কলকাতা: রবিবারই বাতিল হয়েছে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গোয়া সফর। কেন বাতিল করা হল সফর তা নিয়ে যদিও এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি শাসক শিবিরের পক্ষ থেকে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গোয়া সফরকে কেন্দ্র করে আগেও একাধিকবার তোপ দেগেছে বিজেপি। এ বার, সফর বাতিল হওয়ায় অভিষেককে ফের নিশানা করলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)।
প্রবীণ বিজেপি নেতার কথায়, “ওঁ তো গোয়াতে যেতে পারেন, কিন্তু রাজ্যের বিরোধী দলনেতা নেতা নিজ রাজ্যেই নেতাই যেতে পারেন না। শুভেন্দুবাবুকে বাধা দেওয়া হয়। কেন তাঁকে বাধা দেওয়া হবে! কোথায় গণতন্ত্র! এক এক জনের জন্য এক একরকম নিয়ম! আর গোয়ায় গিয়ে কী হবে! এ বার অভিষেক গোয়ায় গিয়েছেন, তাতে লাভ কী! সেখান থেকে চলে আসতে হবে!”
প্রসঙ্গত, নেতাইয়ে শহিদ দিবস পালন করতে যাওয়ার পথে, শুভেন্দু অধিকারীকে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছিল, গোটা কনভয়টি নয়, কেবল শুভেন্দু একা শহিদস্মরণে যেতে পারেন। কিন্তু, পুলিশের সেই নির্দেশে রাজি হননি বিরোধী দলনেতা। ফলে, নেতাইয়ে যাওয়া তাঁর হয়নি। তাই লালগড় ঢোকার মুখে ঝিটকার জঙ্গল থেকে ফিরে এসে ভিমপুরে অস্থায়ী শহিদ বেদী তৈরি করে নেতাইয়ের শহিদদের উদ্দেশে স্মৃতি তর্পণ করেন অধিকারী পুত্র। এদিকে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র উত্তেজনা শুরু হয় রাজনৈতিক মহলে।
নেতাই-যাত্রার জন্য আগেভাগেই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। ৭ জানুয়ারি নেতাইয়ে যাওয়ার অনুমতি চেয়ে ২ জানুয়ারি রাজ্যের কাছে অনুমতি চেয়েছিলেন শুভেন্দু। বর্তমানের করোনা আবহে বিধি মেনে সেখানে যাওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন। রাজ্য যাতে তাঁর প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে, সেই কথাও বলেছিলেন। সেই প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট শুভেন্দু অধিকারীর নেতাই যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনও বাধা নেই বলে জানিয়ে দিয়েছিল।
শুধু তাই নয়, এর আগে জুলাই মাসের এক মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থা জানিয়েছিলেন, শুভেন্দু অধিকারীর কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা থাকছেই। তার সঙ্গে রাজ্যের তরফেও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে।
রাজ্যের তরফে অ্যাডভোকেট জেনারেল সওয়াল করেছিলেন, শুভেন্দুর নেতাইয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনওরকম অনুমতির প্রয়োজন নেই। এমনকি এর আগের হাইকোর্টের নির্দেশ থাকায়, তাঁকে যাওয়া-আসার সময়েও নিরাপত্তা দেবে সরকার। কিন্তু, তারপরেও তাঁকে বাধার মুখে পড়তে হয়।
শুভেন্দু অধিকারীর নেতাইয়ে কর্মসূচি ঘিরে যে রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়ায় তাতে বিশেষ ক্ষুব্ধ হন রাজ্যপাল। এই বিষয়ে রাজ্যের মুখ্যসচিব ও রাজ্য পুলিশের ডিজির কাছে কৈফিয়ৎ তলব করেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। ১০ জানুয়ারি, সোমবার সকাল ১১ টার মধ্যে লিখিত আকারে রিপোর্ট তলব করেন তিনি।
অন্যদিকে, সোমবারই এ সংক্রান্ত বিষয়ে আদালতে রাজ্যের কাছে রিপোর্ট তলব করলেন বিচারপতি রাজশেখন মান্থা। কেন জ়েড ক্যাটাগরির নিরাপত্তা বলয় ও আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও শুভেন্দুকে নেতাইয়ের কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হল তা জানতে চেয়ে আগামী ১৮ জানুয়ারির মধ্যে বিস্তারিত রিপোর্ট পেশ করার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। আগামী ১৯ জানুয়ারি এই মামলার পরবর্তী শুনানি বলে জানা গিয়েছে।