কলকাতা: দিল্লিতে চিকিৎসকদের আন্দোলনের আঁচ কলকাতায় এসেছে আগেই। এবার সেই আঁচে ভোগান্তি শুরু সাধারণ মানুষের। এমনও অভিযোগ উঠছে, পিজিটিদের কর্মবিরতির কারণে স্ট্রোক হওয়া রোগী পর্যন্ত চিকিৎসা পাচ্ছেন না।
কাউন্সেলিংয়ে বিলম্বের প্রতিবাদে পিজিটিদের কর্মবিরতির প্রভাব পড়তে শুরু করল কলকাতাতেও। বহির্বিভাগ, অন্তর্বিভাগ তো বটেই, জরুরি বিভাগেও কর্মবিরতি শুরু করে দিয়েছেন পিজিটিরা। ব্যতীক্রম নয় রাজ্যের উৎকর্ষ কেন্দ্র এসএসকেএমও।
রাজারহাটের বাসিন্দা বাসন্তী বৈদ্য স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে আরজিকরে গিয়েছিলেন। অভিযোগ, কর্মবিরতির জন্য বাসন্তীদেবী আরজিকরে চিকিৎসা পাননি। এরপর এসএসকেএমে নিয়ে যাওয়া হলে সেখান থেকে খালি হাতে ফিরতে হয়। চিকিৎসা না পেয়ে রোগীর পরিজনেরা প্রশ্ন তুলছেন, চিকিৎসা আগে নাকি কর্মবিরতি?
সেপ্টেম্বরে পরীক্ষার পর তিন মাস পার হয়ে গিয়েছে। এখনও নিট-পিজিটিদের কাউন্সেলিং শুরু হয়নি। কাউন্সেলিং দ্রুত শুরু করার দাবিতে মিছিল করছিলেন দিল্লির রেসিডেন্ট চিকিৎসকরা। দিল্লিতে সফদরজং হাসপাতালের আন্দোলনরত চিকিৎসকদের উপর পুলিশি লাঠিচার্জ ও ধস্তাধস্তির অভিযোগ ওঠে। ঘটনার প্রতিবাদে দেশজুড়ে বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসকরাও বিক্ষোভ-ধরনায় বসেন।
গত চারদিন ধরে কলকাতার মেডিকেল কলেজগুলির পিজিটি, আবাসিক চিকিৎসকরাও অবস্থান বিক্ষোভ ও কর্মবিরতি শুরু করেছেন। বিসি রায় শিশু হাসপাতালেও সেই বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। এদিকে এই কর্মবিরতি যত দীর্ঘ হচ্ছে তত রোগী পরিষেবার উপর চাপের অভিযোগ আসছে।
ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে সমস্ত মেডিকেল কলেজের আবাসিক চিকিৎসকরা শুক্রবার চেস্ট ডিপার্টমেন্টের সেমিনার রুমে বৈঠকে বসেন। আগামিদিনে কী ভাবে এগোবেন তারই রূপরেখা তৈরিতে এই বৈঠক বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু রোগী পরিষেবায় ইতিমধ্যেই প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
বাসন্তী বৈদ্যের ছেলের কথায়, “মায়ের স্ট্রোক হয়েছে। আরজি কর থেকে এসেছিলাম। কিন্তু এখানে (এসএসকেএম) কোনও ডাক্তার নেই, বেড নেই। এখন আবার এমার্জেন্সিতে পাঠাল। বলছে অন্য কোথাও নিয়ে যান। বলছে, সব নাকি স্ট্রাইক করেছে কী কারণে! এরা কী রকম? আগে তো চিকিৎসা দেবে, তারপর তো এগুলো করবে। মানুষ তো আগে বাঁচবে, তার পর তো এসব!”
বাংলায় এসএসকেএমের পিজিটিরা কর্মবিরতি শুরু করেছেন। অবস্থান বিক্ষোভে বসেছেন। এক আন্দোলনকারী পড়ুয়া বলেন, “প্রায় দু’ বছর ধরে খেটে এত ভাল ফল করেছে যাঁরা, তাঁদের ভবিষ্যৎকে এভাবে অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দেওয়ার অধিকার কারও নেই। অথচ তা এক বছর ধরে অনিশ্চিত হয়ে আছে। এর জন্য শান্তিপূর্ণ মিছিল হওয়ার কথা ছিল নয়াদিল্লিতে। সেখানে মিছিলে পুলিশের যে বর্বরতা, যে নৃশংসতা তা মানা যায় না। আমরা অপরাধী নই। আমরা শুধু আমাদের ন্যায্য দাবিটাই চেয়েছি। যতটা সম্ভব তাড়াতাড়ি নিট-পিজিটির কাউন্সেলিংটা যাতে করা যায়, চিকিৎসক পড়ুয়াদের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করা যায়। এই দাবিগুলি মিটলে আমরাও সঙ্গে সঙ্গে আবার কাজে যোগ দেব।”
আরও পড়ুন: প্রেসিডেন্সি থেকে বন্দি ‘নিখোঁজ’কাণ্ডের তদন্তে কমিটি গড়ল কারা দফতর