালে হত। রাজ্যের দূরদর্শিতার অভাবে সাধারণ মানুষকে তার দাম দিতে হচ্ছে।”

রাজ্যপাল আরও জানান, কেন্দ্রের তরফ থেকে পিএম কিষান সম্মান নিধি যোজনায় (PM-Kisan Samman Nidhi Yojana) ১২ হাজার কোটি টাকা দেশের প্রতিটি কৃষকের অ্যাকাউন্টে দেওয়া হয়েছে, কেবল পশ্চিমবঙ্গ বাদে। তিনি বলেন, “কেন্দ্রের তরফ থেকে মোট ৯২ হাজার কোটি টাকা কৃষকদের দেওয়া হয়েছে। কেবল রাজ্যের কৃষকরাই এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এটা কেন্দ্রের সঙ্গে বিবাদ, ভুল নীতি ও কার্যকারীতার ফল। প্রকল্প শুরু হওয়ার ২১ মাস বাদে মুখ্যমন্ত্রী চিঠি লিখে টাকা চাইছেন কৃষকদের দেওয়ার জন্য। রাজ্য সরকার কেন মধ্যস্থতা করতে চাইছে? কেন্দ্র থেকে টাকা সরাসরি কৃষকদের কাছেই যাচ্ছে। এটা মোটেও ভালো সংস্কৃতি নয়।”

রাজ্যে নারীদের বিরুদ্ধে অপরাধ ও রাজনৈতিক খুন সম্পর্কে তিনি বলেন, “রাজ্যের আইন ও শাসন ব্যলস্থা চিন্তার বিষয় হয়ে উঠেছে। প্রতি সপ্তাহেই রাজনৈতিক খুন হচ্ছে। ধর্ষণের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। খোলা জায়গায় লোকজন বোমা বানাচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা, ডিজিপিকে বারংবার দেখা করার জন্য ফোন করা হলেও তিনি দেখা করছেন না।”