নয়া দিল্লি : শিয়রেই পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন। রাজনৈতিক দলগুলি জোর কদমে শেষ মুহূর্তের প্রচারে ব্যস্ত। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ইস্তেহারে ভোটমুখী রাজ্য়গুলির প্রতি তাদের অঙ্গীকার তুলে ধরেছে। এই আবহে দেশের সর্বোচ্চ আদালত কেন্দ্র ও নির্বাচন কমিশনকে নোটিস জারি করল। নির্বাচনের আগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল জনগণের উদ্দেশে বিনামুল্য়ে বিভিন্ন পরিষেবা বা প্রকল্পের (Freebie) ঘোষণা করে। সেই ঘোষণা সংক্রান্ত নির্দেশিকা জারি করেই নোটিস পাঠিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
সুপ্রিম কোর্ট এই বিষয়টিকে গুরুতর বিষয় বলে অভিহিত করেছে। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে যে, “ফ্রিবি বাজেট” প্রতিদিনের বাজেটের থেকে অনেক বেশি হয়ে যাচ্ছে। তাই এই বিষয় নিয়ে নির্বাচন কমিশন এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে প্রশ্ন করেছে সুপ্রিম কোর্ট। সর্বোচ্চ আদালতের সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে ৪ সপ্তাহের মধ্যে। এনডিটিভির একটি প্রতিবেদন সূত্রে খবর, ভারতের প্রধান বিচারপতি এন ভি রামানা (NV Ramana) বলেছেন, সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচন কমিশনকে এই বিষয়ে একটি নির্দেশিকা তৈরি করতে বলেছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন এই বিষয়ে কেবলমাত্র একটি বৈঠকই করেছে। এবং তার ফলাফল অজানা। প্রধান বিচারপতি এন ভি রামানা বলেছেন, “সীমিত পরিসরের মধ্যে, আমরা নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশিকা তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছিলাম। কিন্তু পরবর্তীকালে, তারা আমাদের নির্দেশের পরে মাত্র একটি বৈঠক করেছিল। তারা রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত চেয়েছিল এবং তারপরে কী হয়েছিল তা আমি জানি না।”
প্রধান বিচারপতি এন ভি রামানা, বিচারপতি এ এস বোপান্না এবং বিচারপতি হিমা কোহলির একটি বেঞ্চ আইনজীবী এবং বিজেপি নেতা অশ্বিনী উপাধ্যায়ের দায়ের করা একটি আবেদনের শুনানি করছিল। সেখানে বলা হয় যে, সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলি জনসাধারণের তহবিলের অপব্যবহার করছে। এর ফলে রাজ্যগুলি আরও গভীর ঋণের মুখে পড়ছে। এই মামলায় আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন বর্ষীয়ান আইনজীবী বিকাশ সিং। আবেদনটি নির্বাচন কমিশনের কাছে একটি নির্দেশিকা প্রকাশের আবেদন জানিয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলির প্রতীকী চিহ্ন বাজেয়াপ্ত করা এবং যেসব রাজনৈতিক দল জনসাধারণের তহবিল থেকে অযৌক্তিক বিনামূল্যে বিতরণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তাদের বাতিল করে দেওয়ার নির্দেশ চাওয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশনের তরফে। এতে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশনের নিয়ম সত্ত্বেও জনসাধারণের অর্থ অপব্যবহার করা হচ্ছে।
আবেদনে আরও দাবি করা হয়েছে যে, নির্বাচনের আগে জনসাধারণের তহবিল থেকে অযৌক্তিক বিনামূল্যের প্রতিশ্রুতি বা বিতরণ ভোটারদের অযৌক্তিকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। উপাধ্যায়ের আবেদনে বলা হয়েছে, “এটি একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ভিতকে নাড়িয়ে দেয়। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডকে বিঘ্নিত করে এবং নির্বাচন প্রক্রিয়ার বিশুদ্ধতা নষ্ট করে।” তিনি আরও বলেন যে, নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে বিনামূল্যের পরিষেবা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি কেবল “সাম্প্রতিক প্রবণতা” নয়। এটি শুধুমাত্র গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের টিকে থাকার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি নয়, এই বিষয়টি সংবিধানের চেতনাকেও আঘাত করে”। ফ্রিবির এই আবেদনটিকে একটি “অনৈতিক অভ্যাস” বলে অভিহিত করা হয়েছে। ক্ষমতায় থাকার জন্য রাজকোষের খরচে ভোটারদের ঘুষ দেওয়ার মতো দেখায় এই বিষয়টি। আবেদনে বলা হয়েছে, “গণতান্ত্রিক নীতি এবং অনুশীলনগুলি সংরক্ষণের জন্য এটি অবশ্যই এড়ানো উচিত।”