নয়াদিল্লি: বাংলাদেশে সংখ্যালঘু এবং হিন্দুদের উপর আক্রমণের ঘটনায় এবার মহম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের তীব্র নিন্দা করল ভারত সরকার। সঙ্গে বাংলাদেশের সরকারের উপরে আরও চাপ বাড়াল ভারত। গতকালই ইতালি থেকে বিদেশ সফর সেরে ফিরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ে একটি বৈঠক করেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। সূত্রের খবর অনান্য বিষয়ের সঙ্গে এই দিন আলোচনার অন্যতম মূল বিষয় ছিল বাংলাদেশের উত্তাল পরিস্থিতি।
এর পরেই শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠক করে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করলেন বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল।
বাংলাদেশের হিন্দুদের নিরাপত্তাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশকে কড়া বার্তা দিয়েই যেন হুঁশিয়ারি দিয়ে দিয়ে রাখল ভারত। সংখ্যালঘুদের স্বার্থ সুরক্ষা রাখার দায়িত্ব বাংলাদেশের সরকারেরই, বলে জানিয়েছেন বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে দিল্লিতে বৈঠক হয়েছে। ভারত সরকার বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত। আমরা লাগাতার বাংলাদেশে আইন শৃঙ্খলার বিষয়টি নিয়ে কথা বলছি। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছেও সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার বিষয়টি তুলে ধরে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। যদি বিদেশমন্ত্রকের সঙ্গে এই বিষয়ে কোনও বৈঠকের কথা হয়, তাহলে তা জানানো হবে।”
তিনি আরও বলেন, “ভারতের অবস্থান খুব পরিষ্কার। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকেই। নিরাপত্তার দায়িত্বও নিতে হবে।”
“তবে ভারত-বাংলাদেশের বাণিজ্যে এখনই এর কোনও প্রভাব পড়ছে না। ভারত-বাংলাদেশের বাণিজ্য যেমন চলছিল তেমনই চলবে।”, বলেন রণধীর জয়সওয়াল।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে ৫ অগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকেই বার বার সংখ্যালঘু এবং হিন্দুদের উপর আক্রমণের অভিযোগ উঠেছে। প্রাণ গিয়েছে বহু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে ওঠে যে এক সময়ে দুর্গা পুজো উদযাপন করাও শক্ত হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
যা নিয়ে বার বার সরব হতে দেখা গিয়েছিল সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে। কিন্তু দেশদ্রোহীতার অভিযোগে ঢাকায় তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারপরেই ফের ফের উত্তাল হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। চিন্ময়কৃষ্ণকে গ্রেফতারির প্রতিবাদে পথে নেমেছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষেরা। তারপরেই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি দেখা গিয়েছে বাংলাদেশে।
সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারি নিয়েও মন্তব্য করেছেন বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র। তিনি বলেন, “আমরা আশা করছি চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের বিচার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ থাকবে। ওঁর সাংবিধানিক অধিকার অক্ষুণ্ণ থাকবে।”
বাংলাদেশে ইসকন’কে নিষিদ্ধ হিসাবে ঘোষণা করতেও সচেষ্ট হয়ে উঠেছিল সরকার। যদিও হাইকোর্টের হস্তক্ষেপে তা ব্যহত হয়েছে। তবে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু এবং হিন্দুদের উপর হামলার ঘটনায় বার বার সমালোচিত হয়েছে ইউনূস সরকারই। এমনকি দোষীদের শাস্তি না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তাঁর দিকে। কিন্তু তারই মধ্যে এবার বাংলাদেশকে আরও কড়া বার্তা দিল ভারত।