হাসপাতাল। ডাক্তার। সাধরণের কাছে মন্দির আর ভগবান। জীবন যদি ফিরিয়ে কেউ দিতে পারেন, তবে তাঁরাই ঈশ্বর। ‘আমরা যদি সুরক্ষিত না হই, না বাঁচতে পারি, আমরা বাঁচাবো কীভাবে?’— আরজি করে ছাত্র আন্দোলনে বসে থাকা এক পড়ুয়া ডাক্তার চিৎকার করে যে এবার এই প্রশ্নই তুলছেন। খাস কলকাতার বুকে ঘটে যাওয়া নারকীয় ঘটনায় শিউরে উঠছেন সকলে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে গলা মিলিয়েছেন শিল্প সংস্কৃতি জগতের পরিচিত মুখেরাও। প্রশ্ন তুলছেন– এক ডাক্তারী পড়ুয়ার নিরাপত্তা কোথায়? সর্বপরী নারী সুরক্ষা কোথায়? সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় থেকে অপর্না সেন, স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় থেকে মিমি চক্রবর্তী, বিচার চেয়ে সোচ্চার সকলেই। তালিকা থেকে বাদ পড়লেন না কবি শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায়ও। সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখলেন– ‘অপরাধী যে-ই হোক, তার কঠোর শাস্তি হওয়া প্রয়োজন।’
শ্যামবাজারের মোড়ে অবস্থিত এক সরকারি হাসপাতালে যদি এক কর্মরত পড়ুয়া ছাত্রীর এই নৃশংস পরিস্থিতি হয়, তবে সুরক্ষা নিয়ে তো প্রশ্ন উঠবেই। কোথায় সিসিটিভি? কোথায় নিরাপত্তা রক্ষী? কোথায় গেল শিক্ষা! এই প্রশ্নেই গত ৬০ ঘণ্টায় তোলপাড়া হচ্ছে শহর কলকাতা, গোটা বাংলা তথা ভারত। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিপ্লব থেকে রাজপথ দখল করে আন্দোলন, দাবি একটাই- ‘সুরক্ষা চাই-নিরাপত্তা চাই-বিচার চাই-বিচার চাই’। ‘তিলোত্তমা’র এই মর্মান্তিক পরিণতির জন্য দায়ী কারা? দোষীদের শাস্তি দিন’।
তিলোত্তমার মৃত্যু রাতের ঘুম কেড়েছে সকলের। আর এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা কবির মনকে বিচলিত করবে না তা কি হয়! যে কলম প্রেম ঢেলে দেয়, সেই কলমেই এবার শুধুই মৃত্যু যন্ত্রণা, লজ্জা। কবি শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায় আরজি করের এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে লেখেন– ‘আর জি করের এই ঘটনাকে নিন্দনীয় বললে খুব কম বলা হয়। এ এক অভাবনীয় অপরাধ। হিংসার এই ধরনের বহিঃপ্রকাশ আমাদের শিকড় থেকে ভয় পাইয়ে দেয়, মানবতার অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলে। সমাজের সব স্তরের ও সব পেশার মানুষ এই ঘটনার বিরুদ্ধে একজোট হচ্ছেন, সেটুকু অন্তত আশাপ্রদ। অপরাধী যে-ই হোক, তার কঠোর শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। আমি একজন নাগরিক হিসেবে সেই প্রত্যাশায় থাকব।’
কথায় বলে নাড়ির টান, ন-মাস গর্ভে সন্তান ধারণ করে পৃথিবীর আলো দেখানোর ক্ষমতা রাখে যে, সেই নারীই রাতের অন্ধকারে কতটা অসহায়। লালসার শিকার, নাকি এই নৃশংস মৃত্যুর পিছনে ছিল অন্য সমীকরণ, উত্তর খুঁজতে যখন মরিয়া এক শ্রেণি, অপর শ্রেণির তখন লজ্জায় মাথা হেঁট। শ্রীজাতর লেখার ছত্রে ছত্রে যা স্পষ্ট। ঘটনার দুই রাত পোহাতে আবারও কলম ধরলেন কবি, মনে করিয়ে দিলেন নারী রূপে ‘মা’য়ের কথা।