কলকাতা : পাঠ্যক্রমের একেবারে শুরুতেই জোড়াসাঁকো নামটির সঙ্গে পরিচিত হয়ে যায় বাঙালি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মস্থান শুধু নয়, নবজাগরণের ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে রয়েছে কলকাতায় ঠাকুর পরিবারের সেই আদিবাড়ি। তাই বাঙালির আবেগের নাম জোড়াসাঁকো। পরবর্তীতে হেরিটেজ তকমা পায় জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি। কিন্তু সেই বাড়িতেও রাজনীতির প্রবেশ!
বর্তমানে জোড়াসাঁকোর একটা অংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যবহার করা হয়। রয়েছে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। রবীন্দ্রনাথের জন্মজয়ন্তী সহ বিশেষ বিশেষ দিনগুলিতে বহু বিশিষ্ট মানুষের সমাগম হয় সেখানে। ঐতিহ্যবাহী সেই ভবনের একাংশেই তৈরি হয়েছিল তৃণমূলের অফিস। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে সেই অফিসের হোর্ডিং খোলা হলেও, নেতা-কর্মীদের আনাগোনা পুরোপুরি বন্ধ হয়েছে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
সম্প্রতি একটি জনস্বার্থ মামলার ভিত্তিতে কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, হেরিটেজ বিল্ডিং থেকে অবিলম্বে সেই অফিস সরাতে হবে। মঙ্গলবার জোড়াসাঁকোয় গিয়ে দেখা গেল, ‘তৃণমূল শিক্ষাবন্ধু সমিতি’র নামে যে অফিস খোলা হয়েছিল, তার সামনে থেকে হোর্ডিং খুলে নেওয়া হয়েছে। তবে যেভাবে ভবনের ওই অংশের রং বদলে অফিস তৈরি করা হয়েছিল, তা দেখে বিস্ময় প্রকাশ করছেন অনেকেই।
হেরিটেজ ভবনের রং বদলানো তো দূরের কথা, একটা ইটও সরাতে গেলে অনুমতি নিতে হয়। ভবনের পুরো অংশের রং লাল। আর ওই অংশের দেওয়ালে লাগানো হয়েছে হলুদ রং। রং করা হয়েছে, জানালা, দরজাও। প্রশ্ন উঠছে, ঐতিহ্যবাহী এই ভবনে অফিস তৈরি করা কি খুব প্রয়োজন ছিল?
এ বিষয়ে রবীন্দ্রভারতীর উপাচার্য সব্যসচী বসু রায় চৌধুরী বলেন, ‘এটা হাইকোর্টের বিচারাধীন বিষয়। তাই এ ব্যাপারে কিছু বলার নেই। আইন আইনের পথে চলবে।’ তবে এভাবে বাঙালির আবেগ জড়িয়ে থাকা ভবনে রাজনৈতিক কার্যকলাপে ক্ষুব্ধ বিরোধীরা। বাম নেতা সুজন চক্রবর্তীর দাবি, এভাবে তৃণমূল সব ঐতিহ্য শেষ করে দিচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘নবান্নের প্রশ্রয়ে এসব চলছে। মানুষ এসবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছে বলে, তৃণমূল ভয় পাচ্ছে।’ তবে তৃণমূলের তরফে এ বিষয়ে তেমন কোনও জোরাল যুক্তি পাওয়া যায়নি। দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, ‘জোড়াসাঁকো নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না। বিষয়টা আমার জানা নেই।’
দুটো ঘর ভেঙে ওই অফিস তৈরি করা হয়েছিল। মঙ্গলবার গুরু নানকের জন্মদিন উপলক্ষ্যে ছুটি ছিল বিশ্ববিদ্যালয়। তারপরও TV9-এর প্রতিনিধি সেখানে গিয়ে দেখেন, অফিসের ভিতরে বেশ কয়েকজন রয়েছে। প্রশ্ন করায়, তাঁরা জানান, তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী। ছুটির দিনে কী করছিলেন তাঁরা? সেই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি।
স্বদেশ মজুমদার নামে জনৈক এক ব্যক্তি একটি মামলা দায়ের করেন। তাঁর আইনজীবী শ্রীজীব চক্রবর্তী অভিযোগ করেন, হেরিটেজ ভবন ভেঙে সেখানে নতুন নির্মাণ হয়েছে। তৃণমূলের শিক্ষাবন্ধু সমিতি নামে সংগঠনের অফিস করা হয়েছে। ঘরের দেওয়ালে রাজনৈতিক নেতাদের ছবি ঝুলছে বলে অভিযোগ করেন মামলাকারী। হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের ডিভিশন বেঞ্চ অবিলম্বে অফিস সরানোর নির্দেশ দেন।