কলকাতা: পাঁচ-ছ’ মাস অন্তর রাস্তায় পড়েছে পিচের প্রলেপ। সূত্রের খবর, গত ন’মাসে গোটা কলকাতায় পিচের প্রলেপ দিতে পুর কোষাগার থেকে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৭৫ লক্ষ টাকা। কিন্তু পিচের আস্তরণ এতটাই নিম্নমানের, সামান্য বৃষ্টিতেই শহরের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা থেকে সম্পূর্ণ ধুয়ে গিয়েছে তা। এবার কলকাতা পুলিশের তরফে কলকাতার মেয়রকে চিঠি দিয়ে জানানো হল, বেহাল রাস্তাগুলো যেন দ্রুত মেরামত করা হয়।
শহরের এক একটা রাস্তায় পা দিলে মনে হয় যেন নরকে পা পড়ছে। খানাখন্দে ভরা রাস্তায় পিচের প্রলেপ পড়তে না পড়তেই ভ্যানিশ। রাস্তা যেন দাঁত নখ বের করে বসে! বর্ষাকালে তাতে জল জমে মানুষের বিপদ বাড়ে। বেহালা থেকে বালিগঞ্জ, বাইপাস থেকে ব্রেসব্রিজ, দুর্ভোগের ছবিটা সর্বত্র এক।
পথচারিদের অভিযোগ, শহরের রাস্তায় পিচের প্রলেপ দিতে যদি ৭৫ লক্ষ টাকা খরচ হয়ে থাকে, তবে তো সে টাকা আসলে জলে দেওয়া হয়েছে। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, ম্যাস্টিক অ্যাসফল্ট নিষিদ্ধ হওয়ায় এভাবে তড়িঘড়ি কাজ করতে গিয়ে নিম্নমানের উপাদানের পিচের প্রলেপ দিয়ে দিচ্ছে পুরনিগম? পুর তথ্য বলছে, একটি একটি লরিতে ২০ থেকে ৩০ টন পিচ আসে। প্রতি টন পিছু গাড়িগুলি ভাড়া নেয় ৭,৫০০ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কনস্ট্রাকশন ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক পার্থপ্রতিম বিশ্বাসের কথায়, কলকাতার রাস্তার ক্ষেত্রে তো নির্মাণসামগ্রীর মানটাই সবথেকে বড় কথা। প্যাচের কাজের ক্ষেত্রে যে বিটুমিনাস মিশ্রণ ব্যবহার করা হয়, তা যদি হট মিক্স হয়, তার তাপমাত্রা একটা বড় ব্যাপার। তাতে গোলমাল মানেই সমস্যা হবে। আর কলকাতায় যেহেতু খুব তাড়াতাড়ি জল জমে যায়, রাস্তার নিচে জলস্তরও খুব কাছে থাকে, তাই জলসংক্রান্ত রাস্তার যে ক্ষতি সেটাও কলকাতার রাস্তা মেরামতের ক্ষেত্রে বড় সমস্যা।
কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের বক্তব্য, “সবসময়ই সচেতন থাকি আমরা। আমাদের ডিজি সবসময় নজর রাখছেন।” তবে খোঁচা দিতে ছাড়েননি কলকাতার বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষ। নিম্নমানের জিনিস দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। তাই এই দশা। ইতিমধ্যে কলকাতা পুলিশের তরফ মেয়রকে চিঠি দেওয়া হয়েছে বেহালের রাস্তাগুলি দ্রুত মেরামতের জন্য। শহরের রাস্তায় দুর্ঘটনা বাড়ছে এই বড় বড় গর্তের জন্য। পুলিশের চিঠিতে রীতিমতো অস্বস্তিতে কলকাতা পুরপ্রশাসন।