কলকাতা: প্রয়াত বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব শাঁওলি মিত্র। বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। তাঁর অন্ত্যেষ্টির পর জানানো হয় মৃত্য সংবাদ। শাঁওলি মিত্রের প্রয়াণের খবরে শোকস্তব্ধ বাংলা নাট্য জগৎ। বাক্যহারা তাঁর অগণিত গুণমুগ্ধ। রবিবার বিকেল ৩টে ৪০ মিনিটে প্রয়াত হন তিনি। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর। সিরিটি শ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় এদিন রাতেই। শাঁওলি মিত্র একটি ইচ্ছাপত্র তৈরি করেছিলেন। সেখানেই তিনি জানিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁর মৃত্যুর খবর শেষকৃত্যের পর যেন সকলকে জানানো হয়। সেই ইচ্ছাকে মর্যাদা দিয়েছেন তাঁর প্রিয়জনেরা।
শাঁওলি মিত্র প্রখ্যাত নাট্য ব্যক্তিত্ব শম্ভু মিত্র ও তৃপ্তি মিত্রের কন্যা। শম্ভু মিত্রও একই ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। তিনিও চেয়েছিলেন, মৃত্যুর পর যত দ্রুত সম্ভব তাঁর শেষকৃত্য যেন সম্পন্ন হয়। অন্ত্যেষ্টির পর যেন সকলকে তাঁর মৃত্যু সংবাদ জানানো হয়। একই ইচ্ছা প্রকাশ করেন শাঁওলি মিত্রও।
ইচ্ছাপত্রে শাঁওলি মিত্র লিখে গিয়েছিলেন, তাঁর মৃত্যুর পর মানস কন্যা অর্পিতা ঘোষ ও পুত্রতূ্ল্য সায়ক চক্রবর্তী শেষকৃত্যের সমস্ত ব্যবস্থা করবেন। একইসঙ্গে তিনি চেয়েছিলেন, তাঁর মৃত্যুর পর কোনও ফুলভার যেন তাঁকে বইতে না হয়। সকলের অগোচরে যেন অন্ত্যেষ্টি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। সেই ইচ্ছাকেই সম্মান জানান তাঁর স্বজনেরা।
ঋত্বিক ঘটকের ‘যুক্তি তক্ক আর গপ্পো’-এর বঙ্গবালা চরিত্রে অভিনয় এখনও তাঁর গুণমুগ্ধদের মুখে মুখে ফেরে। ‘নাথবতী অনাথবৎ’ শাঁওলি বাংলা থিয়েটারের একজন একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন। অনন্য অভিনয় তাঁকে সম্মানিত করেছিল পদ্মশ্রী (২০০৯), বঙ্গ বিভূষণ (২০১২), সঙ্গীত নাটক একাডেমি পুরস্কারে (২০০৩)।
প্রখ্যাত নাট্য ব্যক্তিত্ব বিভাস চক্রবর্তী বলেন, “আমি তো ভাবতেই পারছি না শাঁওলি নেই। কোনও আভাসও পাইনি যে শাঁওলি অসুস্থ। শাঁওলির সঙ্গে তো আজকের পরিচয় নয়। আমি যখন বহুরূপীতে ছিলাম কিছুদিনের জন্য, সেই সময় শাঁওলিকে বাচ্চা দেখেছিলাম। কী উৎসাহী, ছুটে বেড়াচ্ছে। ও অসম্ভব গুণী মেয়ে। একসঙ্গে টেলিভিশনে ট্রেনিংয়ে ছিলাম। পরে ও অসুস্থ হয়ে পড়ায় ফিরে এল। পরে আর টেলিভিশনে থাকেনি। আমরা ছিলাম। শাঁওলির সঙ্গে নাটক, থিয়েটারে যুক্ত থেকেছি। আমি ভাবতেই পারছি না ও নেই। কী হয়েছিল তাও জানি না। আমি যে কী প্রতিক্রিয়া দেব জানি না।”
আরেক নাট্য ব্যক্তিত্ব দেবেশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমি শেষ মুহূর্তে শাঁওলিদিকে ছুঁতে পেরেছি এটাই আমার সব থেকে বড় পাওয়া। অনেক স্মৃতি। আলাদা করে কিছু বলার মতো অবস্থায় আমি নেই। এটুকু বলতে পারি আমার একজন অভিভাবককে হারালাম। যখনই যা কিছু লিখেছি, পড়েছি, করেছি একবার ফোন করতাম শাঁওলিদি এটা কেমন লাগল। বলার লোকটা চলে গেল আর কী!”