নয়া দিল্লি: রাজনীতিতে এখন সৌজন্যের বড়ই অভাব। অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ তো থাকবেই। কিন্তু এখনকার রাজনীতিতে ব্যক্তিগত আক্রমণ, কাদা ছোড়াছুড়ি, এক দলের অন্য দলকে হেয় করার চেষ্টাই বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। লোকসভা নির্বাচনের আগে, তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ দেবকে সৌজন্যের কথা বলে নিজের দলের নেতাদেরই বিরাগভাজন হতে হয়েছিল। অনেকের কাছেই রাজনীতির এই অসৌজন্য ক্লান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু, এই আকালেও সৌজন্যের এক দুর্দান্ত ছবি দেখা গেল ওড়িশার পুরীতে। সোমবার, রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ককে যেভাবে সম্মান জানালেন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান, তা সকলের হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছে।
এবার দুদিন ধরে চলছে রথযাত্রা। রবিবার সেই উৎসবে যোগ দিতে পুরীতে এসেছিলেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। তাঁর এবং অন্যান্য ভিভিআইপিদের জন্য একটি পৃথক মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল। রাষ্ট্রপতি ছাড়াও সেই মঞ্চতে ছিলেন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান, নয়া মুখ্যমন্ত্রী মোহনচরণ মাঝি প্রমুখ। কিছু পরে ওড়িশার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কও সেখানে পৌঁছন। মঞ্চের নীচ থেকেই তিনি হাত জোড় করে সকলকে অভ্যর্থনা জানান। তা দেখেই সঙ্গে সঙ্গে মঞ্চ থেকে নেমে আসেন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান। এরপর, একেবারে বিজেডি প্রধানকে সঙ্গে নিয়ে মঞ্চে ওঠেন তিনি।
#WATCH | Odisha: President Droupadi Murmu arrives in Puri to take darshan of the Lord Jagannath as the two-day Lord Jagannath Rath Yatra in Puri to commence today.
Chief Minsiter Mohan Charan Majhi, former Odisha Chief Minister Naveen Patnaik and other dignitaries also present… pic.twitter.com/kT0TKfTsIC
— ANI (@ANI) July 7, 2024
রাজনীতিতে, ক্ষমতার হাত বদলের সঙ্গে সঙ্গে আচরণও পাল্টে যায়। ক্ষমতাসীন কোনও নেতা যতটা সম্মান পান, ক্ষমতাচ্যুতরা তা পান না। কিন্তু, বিজেডি ওড়িশার ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার পরও নবীন পট্টনায়কের প্রতি যে সৌজন্য দেখালেন ধর্মেন্দ্র প্রধান, তা এখনকার রাজনীতিতে বিরল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তবে তাঁরা বলছেন, এর পিছনে রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। ওড়িশা বিধানসভা নির্বাচনে পরাজিত হয়ে রাজ্যের ক্ষমতা থেকে সরে গিয়েছে বিজেডি। কিন্তু, রাজ্যসভায় এখনও তাঁদের ৯ জন সাংসদ আছেন।
অতীতে বিভিন্ন বিল পাশের ক্ষেত্রে, রাজ্যসভায় যখনই বিজেপি তথা মোদী সরকারের সংখ্যার প্রয়োজন হয়েছে, সমর্থনের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু, এক সাম্প্রতিক বৈঠকে নবীন পট্টনায়ক তাঁর দলের সাংসদদের বলে দিয়েছেন, আর বিজেপিকে সমর্থন নয়। এখন থেকে প্রতি ক্ষেত্রে তারা রাজ্যসভার অন্দরে বিজেপির বিরোধিতা করবে। সদ্য সমাপ্ত সংসদীয় অধিবেশনেও রাজ্যসভায় তাঁরা অন্যান্য বিরোধী সাংসদদের সঙ্গেই কক্ষত্যাগ করেছেন। নবীনবাবুর প্রতি সৌজন্য প্রদর্শনের পিছনে, তাঁর দলের সমর্থন আদায় করার উদ্দেশ্যও থাকতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।