কলকাতা : হাঁসখালি কাণ্ডের পর সরকারি অনুষ্ঠান মঞ্চে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রীর করা বিভিন্ন মন্তব্য ঘিরে সমালোচনার ঝড় উঠেছে বিভিন্ন মহলে। এবার শেষমেশ ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামল তৃণমূল। কিন্তু সেই কাজ করতে গিয়েও ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলা হল, ৯৩ শতাংশ ধর্ষণের ঘটনাই পারিবারিক ঘটনা। তৃণমূল মুখপাত্রের এই মন্তব্য নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিল বলেই মত রাজনৈতিক মহলের। সাংবাদিক বৈঠক করে বুধবার সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, “ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী ২০১৭ সালে যে ৩৪ হাজার যৌন হেনস্থার ঘটনা ঘটেছে, তার মধ্যে ৯৩ শতাংশ ঘটেছে পরিবারের অভ্যন্তরে। এমন ঘটনা ঘটেছে পরিবারের মধ্যে, কিংবা আত্মীয় স্বজনদের মাধ্যমে কিংবা বন্ধুবান্ধবদের মাধ্যমে। সুতরাং এই বিষয়টি মাথায় রেখে সবারই প্রতিবাদ ও সমালোচনা করা উচিত।”
কিন্তু কেন হঠাৎ এই ধরনের মন্তব্য করলেন সুখেন্দু শেখর রায়? সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় হাঁসখালির ঘটনায় প্রশ্ন তুলেছিলেন, “আপনি রেপড বলবেন? নাকি প্রেগন্যান্ট বলবেন? না লাভ অ্যাফেয়ার্স বলবেন? ” আর এই নিয়ে প্রকাশ্যে কেউ মুখ না খুললেও, তৃণমূলের একাংশের মধ্য়েও নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া উঠে এসেছিল। যদিও তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই মন্তব্য ঘিরে প্রকাশ্যে কেউ মুখ খোলেননি, কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর এ হেন মন্তব্যে অস্বস্তিতে পড়েছিলেন তৃণমূলেরই একাংশ। ফিরহাদ হাকিম যেমন মঙ্গলবার বলেছিলেন, “এ রাজ্যে সম্প্রতি যে খুন ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে তা অনভিপ্রেত ও বেদনাদায়ক। আমি নিজে তিন কন্যা সন্তানের পিতা।”
এদিকে সুখেন্দু শেখর রায় বুধবার সাংবাদিক বৈঠকে মূলত দুটি কথা উল্লেখ করেছেন। প্রথমত, এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন এবং দোষীদের শাস্তির দাবি করেছেন। অর্থাৎ, দলের তরফে এই কথা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। কিন্তু এর পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে মন্তব্য করেছিলেন সরকারি মঞ্চ থেকে, সেই মন্তব্যের একটি ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করতে দেখা গেল সুখেন্দু শেখরকে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, ৯৩ শতাংশ ঘটনা পারিবারিক জায়গা থেকে হয় বা পরিচিত কেউ জড়িত থেকে, এই কথা বলে কার্যত মুখ্যমন্ত্রীর কথাকেই ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেন তিনি। অর্থাৎ, অভিযুক্ত যে নির্যাতিতার পরিচিত, সেই কথাটাই বলতে চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এই ব্যাখ্যা করার একটি প্রচ্ছন্ন চেষ্টা দেখা গিয়েছে সুখেন্দু শেখরের এনসিআরবি রিপোর্টের উল্লেখের মধ্যে দিয়ে। অন্তত এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
সুখেন্দু শেখরের এই মন্তব্য প্রসঙ্গে বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা জানিয়েছেন, “অদ্ভুত লাগছে। এই সময় অসহায়ের পাশে দাঁড়ানো উচিত। পরিবারের থেকে হোক, বাইরের থেকে হোক , মূল কথা নির্যাতন বন্ধ হওয়া দরকার। কিন্তু সুন্দর পারিবারিক পরিসংখ্যান দিয়ে যে ধর্ষণ হচ্ছে, তাতে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী একভাবে স্বীকৃতি দিয়েছেন, তাঁর চেলা চামুন্ডারা আর একভাবে স্বীকৃতি দিচ্ছে।”
আরও পড়ুন : Dhankhar writes to Mamata: আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে উদ্বিগ্ন রাজ্যপাল, আজই আলোচনা চান মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে