কলকাতা: এবার করোনার থাবাব এনআরএস হাসপাতাল। গত ২৪ ঘণ্টায় কলকাতার প্রথম সারির এই সরকারি হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৬১ জন। এর মধ্যে রয়েছেন স্ত্রীরোগ বিভাগ, কার্ডিওলজি, এসএনসিইউ’র রোগীরা। চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীও রয়েছেন সংক্রমিতের তালিকায়। তবে স্বাস্থ্যকর্মী-চিকিৎসকদের তুলনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাই বেশি বলে জানিয়েছেন এনআরএসের এমএসভিপি ইন্দিরা দে।
৬১ জনের মধ্যে ১৭ জন ইন্টার্ন রয়েছেন, ২ জন পিজিটি, ১জন নার্সিং স্টাফ এবং ৪১ জন রোগী। অন্যদিকে সোমবার থেকেই এনআরএসের অ্যানেক্স হাসপাতাল আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজে ১০০ শয্যার কোভিড পরিষেবা চালু করা হয়েছে।
২৪ ঘণ্টায় ৬১ জন যদি করোনা আক্রান্ত হন সেটা যেমন উদ্বেগের, একইসঙ্গে চিন্তা রয়েছে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে এনআরএসে করোনা আক্রান্ত বিভিন্ন ওয়ার্ডের রোগীরাও। কার্ডিওলজি, এসএনসিইউ-এ ভর্তি রোগীদের শরীরেও করোনার থাবা নিঃসন্দেহে চিন্তা বাড়িয়েছে। একসঙ্গে এতজন করোনা রোগীর দেখভাল, সঙ্গে সাধারণ রোগীদের পরিষেবা দেওয়া কার্যত চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে।
সোমবার সকালে একাধিক হাসপাতাল উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকও করেছে বলে সূত্রের খবর। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় কী করণীয় তা নিয়ে নিজেদের মতো করে কিছু রূপরেখাও ঠিক করেছে বলে জানা গিয়েছে। আইসোলেশনের গাইডলাইন কমিয়ে আনা উচিৎ কি না তা নিয়েও স্বাস্থ্য ভবনে আলোচনা চলছে।
একইসঙ্গে জানা যাচ্ছে, পূর্ব রেলের ২১ জন চিকিৎসক করোনা পজিটিভ। রবিবারই পূর্ব রেলের ১২০ জন চিকিৎসক কোভিড আক্রান্ত হন। রবিবার ২৪০ জনের কোভিড টেস্ট হয়। সোমবারই অবধি যা রিপোর্ট তাতে অর্ধেকজনই কোভিড পজিটিভ।
যেভাবে কোভিডের সংক্রমণ লাফিয়ে বাড়ছে তাতে সবথেকে বড় উদ্বেগ এখন স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় কোভিডের থাবা। ইতিমধ্যেই এনআরএসের অ্যানেক্স হাসপাতাল আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজ, চিত্তরঞ্জন সেবা সদন, চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে করোনার থাবা দেখা গিয়েছে।
রবিবার সকালে জানা গিয়েছিল চিত্তরঞ্জন শিশু সেবা সদনে ২৪ জন চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। সেই সংখ্যাটাই সন্ধ্যায় বেড়ে ৩৬ হয়ে গেল! এই ৩৬ জনের মধ্যে জুনিয়র চিকিৎসক রয়েছেন ২৪ জন। মেডিক্যাল অফিসার রয়েছেন ৪ জন। সিনিয়র চিকিৎসক রয়েছেন ২ জন। অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার রয়েছেন ২ জন। এছাড়াও ৩ জন নার্সিং স্টাফ ও ১ জন অফিস স্টাফ এই মুহূর্তে কোভিড পজিটিভ।
শনিবারই দেখা গিয়েছে চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষের কোভিড নমুনার রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। করোনা আক্রান্ত হয়েছেন নার্সেস ইউনিটির সম্পাদকও। গত বৃহস্পতিবারই ১৩ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজে। শুক্রবার সেই সংখ্যার সঙ্গে যুক্ত হয় আরও ৮। মোট ২১ জনের মধ্যে চিকিৎসক থেকে নার্সিং স্টাফ, রয়েছেন সকলেই। শুক্রবার যে আটজন করোনা আক্রান্ত হন তাঁদের মধ্যে ৬ জন চিকিৎসক রয়েছেন, একজন নার্সিং স্টাফ রয়েছেন। অষ্টম জন লেডিস হস্টেল সুপারের ১৪ বছরের মেয়ে।
পাশাপাশি ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ল্যাবের রিপোর্টেও উদ্বেগের ছাপ। শনিবার হাসপাতালের ল্যাবে ৯৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। তাতে দেখা যায় ৯৩ জনের মধ্যে ৪৪ জনের কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ। পজিটিভিটি রেট এখানে ৪৮ শতাংশ। সূত্রের খবর, যে ৪৪ জনের রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে তার মধ্যে ৫ জনই চিকিৎসক। এর মধ্যে তিনজন পিজিটি। ৩৯ জন ওপিডি-আইপিডি’র রোগী বলে খবর স্বাস্থ্যভবন সূত্রে।
আরও পড়ুন: Post Poll Clash: সিবিআই চাইলে সিট মামলা হস্তান্তর করুক, আদালতে আর্জি সিবিআইয়ের আইনজীবীর