নয়া দিল্লি: বাংলায় বাড়ছে ওমিক্রনের বিপদ। রাজ্যে কোভিডের নয়া স্ট্রেনে আক্রান্ত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬। শুক্রবার জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ে আরও দু’জনের শরীরে ওমিক্রনের হদিশ মিলেছে। এরই মধ্যে কেন্দ্রের তরফে জানানো হল, বাংলায় আসছে কেন্দ্রীয় বিশেষজ্ঞদের দল।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তরফে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে শুক্রবার। সেখানে বলা হয়েছে ১০ রাজ্যে কেন্দ্রের ‘মাল্টি ডিসিপ্লিনারি টিম’ যাবে। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও সেই তালিকায় রয়েছে কেরল, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, মিজোরাম, কর্ণাটক, বিহার, উত্তর প্রদেশ, ঝাড়খণ্ড ও পঞ্জাবের নাম।
স্বাস্থ্যমন্ত্রকের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত কয়েকদিনে দেখা গিয়েছে ওমিক্রনের দাপট বেশ কয়েকটি রাজ্যে বেড়েছে। জাতীয় স্তরে টিকাকরণের যে হার, সেই তুলনায় ওই রাজ্যগুলিতে গতি অনেকটাই ধীর। উদ্ভূত পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নিয়েছে ১০ রাজ্যে মাল্টি ডিসিপ্লিনারি কেন্দ্রীয় দল পাঠানো হবে।
আগামী তিন থেকে পাঁচদিনের মধ্যেই সেই কেন্দ্রীয় দল এসে বাংলায় পৌঁছবে। তাঁরা খোঁজ নেবে সংক্রমণের হার রাজ্যে কী রকম। টিকা ঠিকমতো দেওয়া হচ্ছে কি না, কোভিডের জন্য দেশজুড়ে যে বিধিনিষেধ চলছে তা যথাযথভাবে মানা হচ্ছে কি না। রাজ্যে ঘুরে সমস্ত তথ্য আদায় করে তা কেন্দ্রের কাছে পেশ করবে প্রতিনিধি দলগুলি।
বাংলায় করোনা পরিস্থিতি মোটেই খুব একটা স্বস্তিদায়ক বলা যায় না। কারণ শুক্রবার রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর প্রকাশিত বুলেটিন অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫৫০ জন। মৃত্যু হয়েছে পাঁচ জনের। এই মুহূর্তে রাজ্যে সক্রিয় কোভিড রোগীর সংখ্যা ৭ হাজার ৪৪৬। ফলে বাংলা যে কোভিডে খুব একটা ভাল জায়গায় নয় তা বলাই যেতে পারে।
এরই মধ্যে আবার বাড়ছে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যাও। শুক্রবার এক জুনিয়র চিকিৎসকের শরীরে ওমিক্রনের হদিশ পাওয়া যায়। তিনি নদিয়ার বাসিন্দা, কলকাতা মেডিকেলের কলেজের ইন্টার্ন চিকিৎসক। সম্প্রতি কোনও বিদেশ ভ্রমণের ইতিহাসও নেই তাঁর। বিদেশ যোগ না থাকলেও ওমিক্রনে আক্রান্ত হওয়ার খোঁজ রাজ্যে এই প্রথম। স্বভাবতই তা নিয়ে চিন্তা বাড়ছে স্বাস্থ্য দফতরের। প্রশ্ন উঠছে, তবে কি কোনও রোগীর সংস্পর্শে এসে ওমিক্রন পজিটিভ হয়েছেন তিনি? তেমনটা হলে ভয়, বঙ্গে ওমিক্রন গোষ্ঠী সংক্রমণের পথে হাঁটবে না তো?
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, প্রথমে রাজ্যে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা ছিল চার। পরে ২৩ জনের জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের রিপোর্ট করতে দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যেই দু’জনের রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এর মধ্যে একজন আয়ারল্যান্ড ফেরত। অন্যজন কলকাতা মেডিকেল কলেজের জুনিয়র চিকিৎসক। যিনি বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ওমিক্রনের বাড়বাড়ন্তের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার বিভিন্ন রাজ্যের সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্স করে কেন্দ্র। পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টশনের মাধ্যমে দেখানো হয়, ওমিক্রনের বিপদ ঠিক কতটা। পরিস্থিতির অবনতি হলে প্রস্তুতির নিরিখে কোন রাজ্য কোথায় দাঁড়িয়ে রয়েছে তাও দেখানো হয় বলে স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর।
করোনা পরীক্ষায় দেশের মধ্যে পিছনের সারিতে রয়েছে এ রাজ্য। প্রতি ১০ লক্ষে কত জনের নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে, সেই হিসেব করতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, গত দু’সপ্তাহ ধরে পশ্চিমবঙ্গ একেবারে পিছনের সারিতে রয়েছে। সবচেয়ে কম টেস্ট হয়েছে যে পাঁচটি রাজ্যে, পশ্চিমবঙ্গ তার মধ্যে অন্যতম। এই অবস্থায় দ্রুত পরীক্ষা বাড়তে উদ্যোগী হয়েছে স্বাস্থ্য ভবন। শুক্রবার এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে স্বাস্থ্য সচিব নির্দেশ দেন, নমুনা পরীক্ষা যেন বাড়ানো হয়। একই সঙ্গে পরিস্থিতির নজরদারিতে কেন্দ্র তাদের বিশেষ দলও পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলায়।
আরও পড়ুন: Tourist in Purulia: বড়দিনেই ধরানো হচ্ছে সরস্বতী পুজোর চাঁদার রসিদ! পর্যটকদের গাড়ি আটকে টাকা আদায়