রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্র

পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গের অন্তর্গত উত্তর দিনাজপুর অন্যতম জেলা। ১৯৯২ সালের ১ এপ্রিল পৃথক জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে উত্তর দিনাজপুর।  মূলত, রায়গঞ্জ সদর মহকুমা ও ইসলামপুর মহকুমা নিয়ে গঠিত। জেলার সদর শহর হল রায়গঞ্জ।

জেলার মোট ৮টির মধ্যে ৭টি বিধানসভা নিয়ে এই কেন্দ্র। সাতটি বিধানসভা হল রায়গঞ্জ, কালিয়াগঞ্জ, হেমতাবাদ, করনদিঘি, চাকুলিয়া, গোয়ালপোখর, ইসলামপুর। জেলার চোপড়া বিধানসভা দার্জিলিং লোকসভা আর ইটাহার বিধানসভা বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে। ৭টির মধ্যে রায়গঞ্জ ও কালিয়াগঞ্জ বিধানসভায় বিজেপির টিকিটে জয়ী প্রার্থী রায়গঞ্জের কৃষ্ণ কল্যাণী ও কালিয়াগঞ্জের সৌমেন রায় পরবর্তীতে তৃণমূলে যোগ দিলে ৭টিই তৃণমূলের দখলে যায়। যদিও ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে সৌমেন রায় পুনরায় বিজেপিতে যোগ দেন।

এক সময় রায়গঞ্জ লোকসভা কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি ছিল। ২০০৪ সালে নিকটতম প্রার্থী সিপিআইএমের মিনতি ঘোষকে হারিয়ে সাংসদ হন প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সী।

২০০৯ সালে প্রিয়রঞ্জন অসুস্থ হলে তাঁর স্ত্রী দীপা দাশমুন্সী কংগ্রেসের প্রার্থী হয়ে সিপিএম প্রার্থীকে হারিয়ে সাংসদ হন।

২০১৪ সালে প্রথম নিজেদের গড় হাতছাড়া হয় কংগ্রেসের। সেই বছর কংগ্রেসের দীপাকে হারিয়েই জয়ী হন সিপিএমের মহম্মদ সেলিম।

এরপর ২০১৯ সালে রায়গঞ্জ লোকসভায় প্রায় ৫১ হাজারের বেশি ভোট পেয়ে জয়ী হন বিজেপির দেবশ্রী চৌধুরী। উল্লেখযোগ্যভাবে, এই নির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থী দীপা দাশমুন্সী ভোট অঙ্কের নিরিখে চতুর্থ স্থানে চলে যান। তৃতীয় স্থানে থাকেন সিপিএমের মহ সেলিম। আর দ্বিতীয় স্থানে চলে আসে তৃণমূল কংগ্রেস। প্রার্থী ছিলেন কানাইয়ালাল আগরওয়াল।

এ দিকে ২১ এর বিধানসভায় কংগ্রেসকে অনেক পেছনে জেলায় ঘাসফুল ফুটেছে। এতে বিজেপি বেশ কিছুটা হলেও ব্যাকফুটেও চলে যায়। তার প্রভাব অনেক ক্ষেত্রেই পঞ্চায়েত নির্বাচনে দেখা যায়। ইতিমধ্যেই গত বছর কালিয়াগঞ্জে নাবালিকার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে ওঠে রাজ্য রাজনীতি। ওই ইস্যুতে কালিয়াগঞ্জ থানায় অগ্নি সংযোগ, ভাংচুর আন্দোলনের জেরে রাধিকাপুরে এক বিজেপি কর্মীর পুলিশের গুলিতে মৃত্যুর অভিযোগের ঘটনায় পুনরায় মাইলেজ পায় বিজেপি। লোকসভাকে পাখির চোখ করে লাগাতার আন্দোলনে পঞ্চায়েতে প্রভাব ফেলতে না পারলেও বিজেপি সংগঠন মজবুত করে পুনরায় জমি শক্ত করেছে।

২০২৪-এর ভোটে রায়গঞ্জ থেকে তৃণমূল প্রার্থী করেছে কৃষ্ণ কল্যাণীকে। তবে বিজেপি-র হয়ে কে লড়বে সেই তালিকা চূড়ান্ত হয়নি। তবে বিদায়ী সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরীকে 'বহিরাগত' তকমা দিয়ে বিজেপির অন্দরেই চলছে আন্দোলন। এদিকে প্রথম দফায় দেবশ্রীর নাম না থাকায় আদৌ দেবশ্রী চৌধুরী রায়গঞ্জে প্রার্থী হবেন কি না তা নিয়ে সংশয় ও জল্পনা শুরু হয়েছে। অপরদিকে, নিজেদের গড় ধরে রাখতে ময়দানে নেমেছে কংগ্রেসও। হাল ছাড়তে নারাজ সিপিএমও। ফলত, শেষ জয়ের হাসি কে হাসবে তা তো সময়ই বলবে।