Lesbian-Gay Parenting: ‘সমকামী-রূপান্তরকামীদের মা-বাবা হয়ে ওঠাটা চ্যালেঞ্জের’, প্রাইড মান্থ-এ ছেলেমেয়েকে বুঝতে অভিভাবকদের জন্য পরামর্শ

Pride Month 2022 Exclusive: বিশ্ব জুড়ে জুন মাসে যতই ‘প্রাইড মান্থ’ পালিত হোক, বাস্তবে রামধনু ছোঁয়া অনেকাংশেই থাকে না সন্তান ও মা-বাবার সম্পর্কে।

Lesbian-Gay Parenting: ‘সমকামী-রূপান্তরকামীদের মা-বাবা হয়ে ওঠাটা চ্যালেঞ্জের’, প্রাইড মান্থ-এ ছেলেমেয়েকে বুঝতে অভিভাবকদের জন্য পরামর্শ
Follow Us:
| Updated on: Jun 28, 2022 | 7:14 PM

মেঘা মণ্ডল

ছেলেমেয়ে মানুষ করে তোলা সহজ কাজ নয়। প্রতি পদে-পদে নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয় মা-বাবাদের। আর এখানেই দ্বিগুণ দায়িত্ব পালন করতে হয় এলজিবিটিকিউআই+ (লেসবিয়ান, গে, বাইসেক্সুয়াল, ট্রান্সজেন্ডার, ক্য়ুয়ের, ইনার-সেক্স) সম্প্রদায়ভুক্ত সন্তানের অভিভাবকদের। যে যাত্রার শুরুটা বাড়ি থেকে হওয়া উচিত, অনেকক্ষেত্রেই সেখানে পরিবারের সহায়তা পায় না বহু মানুষ। আজও সন্তানরা মুখিয়ে থাকে মা-বাবার ‘সাপোর্ট’ পাওয়ার জন্য। আবার অনেক ক্ষেত্রে মা-বাবারাই হয়ে ওঠেন সন্তানের পরম বন্ধু। সব মিলিয়ে কীভাবে তথাকথিত সমাজের চোখে অধিকাংশক্ষেত্রে ‘অস্বাভাবিক’ এই সন্তানদের মনকে বুঝতে হবে—এই নিয়ে দ্ব‌ন্ধে থাকেন অধিকাংশ অভিভাবকই। বিশেষত সন্তানের ‘কামিং-আউট’-এর সময় এই দ্বন্দ্ব আরও জটিল আকার ধারণ করে।

চলছে রামধনু মাস। বিশ্বজুড়ে মানুষ গর্বের সঙ্গে পালন করছে নিজের লিঙ্গের অধিকার, ভালবাসার অধিকার। কিন্তু এই জায়গায় পৌঁছনো একদিনে সম্ভব হয়নি। দীর্ঘ দিনের লড়াই শেষে জুন মাস আজ ‘প্রাইড মান্থ’ হিসেবে পালিত হচ্ছে। কিন্তু বিশ্ব জুড়ে জুন মাসে যতই ‘প্রাইড মান্থ’ পালিত হোক, বাস্তবে রামধনু ছোঁয়া অনেকাংশেই থাকে না সন্তান ও মা-বাবার সম্পর্কে। এলজিবিটিকিউআই সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষকে ‘আত্মপ্রকাশ’ করতে গেলে বিভিন্ন কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। এলজিবিটিকিউআই সন্তানদের ‘পেরেন্টিং’ কীভাবে করা উচিত, এই নিয়ে TV9 বাংলার সঙ্গে কথা বললেন মানবাধিকার তথা যৌন-অধিকার কর্মী বাপ্পাদিত্য মুখোপাধ্যায়।

lgbtq

‘অ্যাক্সেপট্যান্স’ বা গ্রহণযোগ্যতা—সন্তান যখন প্রথম ‘কামিং আউট’-এর কথা বলে, তখন—সবার প্রথমে—মা-বাবার করণীয়টা কী?

সেই অর্থে করণীয় বলে কিছু থাকে না। এক্ষেত্রে প্রথম কাজটাই হল ছেলেমেয়েকে ‘গ্রহণ’ করা। এটা বুঝতে হবে, তার যে সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন-ই থাকুক না কেন, যেটাই জেন্ডার হোক না কেন, সে আমার সন্তানই থাকবে। এই বিষয়টা না বুঝলে জটিলতা বাড়ে এবং পরবর্তী সময়ে কেউ আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়, কেউ বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। একটা সময়ের পর সব বাবা-মায়েরই আফসোস হয়। তা-ই প্রথমেই এই বিষয়টিকে বুঝতে হবে এবং প্রয়োজনে সাইকোজলিস্টের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। কাউন্সেলিং করাতে হবে। এখন প্রায় সব সাইকোজলিস্টই এই বিষয়ে সচেতন, তাঁরা সঠিক পথ দেখাবেন। এছাড়াও প্রচুর সাপোর্ট গ্রুপ রয়েছে, প্রয়োজনে তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। পরিস্থিতি সামলাতে একান্ত যদি নিজে না পারেন, তাহলে অবশ্যই সাহায্য নেওয়া দরকার।

lgbtq

অনেকের ক্ষেত্রেই এই ‘কামিং আউট’-এর ঘটনার আগেও যেটা হয়, তা হল: সন্তানের বেশ কিছু আচরণে মা-বাবার প্রশ্ন জাগে। সন্তানের দৃষ্টিভঙ্গী থেকে সেই আচরণগুলো অত্যন্ত সাধারণ বলে বিবেচিত হলেও সমাজের চোখে যেহেতু ওই জাতীয় আচরণ দুর্ভাগ্যবশত ‘অস্বাভাবিক’, সেহেতু মা-বাবা অথবা পরিবারের অনেকে তখন অন্য চোখে দেখা শুরু করেন সন্তানকে… প্রশ্ন করেন। সেক্ষেত্রে তাঁদের কতটা সংবেদনশীল অথবা কতটা ‘ফ্লেক্সিবল’ হওয়া উচিত?

এটা শুধু যৌনতা বা জেন্ডারের বিষয় নয়। ধরুন তাঁর সন্তান কম বয়সে কোনও বিষয়ের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ল, খুব বেশি মোবাইল ঘাঁটছে ইত্যাদি। এখানে কখনওই বকে, ধমকে, শাসন করে বিষয়টা নিয়ন্ত্রণ করা উচিত নয়। এই চিরাচরিত মননের বাইরে গিয়ে সন্তানের সঙ্গে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। যখন প্রসঙ্গ আসবে সন্তানের সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন নিয়ে, সেখানেও এই একই কাজ করতে হবে মা-বাবাদের। কারণ জেন্ডার এখানে একটা লক্ষণীয় বিষয়।

lgbtq

আমাদের দেশে পেরেন্টিং বিষয়টা সামগ্রিকভাবে খুব দুর্বল। বায়োলজিক্যালি মা-বাবা হয়ে উঠলেও যোগ্যতার মধ্যে দিয়ে কতজন ‘বাবা-মা’ হয়ে উঠতে পারেন, এটা নিয়ে এখনও প্রশ্ন রয়ে গিয়েছে। সেখানে রূপান্তরকামীদের মা-বাবা হয়ে ওঠা আরও চ্যালেঞ্জের বিষয়। আমাদের দেশে এই নিয়ে কোনও বই নেই। কিন্তু এমন অনেক দেশ রয়েছে যেখানে ট্রান্সজেন্ডার পেরেন্টিং নিয়ে চর্চা হয়েছে। সেখানে এটারই উল্লেখ রয়েছে যে, যদি কোনও ছেলে কম বয়স থেকে নিজেকে মেয়ে বলে দাবি করে, সেখানে মা-বাবা যেন তাকে জোর করে বদলে না ফেলেন। যদি সন্তানের মধ্যে কোনও আচরণ লক্ষ্য করা যায়, তাহলে তাকে তেমনই থাকতে দেওয়া উচিত। যখনই এগুলো পাল্টে ফেলার চেষ্টা করা হয়, তখনই বিপত্তিটা ঘটে। সুতরাং এখানে কীভাবে সন্তানকে বড় করে তুলবেন, এটা একটা বড় বিষয়। তা-ই মা-বাবাকে এই বিষয়গুলো সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে।

সন্তানের কথা শোনার ক্ষেত্রে বা আরও নির্দিষ্টভাবে বললে সন্তানের অভ্য়ন্তরীণ দ্বন্দ্বের কথা জানার পর মা-বাবাকে কতটা ভাল শ্রোতা হয়ে উঠতে হয়?

এটা শুধু এই ক্ষেত্রে নয়। এটা সবসময় করতে হবে এবং এটা শুধু মা-বাবা সন্তানের সম্পর্কের ক্ষেত্রে নয়, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক, বন্ধুত্বের সম্পর্ক… সর্বক্ষেত্রেই ভাল শ্রোতা হওয়াটা খুব জরুরি। মা-বাবা সন্তানের সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে জরুরি কারণ সন্তান নতুন কোনও অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হচ্ছে, সেটা যদি সে তার মা-বাবার সঙ্গে ভাগ করে নিতে চায়, সেখানে ভাল শ্রোতা হওয়াটা ভীষণভাবে দরকার। এর কারণ হল সন্তানের সবচেয়ে সুরক্ষিত জায়গা হল তার মা-বাবা। কাজেই মা-বাবার শ্রোতা হওয়া আব্যশিক এবং সেই অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ করতে হবে।

lgbtq

‘এই সমস্যাটা কেটে যাবে’, ‘ডাক্তার দেখা’, ধর্মের প্রসঙ্গ টেনে কোনও তথাকথিত পরামর্শ দেওয়াটা… এই ধরনের কথাগুলো কতটা অযৌক্তিক এবং অ-সংবেদনশীল?

পুরোটাই অযৌক্তিক। বিজ্ঞান কিন্তু এগুলোকে ‘সমস্যা’ বলে গণ্য করে না। আমাদের দেশে এখন ট্রান্সজেন্ডার প্রোটেকশন আইন রয়েছে। বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া, আঘাত করার মতো যে কোনও বেআইনি কাজের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। এমনকী কোনও চিকিৎসক যদি এই ধরনের ঘটনাকে ‘রোগ’ হিসেবে চিহ্নিত করে তাহলে তার রেজিস্ট্রেশন বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সুতরাং এই ধরনের কথাবার্তা পুরোপুরিভাবে অর্থহীন।

অলঙ্করণ: অভিজিৎ বিশ্বাস