কেমন হল ‘টেক্কা’? মুক্তির প্রথম দিনে প্রথম শো দেখে এসে লিখছেন ভাস্বতী ঘোষ।
আশ্বিনের শারদ প্রাতে, কেন বন্দুক হাতে? ঠিক যে কারণে মা দুর্গা প্রতিবার আসেন ত্রিশূল হাতে, সেই কারণে। যুগ পেরিয়ে যুগ শুরু হয়, কিন্তু পাপ কমে না। বাংলার দিকে দেখুন। সিস্টেমের একাংশে কী ভয়ঙ্কর দুর্নীতি। এমন দুর্নীতি পরিচালক আর প্রযোজককে ভাবিয়েছে নিশ্চয়ই। সেই কারণে ‘টেক্কা’ ছবিতে দুর্নীতি দমনের বার্তা প্রধান। ছবিটা থ্রিলার। সেখানে শিহরণ ঠিক কোন পর্যায়ের তা মাপা জরুরি। তবে ছবিটা দেখতে বসে মনে হয়, শুধু শিহরণের শিরশিরানিতে না থেমে শিরদাঁড়া সোজা রাখার ভাবনায় জোর দিয়েছেন পরিচালক। উত্সবের আমেজ বা বিনোদন এই ছবির একমাত্র লক্ষ্য ছিল না। বরং ছবিটা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। এই ছবির জন্ম-গল্প বেশ আকর্ষক। শোনা যায় এক নামী প্রযোজনা সংস্থার মনে হয়েছিল, এই ছবির চিত্রনাট্য দুর্গাপুজোর মতো উত্সবের মরসুমের জন্য উপযুক্ত নয়। কিন্তু দুর্গাপুজোর মরসুমে কি হচ্ছে? সিস্টেমের বিরুদ্ধে জুনিয়র ডাক্তারদের অনশন। ধর্মতলায় ডাক্তারের দল আওয়াজ তুলছে, যা প্রায় ফিকে করে দিচ্ছে বিভিন্ন মণ্ডপের ঢাকের তালে কোমর দোলে গানকে। তাই এই বছর শহরে দুর্গাপুজোর সুরের সঙ্গেই কোথাও মিশে যাবে ‘টেক্কা’।
ছবির গল্পটা ধরিয়ে দিই। ইকলাখ আলম একজন বাচ্চাকে কিডন্যাপ করেছে। পুলিশ (রুক্মিণী) সেই বাচ্চাকে উদ্ধারের চেষ্টা করছে। বাচ্চার মা খবর পেয়ে প্রায় পাগলের মতো ছুটে এসেছে ঘটনাস্থলে। কেন ইকলাখ এমনটা করল? দেখার সেটা। মোষের পেট থেকে কোন অসুর বেরিয়ে আসে সেটাও শিরদাঁড়ায় শিহরণ নিয়ে দেখতে হবে শেষ অবধি। তবে পুরো গল্পে ঘণ্টা খানেক সঙ্গে সুজন-এর একটা অংশ আছে। সেখানে অবশ্য় খুঁটিনাটিতে আরও নজর দেওয়া দরকার ছিল। দু’-তিনটে এমন জায়গা আছে ছবিতে, যা অঙ্ক মেলানোর জন্য তৈরি করা বলে মনে হয়। সেসব দৃশ্যের উপস্থাপনাও অন্যরকম হতে পারত।
ছবির জোরের জায়গা কি? গল্পের মোড় এবং মোচড়। কিছু সংলাপ। একটা উদাহরণ যেমন, আমি মা…ফুলস্টপ। আরজি কর কাণ্ডের পর নির্যাতিতার মায়ের বক্তব্যগুলো শুনেছেন? সেই মাতৃরূপ অঙ্গে ধারণ করেছেন এই ছবির মা। রণবীর কাপুর কেন ‘অ্যানিম্যাল’-এ চকোলেট বয় ইমেজ ছেড়ে হাতুড়ি হাতে তুলে নিলে দর্শকের এত উন্মাদনা? সিস্টেমের উপর জমতে থাকা রাগের প্রতিফলন কি সেটাও? তার গভীরে যদি যেতে শুরু করেন, তা হলে অনুভব করবেন নায়ককে যে চরিত্র দিয়েছেন সৃজিত, তার প্রভাব তীব্র। রুক্মিণীর চরিত্রেরও নানা স্তর। সব আয়োজনই ক্লাইম্য়াক্সের সিঁড়ি।
‘টেক্কা’ একবার দেখুন। বাড়ি ফিরে একটু ভাবুন। দুর্গাপুজো পাঁচদিন। তবে অসুরবধের প্রয়োজন পড়ে সারা বছর। এলেন, দেখলেন, পপকর্ন খেয়ে ভুলে গেলেন, এই ছাঁচে ফেললে ছবিটাকে সম্মান করা হবে বলে মনে হয় না। বন্দুক কিন্তু রূপক। মায়ের হাতে ত্রিশূলও রূপক। ‘টেক্কা’ প্রতিবাদের পথ দেখায়, সেটাই চুম্বক। হ্যাঁ, সাংসদ অভিনীত ‘টেক্কা’-ই বলে সিস্টেমের ‘ঘুণ’-দের শাস্তি হয়।