কলকাতা: বিজেপির অন্দরে বিরোধের সুর অব্যাহত। সম্প্রতি মতুয়া সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর (Shantanu Thakur) সুর চড়িয়ে বলেছেন, সমস্ত বিক্ষুব্ধ নেতাদের সঙ্গে তিনি বৈঠক করবেন। শুধু তাই নয়, ঠাকুরনগরে ঘন ঘন বিজেপি নেতাদের রুদ্ধদ্বার বৈঠকও বেশ নজর কেড়েছে। নজর কেড়েছে তাঁদের বিশেষ বনভোজন। পদ্ম শিবিরের এই পরিস্থিতি মুখ খুলেছেন দিলীপ ঘোষ। কিন্তু, কোনও মন্তব্য করতে নারাজ রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)।
শান্তনু ঠাকুরের মুহুর্মুহু ‘বিক্ষোভ’ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কার্যত উত্তর দিতে অস্বীকার করেন অধিকারী পুত্র। বলেন, “আমি এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করব না। শান্তনু আমার সহকর্মী। আমার ভাই। ওঁ সংখ্যালঘিষ্ঠদের সাংসদ, কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীও। ওঁ কী করবেন কী সিদ্ধান্ত নেবেন সে বিষয়ে আমি কোনও কথা বলব না।”
বস্তত, এর আগে শান্তনু ঠাকুর হোয়াটস্যাপ গ্রুপ ছাড়ার পরেই শুভেন্দুকে সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে কার্যত মেজাজ হারিয়েছিলেন তিনি। কোনওরকম প্রতিক্রিয়া না দিয়েই সাংবাদিকের প্রশ্নে খাপ্পা হয়ে বলেছিলেন, “আপনাকে কেন বলব! আপনি কি দলের লোক? এটা কী আপনার কাজ?” পরবর্তীতেও দলের অন্দরের বিক্ষোভ বা শান্তনুর বাড়িতে বিজেপি নেতাদের রুদ্ধদ্বার বৈঠক নিয়েও মুখ খোলেননি শুভেন্দু। ফের আরও একবার স্পষ্ট করে জানিয়ে দিলেন শুভেন্দু, শান্তনুর বিরুদ্ধে কোনও মন্তব্য করতে চাননা তিনি।
প্রশ্ন উঠছে, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা যিনি দলের তরফে সর্বদা ‘অনুগত’, সবর্ত্রই যাঁর জাজ্বল্যমান উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়, সেখানে কেন দলেরই নেতৃত্বের পদক্ষেপ করা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে নারাজ অধিকারী পুত্র? কানাঘুষো শোনা গিয়েছে, বঙ্গ বিজেপির প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি দলের প্রতি আনুগত্য ও বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন পাকাপাকি করতেই খুব সচেতন পদক্ষেপ করছেন অধিকারী পুত্র। বিজেপিতে যোগদানের পরেই তাঁর ‘সর্বময়তা’ অনেকেই সহজে গ্রহণ করতে পারেননি।
যোগদানের অবব্যহিত পরে শুভেন্দু জানিয়েছিলেন, দল যা ঠিক করবে তিনি তাই করবেন। তারপর ধাপে ধাপে ক্রমশ সামনের সারির নেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। জুট কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান থেকে নন্দীগ্রামের বিধায়ক, শেষে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। পাশাপাশি বিভিন্ন সভা-সমিতিতে সম্পূর্ণ নতুন অবতারে দেখা যায় শুভেন্দুকে। শোনা গিয়েছে, শুভেন্দুর যোগদান অনেকেই ভালভাবে মেনে নিতে পারেননি। পরবর্তীতে মুকুল রায়ের ‘ঘরওয়াপসির’ একটা বড় কারণ ছিল অধিকারী পুত্রের এই সর্বময়তা, এমনটাও শোনা যায়।
অন্যদিকে, শান্তনু ঠাকুর স্পষ্টই জানিয়েছেন, সমস্ত বিক্ষুব্ধ নেতাদের সঙ্গেই তিনি বৈঠক করবেন। শুধু তাই নয়, শান্তনু আরও জানিয়েছেন, একমাত্র প্রধানমন্ত্রী বোঝেন মতুয়াদের, বাকিরা বোঝেন না। বাম, তৃণমূল মতুয়াদের নাগরিকত্ব নিয়ে কিছুই করেনি বলে দাবি করেন তিনি। এও বলেন, বেসুরোর সংখ্যা বেশি হলে সেটাই সুর। সময়মতো বোমা ফাটাবেন তিনি।
যদিও, বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের এ নিয়ে বক্তব্য, “সময়ে তো বদল আনতেই হবে। সেই মতোই কমিটিতে কিছু হেরফের করা হয়েছে। তাও কোভিডের জন্য আমরা পিছিয়ে গিয়েছি। এর মধ্যে কোনও বার্তা দেওয়ার কিছু নেই। যা হওয়ার তাই হচ্ছে। রাজনীতিতে অনুগামী বলে কিছু হয় না। আগে দিলীপ ঘোষ সভাপতি ছিলেন। তখন আমরা সবাই তাঁর অনুগামী ছিলাম। এখন আমি সভাপতি। সবাই বিজেপির অনুগামী। পতাকার অনুগামী। কিছু করার নেই। মেনে নিতে হবে এটা।”
বস্তুত, রাজ্য বিজেপির সাংগঠনিক পরিকাঠামো নিয়ে প্রশ্ন উঠছেই। কেন বারবার দলের অন্দরের ক্ষোভ এভাবে বাইরে আসছে তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। সমন্বয়ের অভাব না ব্যক্তিগত সংঘাত, নাকি কেবলই পদপ্রাপ্তি না ঘটা, কোথায় গলদ? প্রশ্ন তুলছেন সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ।
আরও পড়ুন: Ritesh Tiwari’s tweet: ‘ভার্চুয়াল চক্রবর্তী ও টুইট মালব্যর বঙ্গ বিজেপি অসাধারণ!’